ডোকরা গ্রাম 

East Bardhaman News: লকডাউনের প্রভাব আজও রয়েছে বর্ধমানের এই গ্রামে, মাথায় হাত শিল্পীদের

পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলার দারিয়াপুর গ্রাম। জেলার জঙ্গলমহল আউশগ্রামের এই গ্রামটি বিখ্যাত ডোকরা শিল্পের জন্য। আউশগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত এই গ্রামে রয়েছে বহু প্রাচীন ডোকরা শিল্প। সেই সঙ্গে রয়েছেন ডোকরা শিল্পীরা। যারা কয়েক প্রজন্ম ধরে বয়ে নিয়ে আসছেন এই শিল্পটিকে। গ্রামের শিল্পীদের হাতের নিদারুণ কাজ দেখতে, প্রত্যন্ত এই গ্রামে ছুটে এসেছেন দূরদূরান্তের বহু মানুষ। এই গ্রামের শিল্পীদের কাজ পৌঁছে গিয়েছে দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ গ্রামে এসেছে একাধিক পুরস্কার।

বছর কয়েক আগে পর্যটকদের জন্য কিছুটা নতুন ভাবে সাজানো হয় গ্রামটিকে। গড়ে তোলা হয় গেস্ট হাউসও। তবে আর মাত্র কয়েকদিন পরেই দুর্গাপুজো। পুজোকে কেন্দ্র করে রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন কাজের ব্যস্ততা তুঙ্গে। ঠিক সেরকমই পুজোর আগে বর্ধমানের এই গ্রামের শিল্পীদের ব্যস্ততাও থাকত চরমে। পুজোর আগে দূর দূরান্ত থেকে আসত অর্ডার। ডোকরার বিভিন্ন জিনিস প্রস্তুত করতে রীতিমত হিমসিম খেতে হত শিল্পীদের। কিন্তু বর্তমানে সেই ছবি বদলে গিয়েছে অনেকটাই। এই প্রসঙ্গে শিল্পী তথা সেক্রেটারি শুভ কর্মকার জানিয়েছে,”পুজোর আগে আমাদের খাবার খাওয়ার সময় থাকত না। কম বেশি প্রত্যেক শিল্পীর হাতেই প্রচুর কাজ থাকত। কিন্তু এখন পুজোর আগে সেভাবে কোনও চাপ নেই।”

শিল্পীদের কথায় বেশ কয়েক বছর আগেও দুর্গাপুজোর আগের এই সময়টা চরম ব্যস্ততায় কাটত তাদের। অর্ডার সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হত শিল্পীদের। সবথেকে বেশি চাহিদা থাকতো ডোকরার গয়নার। দূর দূরান্ত থেকে বিভিন্ন গয়না তৈরির জন্য অর্ডার আসত শিল্পীদের কাছে। পুজোর আগে এইসময় এক একজন শিল্পী বেশ ভাল টাকার অর্ডার পেতেন। তবে এখন ছবিটা অনেকটা পাল্টে গিয়েছে।

কিন্তু কি কারণে এহেন পরিবর্তন ? এই প্রসঙ্গে শুভ কর্মকার আরও জানিয়েছেন,”লকডাউনের পর থেকেই ডোকরার জিনিসের চাহিদা সহ ডোকরার গয়নার চাহিদা একদম কমে গিয়েছে। বিভিন্ন মণ্ডপে কাজের জন্য, গয়না তৈরির জন্য পুজোর আগে প্রচুর ব্যস্ত থাকতাম আমরা। কিন্তু লকডাউনের পর থেকেই এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখন অক্সিডাইজ মেটালের বিভিন্ন গয়নাও পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। অক্সিডাইজ মেটাল এর তৈরি জিনিসের দাম অনেক কম এবং ডোকরার আদলে সেই জিনিস তৈরি হচ্ছে। সে কারণেও আমাদের ডোকরার তৈরি জিনিসের চাহিদা কমতে পারে।”

আরও পড়ুনঃ Rahul Dravid: সব জল্পনার অবসান! ফের কোচের পদে রাহুল দ্রাবিড়, ভারতীয় ক্রিকেটে বড় খবর

ডোকরার জিনিসে পালিশের প্রশিক্ষণ নেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হলেও, আজও কোনও সুরাহা পাননি শিল্পীরা। সব মিলিয়ে পূর্ব বর্ধমানের শিল্প মানচিত্রে উজ্জ্বল এই গ্রামের শিল্পীদের এখন মন ভার। চেনা সেই ব্যস্ততা না থাকায়, নিজেদের প্রাচীন এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তার রেখা তাদের কপালে। লকডাউনের প্রভাব যেন এখনও রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের এই গ্রামে।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী