এমন অনেক প্রাণী বাড়িতে বাস করে, যাদের উপস্থিতি জ্যোতিষশাস্ত্রে শুভ ও অশুভ বলে বিবেচিত হয়। এর মধ্যে একটি ঘটনা হল একটি বাড়িতে বিড়াল প্রসব করা। আসলে, কুকুরকে মানুষের সবচেয়ে অনুগত প্রাণী হিসাবে বিবেচনা করা হয়, তবে বিড়াল সম্পর্কে শাস্ত্রে অনেক ধরণের বিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। প্রায়শই বড়দের কাছ থেকে শোনা যায় যে বিড়াল ভবিষ্যতের ঘটনাগুলির পূর্বাভাস দিতে পারে।বিড়াল পালন সম্পর্কে মানুষের উভয় ধরণের মতামত রয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে একটি বিড়াল পালন শুভ, আবার কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে একটি বিড়াল ঘরে নেতিবাচকতা এবং অশুভ লক্ষণ নিয়ে আসে।বিড়াল বাড়িতে এলে ঠিক আছে, কিন্তু ঘরে সন্তান জন্ম নিলে তার অর্থ কী হতে পারে? বিড়াল পোষা কি শুভ নাকি অশুভ? কোন রঙের বিড়াল কি নির্দেশ করে? উন্নাওয়ের জ্যোতিষী পন্ডিত ঋষিকান্ত মিশ্র শাস্ত্রী এই বিষয়ে তথ্য দিচ্ছেন৷জ্যোতিষী ঋষিকান্ত মিশ্র ব্যাখ্যা করেছেন যে বাড়িতে একটি বিড়াল রাখা অশুভ, কারণ বিড়াল যেখানে বাস করে সেখানে নেতিবাচক শক্তি এবং শক্তি সক্রিয় হয়। এছাড়া বাড়িতে বিড়াল থাকার কারণে রাহু সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই কারণে মানুষকে নানা সমস্যাতেও পড়তে হতে পারে।ঘরে সোনালি রঙের বিড়াল রাখা খুবই শুভ বলে মনে করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, এই ধরনের বিড়াল আপনার জন্য সৌভাগ্য নিয়ে আসে। এছাড়াও, বাড়িতে সোনালি বিড়ালের আগমনের সঙ্গে, সম্পদের অন্যান্য পথও খুলতে পারে। শুধু তাই নয়, আপনার মুলতুবি কাজ সফল হবে এবং আটকে থাকা টাকাও উদ্ধার করা যাবে।বিশ্বাস অনুসারে, যদি একটি কালো বিড়াল হঠাৎ আপনার বাড়িতে আসে এবং কাঁদতে শুরু করে, তবে এটি শুভ লক্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয় না। একটি বিড়াল এটি করছে একটি অপ্রীতিকর ঘটনা বা খারাপ খবর একটি চিহ্ন হিসাবে বিবেচিত হয়।আপনার বাড়িতে যদি কোনও বিড়াল বাচ্চার জন্ম দেয়, তবে তা বাড়ির প্রধানের জন্য খুব শুভ বলে মনে করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে ৯০ দিনের মধ্যে পরিবারের সদস্যরা উন্নতি করতে পারে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করতে পারে।বাড়িতে বিড়ালছানা জন্মের কারণে, এমনকি নেতিবাচক শক্তিও ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। তাই বাড়িতে বিড়াল বাচ্চা প্রসব করলে তাকে বাইরে বের করে না দেওয়াই ভাল।
