রামপুরহাট: চতুর্থ দফা ভোটের আগে বীরভূমে নির্বাচনী প্রচারে। বৃহস্পতিবারের সভামঞ্চ থেকে একের পর এক বিজেপিকে নিশানা করে তুমুল কটাক্ষ ছুড়ে দিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “যাঁরা বাংলাকে কালিমালিপ্ত করতে চেয়েছিল তাঁদের স্বরূপ সামনে চলে এসেছে। আমি নবজোয়ারে থাকার সময়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি৷ আমি রামপুরহাট লোকসভায় আগে মিটিং করেছি। যারা বাংলাকে পরিকল্পিতভাবে মান সম্মান, মর্যাদা ছিনিয়ে কলুষিত করতে চেয়েছিল তাদের চেহারা সামনে চলে এসেছে।”
অভিষেকের অভিযোগ, “রাস্তা, আবাস, জলের টাকা সব গায়ের জোরে বন্ধ করে রেখেছিল। যারা আপনার ছাদ, ঘর, রাস্তা, কল, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করতে চায়, তাদের কি এক ছটাক জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত? সত্যি বিজেপি বলেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ হয়ে যাবে? বিজেপি জিতলে তো বন্ধ হবে? যতদিন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার থাকবে, যতদিন শতাব্দী রায় সাংসদ থাকবেন ততদিন লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থাকবে।”
সন্দেশখালি প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “সন্দেশখালির বেলুনে আলপিন ফুটে গেছে৷ কলুষিত করার চক্রান্ত সামনে চলে এসেছে৷ গঙ্গাধর কয়াল বলছেন নির্যাতন, ধর্ষণ হয়নি। কয়েকটা ভোটের জন্য বিজেপি দেশের কাছে বাংলাকে অসম্মান করেছে৷ রেখা পাত্রর একটা ভিডিও এসেছে সামনে। তিনি বলছেন, যে বিজেপি যাদের রাষ্ট্রপতির কাছে নিয়ে গিয়েছে তারা আসল নয়।”
আরও পড়ুন: সন্দেশখালি নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে বিশাল অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনে গেল তৃণমূল কংগ্রেস
একইসঙ্গে এসএসসি দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ টেনে অভিষেক বলেন, “এসএসসি নিয়ে বলেছিল এমন বোম ফেলব যে তৃণমূল বেসামাল হয়ে যাবে৷ চাকরি খাওয়ার চক্রান্তে সুপ্রিম কোর্ট আলপিন ফুটিয়ে দিয়েছে৷ এদের বাড়া ভাতে কার্যত ছাই দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। হাইকোর্টের আদেশের ওপর সম্পূর্ণ স্থগিতাদেশ দিয়েছে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। আমরা এখনও মনে করি দেশের বিচার ব্যবস্থা কিছু মেরুদণ্ড সোজা রাখা ব্যক্তির জন্য বেঁচে আছে।”
বিজেপির প্রার্থীর নাম না করে অভিষেক বলেন, “যারা ২০২১ সালে শীতলকুচি করে। যে ঘটনায় পাঁচ জন তরতাজা মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যার নেতৃত্বে হয়েছিল তাকেই এখান থেকে প্রার্থী করতে চেয়েছিল। শীতলকুচির হত্যার নায়ককে এরা পুরষ্কার দিয়ে প্রার্থী করেছিল। ইসি সেই পদ বাতিল করেছিল। যিনি বিজেপির ডামি ক্যান্ডিডেট ছিলেন তিনি এখন এখানে প্রার্থী হলেন।”
অভিষেকের বীরভুমবাসীর কাছে আবেদন, “যারা পেটের ভাত কেড়েছে তাদের চেয়ার কাড়তে হবে। আগামী ১৩ তারিখের ভোটে কেন্দ্রে উন্নয়ন মূলক সরকার প্রতিষ্ঠিত করবেন৷ তৃণমূলের হাত শক্তিশালী করা মানে, INDIA জোটের হাত শক্তিশালী করা। কয়েকটা ভোটের জন্য নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করেছে৷ সন্দেশখালি পরিকল্পিত করে করা হয়েছে৷ এর জবাব দিতে হবে। বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিতে হবে৷ রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজেও ভোটের লাইনে দাঁড়াতে হবে৷ রামপুরহাট বিধানসভা থেকে এবার যেন এই লোকসভার মধ্যে সবথেকে বেশি ভোট আসে তৃণমূলের ভোটবাক্সে৷ বিধায়ক আশিষদা আছেন, পুরসভার চেয়ারম্যান আছেন, তাঁদের বলছি, এবার সবথেকে বেশি ভোট পেতে হবে।”
তীব্র কটাক্ষ করে অভিষেকের মন্তব্য, “নয় লক্ষ এক হাজার ১৩৭ জনকে বীরভূম জেলায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হয়। বিজেপি প্রচারে আসলে জিজ্ঞাসা করবেন আপনাদের নেত্রী লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বন্ধ করতে বলেছিল তা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী? আর সন্দেশখালি নিয়ে গঙ্গাধর কয়াল আর রেখা পাত্র যা বলেছে তা নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
চরম বিঁধে অভিষেক যোগ করেন, “আমাদের ইডি, সিবিআই দেখিয়ে লাভ নেই। ওসব অনেক করেছেন৷ অন্য দলকে দেখিয়ে দমিয়ে রাখতে পারেন। আমাদের নয়। এই বীরভূমে রামচন্দ্র ডোমেদের সামনে রেখে ধারাবাহিকভাবে বামেরা কী অত্যাচার করত নিশ্চয়ই মনে আছে? সেই সিপিএমের হার্মাদরা হয়েছে আজ বিজেপি। গেরুয়া পতাকা ধরে বিজেপির নেতাদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে৷ সিপিএমের হার্মাদরা হয়েছে আজ বিজেপির উন্মাদ। ৪ জুনের পরে এরা হবে সর্বহারা বরবাদ।”