নিজের সেলুনে চুল কাটতে ব্যস্ত অশোক প্রামানিক

Offbeat News: ‘এমন যদি হত, আমি পাখির মতো…’ ২০ বছর ধরে ৫টাকা করে সঞ্চয়! কী করলেন কৃষ্ণনগরের এই দম্পতি?

নদিয়া: পেট্রোলের দাম যাই হোক “এই পথ যদি না শেষ হয়….. তবে বাইক চড়লে বেশ হয়” এমনই মানসিকতা থাকে নবদম্পতিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু পঞ্চাশোর্ধ দম্পতিদের এই শখ থাকলে তা তো আলোচনার বিষয় হবেই। কারণ ছেলে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর ঝাড়া হাত পা.. এ সময় কেউ মন দেন ধর্ম কর্মে, কেউবা সময় কাটান টিভি সিরিয়াল দেখে কিংবা তাস পিটিয়ে। তার উপর আয় উপায় যে খুব বেশি হয় এমন নয়, তবে কোন মতে কাটিয়ে দেন শেষ জীবন। কিন্তু ভ্রমণ পিপাসুর কাছে অবশ্য এসব পোষাবে না। তার কাছে‌যেভাবেই হোক বেড়াতে‌ যাওয়া চাই-ই চাই।

নদিয়ার কৃষ্ণনগর শক্তিনগরের বাসিন্দা অশোক প্রামাণিক পেশায় ক্ষৌরকার। কৃষ্ণনগর স্টেশনের কাছাকাছি তার দোকান সকাল ন’টা থেকে রাত নটা পর্যন্ত খোলা। করেন হাড় ভাঙা পরিশ্রম। এভাবেই প্রায় ৩০ বছর ধরে উপার্জন করে ছেলেকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো এবং মেয়েকে বিয়ে দেবার কাজ সমাপ্ত করেছেন, তাদের ঘরে নাতি নাতনিও হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। সবমিলিয়ে সংসার মোটামুটি গুছিয়ে ফেলেছেন অশোক প্রামাণিক।

আগে থেকেই দোকানে রাখা লক্ষীনারায়ণের ভাণ্ডারে উপার্জনের থেকে প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে জমা করতেন মোটরসাইকেল কেনার উদ্দেশ্যে। মাত্র ছয় মাস আগে কেনা মোটরসাইকেল চালানো শিখে স্ত্রীকে নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন শান্তিনিকেতন, এরপর বক্রেশ্বর তারপর জলপাইগুড়ি, মেসেঞ্জার-সহ বিভিন্ন জায়গা ইতিমধ্যে ভ্রমণ করে ফেলেছেন তিনি। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের ব্যবসা ফেলে অনেক দিন বাইরে থাকা সম্ভব না। তাই বৃহস্পতিবার থাকে দোকান বন্ধ আর সেই সুযোগই কাজে লাগান তিনি।

তবে শুধু কাছাকাছি নয় সম্প্রতি তারাপীঠ, দিঘা এবং দার্জিলিং বেড়িয়েছেন তিনি। বাইকের পেছনে সর্বক্ষণের সঙ্গী স্ত্রী শিবানী প্রামাণিক। দীর্ঘক্ষণের দুজনেই কৃষ্ণ নামে দীক্ষিত হওয়ার কারণে নাম গান গাইতে গাইতে কখন পৌঁছে যান গন্তব্যে তা বুঝতেই পারেন না। তবে অশোক বাবু থাকা খাওয়া এসব বিড়ম্বনায় ফেলেন না স্ত্রীকে। বৃহস্পতিবার কাকভোরে বেড়িয়ে পরদিন সকাল সকাল বাড়ি ঢুকে পরেন আর শুরু করে দেন জীবন ‌যুদ্ধ।আপাতত সঙ্গী দুই চাকা এবং স্ত্রীকে নিয়েই তিনি ঘুরে বেড়াতে চান রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন জায়গায়, এমনই জানালেন আমাদেরকে।

মৈনাক দেবনাথ