যা কিছু অশুভ, ভৌতিক, তার সঙ্গেই কালো বিড়াল জড়িয়ে আছে! বাড়ির আশপাশে কালো বিড়াল দেখলেই বুক দুরুদুরু করে! ভূতের সিনেমা বা গল্পেও প্রেতাত্মা, অশুভ আত্মা বা ডাইনির ভূমিকায় কালো বিড়ালের দেখা মেলে! সেই কোন যুগ থেকে কালো বিড়ালকে অশুভ মানা হয়! এমনকী কালো বিড়াল রাস্তা পাড় হলে গাড়ি থামিয়ে দেন চালক! পথচলতি মানুষও খানিক্ষণ অপেক্ষা করে রাস্তা পার হন! জানেন কি, কেন কালো বিড়ালকে অশুভ মানা হয়?জানা যায়,৩০০০ খ্রিস্ট পূর্বাব্দে মিশরীয়রা বিশ্বাস করত, কালো বিড়ালের মধ্যে কিছু আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে। তারা কালো বিড়ালকে পুজোও করত। কালো বিড়ালকে আঘাত করা বা তাকে মেরে ফেলাকে অশুভ মানত ইজিপ্সিয়ানরা। ইংল্যান্ডের কিছু অংশে জাহাজে কালো বিড়ালকে শুভ মানা হয়। যদি জাহাজে কোন-ও কালো বিড়াল উঠে আসে, তার অর্থ মনে করা হত, বিড়ালটি সঙ্গে করে ভাল ভাগ্য নিয়ে আসছে। পাশাপাশি বিশ্বাস করা হত, যাত্রাপথে বিড়ালটিই যাত্রীদের সবরকম বিপদ থেকে বাঁচাবে।জাপানে কালো বিড়াল অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়। কালো বিড়াল মানেই শুভ বিবাহ, ভাল ফসল এমনকি যাত্রাপালায় বিশাল সাফল্য।১৫৬০ সালে ইউরোপের বিভিন্ন উপকথায় কালো বিড়ালকে অশুভ হিসাবে দেখানোর চল শুরু হয়। ধীরে ধীরে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মায়, সত্যিই হয়তো কালো বিড়ালের মধ্যে লুকনো অপয়া কোনও শক্তি আছে।কালো বিড়াল রাস্তা কাটলে গাড়ির চালক একটুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর যান! বিড়াল রাস্তার পাড় করে চলে গেলে পথচলতি মানুষও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে যান! এই প্রথা চলে আসছে সেই কোন যুগ থেকে! এর পিছনেও রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ! আগে কার দিনে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল আর গরুদের সামনে দিয়ে বিড়াল গেলেই তারা অস্থির হয়ে পড়ত৷ গরুদের শান্ত করতে চালককে কিছুক্ষণের জন্য গাড়ি থামিয়ে দিতে হত। সেই রেওয়াজই নাকি পরবর্তীকালে কুসংস্কারে পরিণত হয় এবং সেই থেকেই নাকি যে-কোনও গাড়ির সামনে দিয়ে কালো বিড়াল গেলেই, গাড়ি থামিয়ে দেওয়ার রীতি শুরু হয়।রয়েছে আরও কারণ! বিড়াল জাতীয় ছোট প্রাণীদের সাধারণত অন্য বড় প্রাণী বা মানুষ তাড়া করে। এর ফলে তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছোটাছুটি করে ৷ তাই বিড়াল রাস্তা পার করার পর একটু দাঁড়িয়ে গেলে ওই প্রাণী বা মানুষের সঙ্গে ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা কমে যায়৷ সেখান থেকেই শুরু হয় বিড়াল রাস্তা পাড় করলে দাঁড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা।জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে রাহুকে অশুভ গ্রহ মানা হয়। রাহুর প্রভাবে জীবনে দুর্ঘটনার যোগ আসতে পারে। বৈদিক জ্যোতিষ অনুসারে বিড়ালরাহুল বাহন। এই কারণেই বিড়াল পথ কাটলে তা অশুভ বলে মনে করা হয়। কারণ বিড়াল পথ কাটছে মানে সেখানে রাহুর প্রভাব রয়েছে।তবে, কালো বিড়ালকে অশুভ মনে করা সম্পূর্ণই কুসংস্কার! বিড়ালের কালো রং-এর সঙ্গে তার পয়া বা অপয়া হওয়ার কোনও কারণ নেই!
