মেরঠ: চাঞ্চল্যকর ঘটনা উত্তর প্রদেশের মেরঠে। ‘কুট্টু কা আটা’ খেয়ে সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন প্রায় দেড়শো জন মানুষ। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের অবশ্য জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এর মধ্যে কিছু রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উপবাস চলাকালীন বহু মানুষ কুট্টু কা আটা কুট্টুর আটা খেয়ে থাকেন। এখন পুলিশের সন্দেহ, এই আটায় ভেজাল রয়েছে। যার জেরে খাবারের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন মানুষ। এর আগেও অবশ্য এই ধরনের ঘটনার কথা সামনে এসেছে। এই আটার বিষয়ে সমস্ত কিছু আলোচনা করে নেওয়া যাক।
কুট্টু কা আটা আসলে কী?
কুট্টু কা আটাকে ইংরাজিতে বাকহুইট বলা হয়। যার বিজ্ঞানসম্মত নাম Fagopyrum Esculentum। এক-এক অঞ্চলে অবশ্য কুট্টু কা আটার নাম এক-এক রকম। যেমন- কোথাও এটি তাউ, তো কোথাও আবার ব্রেশ, এমনকী কোথাও কোথাও তা ফাফড়া নামেও পরিচিত। বাকহুইট বা কুট্টু কা আটা নামে আটা বা হুইট রয়েছে ঠিকই, কিন্তু এর সঙ্গে শস্যের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি ফলের ক্যাটাগরিতে পড়ে।
কোথা থেকে এসেছে এই কুট্টু ফসলের গাছ?
বিশ্বাস করা হয় যে, আজ থেকে প্রায় ৫-৬ হাজার বছর আগে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কুট্টুর ফসল বা বাকহুইটের চাষ শুরু হয়েছিল। সেখান থেকে তা ছড়িয়ে পড়েছে মধ্য এশিয়া, পশ্চিম এশিয়াতেও। এমনকী পরে তা ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়েছিল। Hullo Pillow-র একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, প্রায় ৫৩০০ খ্রিষ্টপূর্বে ফিনল্যান্ডে শুরু হয়েছিল কুট্টু ফসলের চাষ।
মূলত কুট্টু ফসলের গাছ প্রায় ২-৪ ফুট লম্বা হয়। এর পাতাগুলি অনেকটা ত্রিভুজাকৃতি। আর এর রঙ পুরোপুরি সবুজ। আর এই গাছে ছোট ছোট সাদা রঙের ফুল হতে থাকে। এরপর সেই ফুলই ফলে পরিণত হয়। আর সেই ফল শুকোনোর পরেই তা থেকে ছোলার মতো ছোট ছোট বাদামী রঙের বীজ বেরিয়ে আসে। আর সেই বীজ পেষাই করেই তৈরি হয় কুট্টু কা আটা।
আরও পড়ুন– এই কোম্পানির শেয়ার কিনেছেন? দাম থাকতে থাকতে বেচে দিন, বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করা হল
ভারতে কোথায় চাষ হয় কুট্টু ফসল?
সাধারণত ১৮০০ মিটার উচ্চতায় পার্বত্য অঞ্চলে এই ফসল উৎপাদিত হয়। ভারতের জম্মু-কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড এলাকা এবং দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি অঞ্চলে কুট্টু ফসল ফলে। এখানেই শেষ নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও এই ফসলের চাষ হয়। রবিশস্য হিসেবে চাষ করা হয় এই ফসল। আর কুট্টু ফসল ৮০ শতাংশ পাকলে তবেই তা তোলা হয়। এরপর সেই ফসল শুকিয়ে তা থেকে বীজ আলাদা করা হয়। এবার সেই বীজ পিষে আটা প্রস্তুত করা হয়। কুট্টু ফসল মোটামুটি ৩০ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে প্রস্তুত হয়ে যায়।
বিশ্বের কোন অংশে সবথেকে বেশি পরিমাণে উৎপাদিত হয় কুট্টু ফসল?
বিশ্বে সবথেকে বেশি কুট্টু চাষ হয় রাশিয়া, চিন এবং কাজাখস্তানের মতো দেশগুলিতে। এই নিরিখে চতুর্থ স্থানে রয়েছে কুট্টু ফসল। এর পাশাপাশি ইউক্রেন এবং কিরগিজস্তানেও ব্যাপক হারে চাষ হয় কুট্টুর ফসল। আর সবথেকে বড় কথা হল, সেই দেশগুলিতে রোজকার খাদ্যাভ্যাসের অংশ এই ফসল। এমনকী কুট্টু কা আটার ন্যুডলস আবার জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয়। একই ভাবে চিনে পাওয়া যায় কুট্টু কা আটার ভিনিগার। অন্যদিকে আবার আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলিতে দারুণ জনপ্রিয় কুট্টু কা আটার কেক এবং প্যানকেক।
কুট্টু কা আটাকে সুপারফুড কেন বলা হয়?
কুট্টু ফসল যেহেতু ফলের মধ্যে পড়ে, তাই এই ফসলের আটা ব্যবহার করে লুচি থেকে পকোড়া বানানো হয়। আর উপবাসের দিনগুলিতে সেই সব খাবার খাওয়া হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রোটিনের দারুণ উৎস হল কুট্টু কা আটা। ১০০ গ্রাম কুট্টু কা আটার মধ্যে পাওয়া যায় ১৫ গ্রাম প্রোটিন। এর মধ্যে ভাল পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবারও পাওয়া যায়। সেই কারণে একে সুপারফুডের তকমাও দেওয়া হয়।
এখানেই শেষ নয়, কুট্টু কা আটার মধ্যে পাওয়া যায় আলফা লিনোলেয়িক অ্যাসিড। যা খারাপ বা ব্যাড কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে অত্যন্ত কার্যকর। আমেরিকান জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কুট্টু কা আটার মধ্যে থাকে অদ্রবণীয় ফাইবার। যা গলব্লাডারের স্টোনের আশঙ্কা হ্রাস করতে দারুণ সহায়ক। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, কুট্টু কা আটার গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খুবই কম। ফলে এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও অত্যন্ত কার্যকর।
কত দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায় কুট্টু কা আটা?
কুট্টু কা আটার সেলফ লাইফ বা আয়ু খুবই কম। এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই আটা। আর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া কুট্টু কা আটা খেলে বিষক্রিয়া হতে পারে। এমনকী কুট্টু কা আটায় ভেজাল মেশানোও খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন যে, কুট্টু কা আটার মধ্যে কোনও ভেজাল মেশানো হয়েছে কি না, তা বোঝা যায় এর রঙ দেখে। কুট্টু কা আটার রঙ সাধারণত বাদামি রঙের হয়। তবে এটি নষ্ট হয়ে গেলে কিংবা তার সঙ্গে কিছু মেশানো হলে এর রঙ পরিবর্তিত হয়। কুট্টু কা আটার মধ্যে ভেজাল মেশানো হয়েছে কি না, তা বোঝার আরও একটি উপায় রয়েছে। আসলে এই আটা মাখতে গেলে তা ফেটে যেতে পারে।