মানিক সাহা ও নরেন্দ্র মোদি

Tripura CM Manik Saha: মৈত্রী সেতু দ্রুত চালু করার আর্জি প্রধানমন্ত্রীর কাছে, ত্রিপুরার উন্নতিতে দরবার মানিক সাহার 

আগরতলা: ত্রিপুরা রাজ্যের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দাবি পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। যোগাযোগ ক্ষেত্রে উন্নয়ন, জনজাতি কল্যাণ, বন, শিল্প ও বাণিজ্য, গ্রামোন্নয়ন, জাতীয় সড়ক, বিদ্যুৎ, কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়ন কল্পে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

এর মধ্যে রয়েছে রেললাইন ডাবল লাইনে উন্নীতকরণ, বিলোনিয়া-ফেনী রেল সংযোগ স্থাপন, এমবিবি এয়ারপোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চালু করা-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। একাধিক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষা‍ৎ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জে পি নাড্ডার সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কথা বলেন মানিক সাহা।

আরও পড়ুন: ‘ওয়াইল্ড লাইফ’-এর আরও গভীরে রয়্যাল বেঙ্গল দর্শন! নেওড়াভ্যালিকে ঢেলে সাজাচ্ছে বন দফতর! কীভাবে?

প্রত্যাশিত ভাবেই তৃতীয় বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিলেন নরেন্দ্র মোদি। সম্প্রতি সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয় দেশের অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনতার আশীর্বাদে ভারতীয় জনতা পার্টি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট পুনরায় কেন্দ্রে সরকার গড়ার জন্য নির্বাচিত হয়। ইতিমধ্যে দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন নরেন্দ্র মোদি। এই পরিস্থিতিতে দিল্লি সফরে গিয়ে নয়াদিল্লির নতুন সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: ঘুমের মধ্যে হঠাৎ মনে হয় উঁচু থেকে পড়ে যাচ্ছেন? কী অর্থ এমন স্বপ্নের! জানলে চমকে যাবেন

তৃতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ায় নরেন্দ্র মোদিকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান মানিক সাহা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে আমি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছি। তৃতীয় বার মোদি সরকার গঠন হওয়ায় সকল ত্রিপুরাবাসীর ব্যাপক উৎসাহ সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করি।’ সেই সঙ্গে এই সাক্ষাতে বিকশিত ভারত নির্মাণের দিশায় একাধিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে গঠনমূলক আলোচনা হয় মুখ্যমন্ত্রী সাহার।

এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনায় উঠে আসে সিঙ্গেল লাইন রেল ট্র্যাককে ডাবল ট্র্যাকে উন্নীতকরণ, বিলোনিয়া-ফেনী রেল সংযোগ স্থাপন, এমবিবি বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক উড়ান পরিচালনা এবং এমবিবি বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে ঘোষণা করা, সাব্রুমের মৈত্রী সেতুর (ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু) মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ দ্রুত সংযোগ স্থাপন করার বিষয়। জনজাতি কল্যাণে রাজ্যে ১৫টি নতুন একলব্য মডেল আবাসিক (EMR) স্কুল নির্মাণ, বন দফতরে বিশ্বব্যাঙ্কের সহায়তায় (এনহ্যান্সিং ল্যান্ডস্কেপ এবং ইকোসিস্টেম ম্যানেজমেন্ট প্রজেক্ট)  ১৭৬৪ কোটি টাকার প্রকল্প রূপায়ণ, আগরতলায় আগর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন, শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে ট্রানজিট এবং ট্রান্স-শিপমেন্টের জন্য প্রোটোকল রুট হিসাবে সাব্রুম-রামগড়-চট্টগ্রাম এবং সাব্রুম-রামগড়-মংলা রুট অন্তর্ভুক্ত করা, বাংলাদেশে ভ্যালু অ্যাডেড পণ্য রফতানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা অপসারণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।

সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশনের অনুদান বৃদ্ধি, পিএম আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পে আরও এক লক্ষ পরিবারের জন্য আবাসন, জাতীয় সড়ক সমস্যা, বিদ্যুৎ, কৃষি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা হয়। এদিকে এদিনই মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবনে সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকারে মিলিত হন। সাক্ষাত কালে তৃতীয়বার সরকার গঠনের জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী সিংকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। আলোচনা কালে রাজ্য সরকারকে গ্রিফের (GREF) জমি হস্তান্তর করা এবং তেলিয়ামুড়া ও উদয়পুরে আসাম রাইফেলসের জমিতে সৈনিক স্কুল স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছে আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী।

দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। সাক্ষাতের সময়ে দ্বিতীয় বারের মতো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করায় শ্রী শাহকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সাহা। আলোচনার সময়ে রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। এরমধ্যে রয়েছে –  ত্রিপুরা রাজ্যের জন্য আরও ২টি ইন্ডিয়ান রিজার্ভ (IR) ব্যাটেলিয়নের অনুমোদন প্রদান, রাজ্যের দাবি সাপেক্ষে নিরাপত্তা সম্পর্কিত ব্যয় (SRE) এর অধীনে স্থায়ী কমিটির অনুমোদন অনুযায়ী ৩৫.৫৪ কোটি টাকার মধ্যে বকেয়া ২৬.৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করা সহ ইত্যাদি বিষয়।

পরবর্তী সময়ে এদিন নয়াদিল্লির সংসদ ভবনে ভারতীয় জনতা পার্টির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জে পি নাড্ডার সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এই সময়ে তিনি ত্রিপুরাবাসীর পক্ষ থেকে শ্রী নাড্ডাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। সাক্ষাত কালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রীর কাছে ত্রিপুরায় এইমসের ধাঁচে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন, ধলাই জেলার কুলাইতে মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করার আর্জি জানান মুখ্যমন্ত্রী।

আবীর ঘোষাল