কালো বিড়াল দেখলেই অনেকেই ভয়ে আঁতকে ওঠেন। সাধারণত মানুষ এটা পছন্দ করে না বা দেখলেও ভয় পায়। বিড়ালকে অনেকে পোষা প্রাণী মনে করলেও অন্যান্য বিড়ালের তুলনায় কালো বিড়াল খুব একটা কেউ পোষেন না৷ তবে কালো বিড়াল সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য রয়েছে যেগুলো সত্যিই বেশ অবাক করার মতো। জানলে আপনিও চমকে যাবেন৷সাধারণত খুব কম লোকই আছেন কালো বিড়াল পছন্দ করেন, কিন্তু নাবিকদের ক্ষেত্রে তা ছিল না। বিড়ালদের ইঁদুর শিকারের জন্য ব্রিটিশ জাহাজে চড়ার বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। নাবিকরাও কালো বিড়ালটিকে বিশেষভাবে ভাগ্যবান এবং নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের রক্ষক হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন।কালো বিড়ালের রঙের কারণ জেনেটিক। কালো পশমের জিন তিন ধরনের, কঠিন কালো, বাদামী এবং দারুচিনি। রংটি প্যাটার্নের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করে। প্রবল সূর্যালোকের এক্সপোজারের ফলে বিড়ালের চুলে থাকা ইউমেলানিন পিগমেন্ট ভেঙ্গে যেতে পারে, যার ফলে হারানো ডোরা আগের মতো দেখা যায়। এর আরেকটি কারণ হতে পারে পুষ্টির অভাব। আগে এই বিড়ালের পুরনো রং ছিল গাঢ় বাদামি।কালো বিড়াল অন্যান্য বিড়ালদের তুলনায় স্বাস্থ্যকর হতে পারে। এর একটি নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে যে জিনটি একটি বিড়ালের চুল কালো করে দেয় সেই জিনটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত।কিছু বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন যে এই বিড়ালগুলির রং লুকানোর সঙ্গে কম এবং রোগ প্রতিরোধের সঙ্গে আরও বেশি সম্পর্ক রয়েছে। তারা আশা করছেন যে আরও বেশি বিড়ালের জিনোম ম্যাপিং এইচআইভি চিকিৎসায় সাহায্য করবে।জাপানের হিমেজিতে নেকোবিওকাতে কালো বিড়ালদের দিয়ে স্বাগত জানানো হয়৷ এই ক্যাফের কালো বিড়াল তাদের পোষা৷ এই বিড়ালরা যাতে একে অপরের সঙ্গে মিশে না যায়, তাই বিভিন্ন রঙের ফিতে পরানো হয়।
রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কোনও বিড়াল আপনার সামনে পড়ে গেলে তা অশুভ বলে মনে করা হয়। তারপর, সমাধান হিসাবে, অনেকে তিন ধাপ পিছিয়ে এবং তারপরে এগিয়ে গিয়ে অশুভ যোগ কাটায়। কিন্তু আসলে এটা অশুভ নয় বরং শুভ। রাস্তায় বিড়াল শুয়ে থাকার উপকারিতা বেশির ভাগ মানুষই জানেন না।পশু-পাখিকে কোনও না কোনও দেবতা বা গ্রহের সঙ্গে মিলিয়ে পুজো করা হয়। একই সময়ে, এই প্রাণী এবং পাখির চেহারা বা তাদের অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত লক্ষণগুলি ভবিষ্যতের ঘটনাগুলির ইঙ্গিত দেয় বলেও বলা হয়।এরকম একটি প্রাণী হল বিড়াল, যার সঙ্গে যুক্ত অনেক বিশ্বাস রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি বিড়াল আপনার সামনে রাস্তা পার হলে তা অশুভ বলে মনে করা হয়।