মডেল বিদ্যালয় 

প্রত্যন্ত গ্রামের আধুনিক এই বিদ্যালয় দেখলে অবাক হবেন 

বর্ধমান: প্রত্যন্ত গ্রামের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি দেখলে ভাল লাগবে সকলেরই। গ্রামের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি যেন সত্যিই নজরকাড়া। এই বিদ্যালয় যেন সাধারণ জ্ঞানের ভান্ডার।

সম্পুর্ণ বিদ্যালয় সাজানো রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ জ্ঞানের তথ্য দিয়ে। এছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের এই বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয়টির নাম কাঁটাড়ী পূর্বপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এই বিদ্যালয় জেলার কেতুগ্রাম ১ নম্বর ব্লকের কাঁটাড়ী গ্রামে অবস্থিত। তবে এই বিদ্যালয় প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত হলেও , আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে বিদ্যালয়ের সর্বত্র। সাধারণত সচরাচর এই ধরনের বিদ্যালয় চোখে পড়েনা বললেই চলে।

আরও পড়ুন- বিশ্বকাপ ফাইনালে ২০ ওভার খেলা হবে? ঝড়ের আশঙ্কা বার্বাডোজে, এখন আবহাওয়া কেমন?

বিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ জ্ঞানের উক্তি, যা সুন্দর ভাবে আঁকা রয়েছে বিদ্যালয়ের দেওয়ালের সর্বত্র। এই বিদ্যালয় যেন একপ্রকার মডেল বিদ্যালয়।

বাংলা এবং ইংরাজিতে বারো মাসের নাম , জাতীয় পাখির নাম , জাতীয় সংগীত, এছাড়াও আমাদের দেশের সঙ্গে জড়িত বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের নাম ছাড়াও বিভিন্ন তথ্য রয়েছে বিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষের দেওয়াল জুড়ে।

যে দিকেই নজর যাবে যেন সেখান থেকেই কিছু না কিছু শিখতে পারবে পড়ুয়ারা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ কামারুজ্জামান বাবু এই বিষয়ে বলেন , “আমি যখন প্রথম এই বিদ্যালয়ে আসি তখন এসব কিছুই ছিলনা। আমি আসার পর থেকে বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক এবং গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সব হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটা ক্লাসে সেই ক্লাসের পাঠ্য বইয়ের পড়া দেওয়ালে ছবির মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এর ফলে পড়ুয়ারা বই আনতে ভুলে গেলেও দেওয়াল দেখে পড়া বলতে পারবে।”

এই বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সাধারণ জ্ঞানের ছোট ছোট তথ্য এমন ভাবে দেওয়াল জুড়ে আঁকা হয়েছে , যাতে সহজেই পড়ুয়ারা তা মনে রাখতে পারে। বিদ্যালয়ের সিঁড়িতে আঁকা রয়েছে ইংরাজি মাসের নাম আবার কোথাও সপ্তাহের নাম। এছাড়াও একটি ট্রেনের ছবির মধ্যে ছয়টি ঋতুর নাম লিখে তার নাম দেওয়া হয়েছে ঋতু এক্সপ্রেস।

এই সবই করা হয়েছে সাধারণত পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই। তবে জানলে অবাক হবেন পূর্ব বর্ধমানের এই কাঁটাড়ী পূর্বপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালযের ছাদে মাছ চাষও করা হয়। ছাদের মধ্যে ছোট্ট চৌবাচ্চায় বেশ কয়েক রকমের মাছ চাষ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এই মাছ চাষে বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারাও সহযোগিতা করে।

মাছ চাষের পাশাপাশি সবজি চাষও করা হয় এই বিদ্যালয়ের ছাদে। এই প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃ নৈমুদ্দিন বাবু বলেন , “বাচ্চাদের কর্মমুখী করার জন্য এবং চাষ সম্পর্কে ধারণা দিতেই বিদ্যালয়ে মাছ এবং সবজি চাষ করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে বিদ্যালয়ে আমরা এই ধরনের চাষ করে আসছি। এই সবজি বাচ্চারা মিড ডে মিলেও খেয়ে থাকে।”

কেতুগ্রামের এই বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের জন্য রয়েছে কম্পিউটার ক্লাসের ব্যবস্থা, এছাড়াও রয়েছে লাইব্রেরির সুবিধাও। বিদ্যালয়ের তরফে একটি সংগ্রহশালাও করা হয়েছে। যেখানে পড়ুয়াদের বিভিন্ন হাতের কাজ সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

সব মিলিয়ে পূর্ব বর্ধমানের এই কাঁটাড়ী পূর্বপাড়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয় যেন সত্যিই অন্যরকম এক দৃষ্টান্ত। পড়ুয়াদের কথা ভেবে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এহেন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী