Beline Movie Review: বাংলা ছবির ছক ভেঙে দিল ‘বেলাইন’… মনস্তত্ত্বের শিকড় বেয়ে চোখেই বাজিমাত পরাণের, অনবদ্য শ্রেয়া

ভগ্নমনস্কতা। চিন্তা-অনুভূতির অসঙ্গতি। উদ্ভট চিন্তা। বিভ্রান্তিকর, অলীক অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ। প্রেম-কামনা-যৌনতা-একাকীত্ব। আর যা কিছু খালি চোখে দেখা যায় না, তাই মাত্র দেড় ঘণ্টায় বড় পর্দায় তুলে ধরলেন পরিচালক। দর্শক কাঁদল, হাসল আর ভালবাসল  তিনটি চরিত্রকে।
‘নাহি বর্ণনার ছটা, নাহি ঘটনার ঘনঘটা।’ ঘটনায় আছেন এক বৃদ্ধ ও এক যুগল, যারা  লিভ-ইন করে। তিনটি চরিত্রের কারও কোনও নাম নেই। শুধু তারা তিনজনেই এক বৃত্তে মিশে গিয়েছে। তাদের মিলিয়েছে অবসাদ, অপ্রাপ্তি। পরিচালক শমীক রায়চৌধুরী একটি ছবিতেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ‘মনের হদিশ’ আসলেই কেউ জানে না। শমীক রায়চৌধুরীর গল্প বলার ধরন অভাবনীয়। কম সংলাপ কিন্তু অভাবনীয় এক্সপ্রেশনে বাজিমাত করেছেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। শ্রেয়া ভট্টাচার্য অনবদ্য। অসাধারণ অভিনয় তথাগত মুখোপাধ্যায়েরও।  ছবিটি প্রযোজনা করেছেন হরিৎ রত্ন।

এক বৃদ্ধ। হয়তো অবসরপ্রাপ্ত। সঙ্গী বাংলা সিরিয়াল। আচমকা একদিন ভুলবশত ফোন করে এক তরুণী। সেই ফোন আর কাটা হয় না কোনওদিন। তরুণীর মুখের সঙ্গে মিলে যায় তাঁর প্রিয় ধারাবাহিকের প্রিয় চরিত্রটির মুখ। বৃদ্ধ চুপচাপ শুনতে থাকে মেয়েটির যাপন। দুজনের একাকীত্ব মিলে যায় কোথাও। যেইএকাকীত্বে জড়িয়ে রয়েছে একজনের অপূর্ণ যৌনতা, আরেকজনের বিগত যৌবন। কিন্তু আসলে কি এসব ঘটছে? নাকি সবটাই…

জীবনানন্দ লিখেছিলেন, ‘আলো-অন্ধকারে যাই—মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন্ এক বোধ কাজ করে;
স্বপ্ন নয়—শান্তি নয়—ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়;
আমি তারে পারি না এড়াতে…’

এও বোধ হয় তেমনই এক ‘বোধ’। যে বোধ এড়াতে পারেন না সেই বৃদ্ধ। আর ছবির শেষদৃশ্যে বাস্তব, কল্পনা, ধোঁয়াশা সবটা মিলে যায়। ঘুম আসে বৃদ্ধের। আর ছবি জুড়ে তখন ‘উটের গ্রীবার মতো নিস্তব্ধতা।’ ক্লাইম্যাক্সে বাস্তব থেকে ‘বেলাইন’ হয়ে যায় দতর্শক। মনে হয় যা হল, তা কী আদৌ হল! পরমুহূর্তে মনে হয়, ‘ তাই সত্য যা রচিবে তুমি…’