সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনার ধারণাও বদলে যাচ্ছে। মেয়েরা প্রতিটি ক্ষেত্রেই জীবন ও কেরিয়ারে সাফল্যের শিখর ছুঁয়ে চলেছেন আজ। এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেরই চাকরি করা তাই খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
বিশেষ করে মেট্রোপলিটন শহরে ঘরে ঘরে এমন পরিস্থিতি বেশি দেখা যায়। যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই চাকরি করেন, পরিবার পরিকল্পনা এবং পেশাগত জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
স্বামী-স্ত্রীর ব্যস্ত পেশাগত জীবনের বদলের কারণেই সমাজের অনেক প্রতিষ্ঠিত চিরাচরিত ধ্যান ধারণাও ক্রমশ বদলে যাচ্ছে। এই পরিবর্তনগুলি ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয়ই হতে পারে।
আজ এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সঙ্গে এমনই একটি ছোট প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করব যা সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এই নিয়ে সঠিক ধারণা অনেকের মধ্যেই নেই।
প্রশ্ন হল, আমরা যদি পরিবার পরিকল্পনা বা ফ্যামিলি প্ল্যানিং করি, তাহলে দুই সন্তানের বয়সের ব্যবধান ঠিক কত হওয়া উচিত? ভাই-বোন বা দুই ভাই বা দুই বোনের মধ্যে বয়সের আদর্শ পার্থক্য ঠিক কত হলে তা পারফেক্ট? চলুন জেনে নেওয়া যাক সঠিক উত্তর।
আসলে একথা অনেক ক্ষেত্রেই ঠিক যে কেরিয়ার গড়ার তাগিদে আজকের তরুণ-তরুণীরা বেশি বয়সে বিয়ে করে অপেক্ষাকৃত বেশি বয়সে সংসার পরিকল্পনা করছেন। ৩০ প্লাস বয়সে পিতামাতা হওয়া একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান যুগে।
একজন ব্যক্তিকে আজ তাঁর কর্মজীবনে অগ্রগতির জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে, জীবনে ভারসাম্য বজায় রাখতে, দম্পতিরা অনেক ক্ষেত্রেই সন্তান দত্তক নেন। সেক্ষেত্রে অনেকেই দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা স্থগিত করে রাখেন।
এরপরে তাঁরা তাদের কর্মজীবনে স্থায়ী হওয়ার পরে দ্বিতীয় সন্তানের পরিকল্পনা করেন, অর্থাৎ ৩৫ থেকে ৪০ বছরের আশেপাশে এসে তাঁরা তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান চান। আজ আমরা চলুন জেনে নিই এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কী বলছেন।
একটি নিখুঁত পরিবার পরিকল্পনা ঠিক কী? প্রথম ও দ্বিতীয় সন্তানের বয়সের ব্যবধান কত হওয়া উচিত? কখন আপনার অভিভাবক হওয়ার জন্য সঠিক বয়স যাতে আপনি আপনার কেরিয়ারেও কোনও সমস্যার সম্মুখীন না হন? এই সমস্ত প্রশ্ন নিয়েই আমরা কথা বলেছি সি কে বিড়লা হাসপাতালের সিনিয়র গাইনোকোলজিস্ট ডাঃ অরুণা কালরার সঙ্গে।
চিকিৎসা বিজ্ঞান ও সমাজে বলা হয় দুই সন্তানের বয়সের মধ্যে অন্তত তিন বছরের ব্যবধান থাকতে হবে। ভারত সরকার তার অনেক পরিকল্পনায় একজন মহিলার সুস্থ মা হওয়ার জন্য দুই সন্তানের বয়সের মধ্যে অন্তত তিন বছরের ব্যবধানের কথা বলে।
তবে এটা কোনও লক্ষ্মণ রেখা নয়। সময় বদলে যাচ্ছে। বদলে যাচ্ছে মানুষের চিন্তাধারা। অগ্রাধিকার পরিবর্তন হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে, কত বছরের মধ্যে আপনার সম্পূর্ণ পরিবার পরিকল্পনা সম্পন্ন করা উচিত?
এ বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা না গেলেও ডাঃ অরুণা কালরা বলেন, একজন নারীকে সুস্থ মা হতে হলে দুই সন্তানের মধ্যে অন্তত দুই বছরের ব্যবধান থাকতে হবে। তবে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনও নিয়ম নেই। তিনি বলেন, একজন নারীকে গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তারপর শিশুর জন্মের পর তাকে খাওয়ানো এবং যত্ন নেওয়ার জন্য অনেক সময় ব্যয় করতে হয়।
এমতাবস্থায় নতুন মায়ের পোস্ট প্রেগনেন্সি জটিলতা থেকে সেরে উঠতে কিছুটা সময় লাগে। দ্বিতীয়ত, নারীর শারীরিক অবস্থাও দেখা জরুরি। শিশুকে স্তনদুগ্ধ খাওয়ানোর কারণে নারীর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে।
সেক্ষেত্রে অনেক সময় তাঁকে সুষম খাবারের পাশাপাশি অনেক সাপ্লিমেন্ট নিতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে, একজন ডাক্তার হিসাবে, আমরা প্রথম এবং দ্বিতীয় গর্ভাবস্থার মধ্যে কমপক্ষে দুই বছরের ব্যবধানের পরামর্শ দিই।”
অন্যদিকে, বর্তমানে অনেক দম্পতি আছেন যাঁরা অল্প সময়ের মধ্যেই তাঁদের পরিবার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করতে চান। যাতে তারপরে তাঁরা তাঁদের পেশাগত জীবনের উন্নতিতে মনোনিবেশ করতে পারেন।
এঁরা অনেকসময় দ্রুত দুই সন্তান বা যমজ সন্তান নিতে চান এবং এক বছর থেকে দেড় বছরের মধ্যে তাঁদের বড় করতে চান। এই বাবা মায়েদের ধারণা, এর মাধ্যমে দুই শিশু একসঙ্গে বড় হয়ে যাবে। তাতে খরচ ও সময় দুই সাশ্রয় হবে। আবার এটাও ঠিক যে এতে দুই সন্তানের মধ্যে একটা ভাল বন্ডিং তৈরি হবে। তারা পিঠোপিঠি ভাইবোনের চেয়ে একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠবে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মতে, এই উভয় পরিস্থিতি তাদের নিজস্ব যুক্তিতে সঠিক। ডঃ অরুণার কথায়, “এক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী নিজেরা যা চান তা বেছে নিতে হবে।” তিনি আরও বলেন, “আপনি যদি সুস্থ থাকেন। আপনি যদি সুষম খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি গ্রহণ করেন তবে আপনি দুই সন্তান ধারণের এই ব্যবধান কিছুটা কমাতেই পারেন।”
ডক্টর অরুণার মতে, “অনেক গবেষণায় এও বলা হয়েছে যে দুই শিশুর মধ্যে ২৭ থেকে ৩২ মাসের ব্যবধান তাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভাল। এর ফলে মা ও শিশু উভয়ের স্বাস্থ্য ভাল থাকে।
এই প্রসঙ্গে ডক্টর অরুণা আরও বলেন, দুই শিশুর বয়সের ব্যবধান যত কম হবে, তাঁদের মধ্যে মারামারি তত বেশি হবে। তবে, এই ভাইবোনেরা পাশাপাশি অনেক সুবিধাও পান। তারা একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকে মানসিক ভাবে। তাদের মধ্যে অনেক ইতিবাচক সামাজিক দক্ষতা গড়ে ওঠে যা আগামী দিনে ভাল মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে সাহায্য করে।
Post navigation
Just another WordPress site