কিন্তু সত্যিই কি তাই? জ্যোতিষী এবং বাস্তু বিশেষজ্ঞ মৃগেন্দ্র চৌধরী বিড়ালের সঙ্গে সম্পর্কিত শুভ ও অশুভ লক্ষণ সম্পর্কে তথ্য দিয়েছেন। তাঁর কাছ থেকেই জেনে নেওয়া যাক।যদি জ্যোতিষশাস্ত্রের কথা বলি, বিড়ালকে রাহু গ্রহের সঙ্গে যুক্ত মনে করা হয়। বিড়ালের সঙ্গে জড়িত অশুভ কী কী হয়?ধরা যাক, আপনি কোনও কাজে বাইরে যাচ্ছেন, আপনার সামনের বিড়ালটি আপনার বাঁ দিক থেকে আসবে এবং আপনার ডান পাশে চলে যাবে। অর্থাৎ বাঁ দিক থেকে ডানে রাস্তা পার হলে সেটি অশুভ লক্ষণ। এমন পরিস্থিতিতে আপনার সতর্ক হওয়া উচিত কারণ আপনি যে কাজটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ হবে না।বিপরীতভাবে, যদি বিড়াল আপনার ডানদিকে আসে এবং বাম দিকে যাওয়ার সময় আপনার পথ অতিক্রম করে তবে এটি একটি ভাল লক্ষণ। এর মানে আপনি যে কাজের উদ্দেশ্যে যাচ্ছেন, সেটি সফল হবে।যদি কোনও ব্যক্তি শুয়ে থাকে এবং হঠাৎ একটি বিড়াল এসে তাঁর মুখ এবং মাথা চাটতে থাকে, এর অর্থ হল যে ব্যক্তিটি অদূর ভবিষ্যতে মৃত্যুবরণ করবেন।যদি কোনও বিড়াল হঠাৎ কোনও ব্যক্তির উপর পড়ে তবে সেই ব্যক্তির নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। এই ধরনের ব্যক্তি অদূর ভবিষ্যতে খুব অসুস্থ হতে পারেন। এই ধরনের ব্যক্তির অবিলম্বে মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো উচিত।বিড়ালরা যদি বাড়ির ভিতরে বা বাইরে লড়াই শুরু করে তবে এটি গ্রহগত ঝামেলা এবং আর্থিক ক্ষতির লক্ষণ।বাড়ির ভিতরে বা বাড়ির ছাদে যদি কোনও বিড়াল কান্না শুরু করে, তবে আপনার পরিবারে কোনও বড় সমস্যা আসতে পারে। যেমন, পরিবারের কোনও সদস্যের মৃত্যু বা কারাবাস, মারামারি, দুর্ঘটনা, চুরি, আগুন লাগার মতো ঘটনা।যদি একটি বিড়াল ঘরে আসে এবং মলত্যাগ করে এবং চলে যায় তবে এর অর্থ হল কোন অশুভ আত্মা আপনার বাড়িতে প্রবেশ করেছে। অথবা আপনার বাড়িতে কিছু জাদুবিদ্যা করা হয়েছে। অবিলম্বে পরীক্ষা করানো উচিত।বিড়ালের সঙ্গে যুক্ত শুভ লক্ষণ কী কী? আপনি যদি কোথাও বেড়াতে যান এবং আপনার ডান দিকে একটি বিড়াল তার মুখে রুটি বা মাংসের টুকরো নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখেন তবে আপনার কাজ সফল হবে এবং আপনি সম্পদ এবং পদ লাভ করবেন।দীপাবলির অমাবস্যার রাতে আপনার বাড়িতে যদি একটি বিড়াল আসে, তাহলে বুঝবেন, দেবী মহালক্ষ্মী আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।কোথাও যাওয়ার সময়ে আপনার ডান পাশে একজোড়া কালো বিড়াল যদি দেখেন, তাহলে এর মানে ঈশ্বর আপনার কাজে আপনার সঙ্গে আছেন।জ্যোতিষী মৃগেন্দ্র চৌধরী বলেছেন, এই সমস্ত অশুভ এবং শুভ লক্ষণের অর্থ তখনই বোঝা যাবে যখন একটি বিড়াল হঠাৎ দেখা দেয়। অনেকেই তাঁদের বাড়িতে বিড়াল পালন করেন। তাঁদের সঙ্গে অশুভ হয় না। কারণ, ঘরে বিড়াল রাখলে আপনার রাহুর উন্নতি হয়। (এই প্রতিবেদনের তথ্য জ্যোতিষের থেকে প্রাপ্ত, নিউজ ১৮ বাংলা এর কোনও তথ্য নিশ্চিত করে না।)
