Tag Archives: Meera Bhattacharya

Buddhadeb Bhattacharya Meera Bhattacharya: অসাধারণ এক পোর্টফোলিও হয়েও সারাজীবন সাধারণ থাকলেন বুদ্ধ-জায়া মীরা…

কলকাতা: ৫৯এ, পাম অ্যাভিনিউ-এর ছোট্ট ফ্ল্যাট, বিলাস থেকে শতহস্তে দূরে থাকা মীরা ভট্টাচার্য। রূপান্তরকামী এক সন্তানের মা, যিনি আবার রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী। অর্থাৎ, অসাধারণ এক পোর্টফোলিও হয়েও সারাজীবন সাধারণ হয়ে থাকাতেই বিশ্বাসী বুদ্ধ-জায়া। মুখ্যমন্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বরাবরই এক অনাড়ম্বর জীবন কাটালেন মীরা ভট্টাচার্য। ৮ অগাস্ট ২০২৪, সকাল ৮.২০-তে জীবনাবসান হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের। পরিবারে রইলেন স্ত্রী মীরা ও সন্তান সুচেতন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কথা ঘুরেফিরে এলেই, একজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর সাদামাটা জীবনযাপনের কথাই এসেছে। পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটের বাইরে এখনও সেই পুরনো লেটার বক্স। প্রাক্তন হয়ে গেলেও, লেটার বক্সের উপর আজও সাঁটানো আছে সেই পুরনো কাগজ। যেটা মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন লাগানো হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকে প্রাক্তন হওয়ার পরেও ওই দু’কামরার ফ্ল্যাটেই শেষদিন পর্যন্ত রইলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও তাঁর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। পরিবার সূত্রে খবর, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুও তাঁকে এই ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র যেতে বলেছিলেন। কিন্তু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এখান থেকে যেতে চাননি। মীরা ভট্টাচার্য বলেন, “কোনও দিন চেঞ্জ করার কথা মনে হয়নি। উনি চেঞ্জ করতে চাননি।’’

আরও পড়ুন: বলুন তো কোন ফলের বীজ পেটে চলে গেলে আপনি মরেও যেতে পারেন? অবশ্যই জেনে রাখুন

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ইচ্ছে থাকলেও শরীর সায় না দেওয়ায় ভোট দিতে যাননি বুদ্ধদেব। পাঠভবন স্কুলে গিয়ে ভোট দেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। ভোট দিয়ে বেরিয়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী জানিয়েছিলেন, ভোট দেওয়ার মতো শারীরিক অবস্থায় নেই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আজই প্রথম আমরা বাড়ির বাইরে বেরলাম। ‘এতদিন একসঙ্গে ভোট দিতাম, এবার মন খারাপ’, বলেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন: দু কামরার ফ্ল্যাট, অ্যাম্বাসাডর আর ধুতি- পাঞ্জাবি৷ বুদ্ধদেব বরাবরই ব্যতিক্রমী

বরাবরই নিজের ব্যক্তিগত জীবনকে ব্যক্তিগত করে রাখতেই পছন্দ করেছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ইন্টারনেটে প্রচুর খোঁজাখুঁজি করেও তাঁদের বিয়ের দিন বা কীভাবে বিয়ে হয় তা জানতে পারা যায় না। তবে বিভিন্ন সময় মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পাশে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ভোট দেওয়া এবং বিশেষ করে অসুস্থতার সময় সব সময়ই পাশে থেকেছেন মীরা ভট্টাচার্য। ঘরের দেওয়াল জুড়ে কাল মার্কস, লেনিন, রবীন্দ্রনাথ, কাকা সুকান্ত ভট্টাচার্যর ছবি। সঙ্গে রয়েছে সারি সারি বই। আগে ছোট চৌকিতে ঘুমোতেন বুদ্ধদেব, সেটা বদল করে চিকিৎসার স্বার্থে আনা হয়েছিল খাট। আলমারি ভর্তি বই, পড়াশোনা নিয়েই থাকতে ভালবাসতেন বুদ্ধদেব। তবে শেষ দিনগুলিতে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়ায়, কেউ পড়ে দিলে উনি শুনতেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, “ওঁকে শোনাতে হয়, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হয়েছে।’’

আরও পড়ুন: আপনার শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাব হলে প্রথম কোন লক্ষণে বুঝবেন? বড় ক্ষতির আগে অবশ্য়ই জানুন

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের সময়ও শারীরিক অসুস্থতার কারণে ভোট দিতে যাননি তিনি। অসুস্থতার কারণে ব্রিগেড সমাবেশেও আসেননি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। বরং সমাবেশের আগের দিন একটি লিখিত বার্তা পাঠিয়েছিলেন বামপন্থী জনতার উদ্দেশে। পরে একটি অডিও বার্তা দিয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক ভাবে অসুস্থ বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে কার্যত কোথাও বেরোননি তিনি। আর তাঁর ছায়সঙ্গী হয়েই শেষদিন পর্যন্ত থেকে গেলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য।