নদীয়া নন্দন বৈরাগ্য 

East Bardhaman News: আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাতেও রয়েছে ছাত্র? ‘আমি সব ভুলে যাই’, শ্রীখোল বাজিয়েই জনপ্রিয়তার শীর্ষে নদীয়া নন্দন

পূর্ব বর্ধমান: ভারতীয় সংস্কৃতিতে বর্তমানে আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশীরাও। আমাদের দেশের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বহু পুরানো একটি বাদ্যযন্ত্র হল শ্রীখোল। এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই শ্রীখোল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এবার সেই শ্রীখোল বাজানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বিদেশীরাও।

পোড়া মাটির খোলের দুপাশে চামড়ার আবরণ দিয়ে তৈরি হয় এই বাদ্যযন্ত্র। সবথেকে বেশি কীর্তন গানের সঙ্গেই ব্যবহার হয় এই শ্রীখোল বাদ্যযন্ত্রের। বর্তমানে আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশের মানুষেরাও এই শ্রীখোল প্রেমে মেতে উঠেছেন। ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতি শিখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরাও।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির জল পড়েছে গায়ে? সাবধান, এই ভুল করলেই দফারফা ত্বকের, মুঠো মুঠো পড়বে চুল! এই টিপস মানলেই ঝকঝকে ত্বক, চুল ঝরবে না

আর বিদেশীদের এই ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বর্ধমানের নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের পিলসোঁয়া গ্রামের বাসিন্দা নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। তিনি খুবই অল্প বয়স থেকেই শ্রীখোল বাজাতে শুরু করেন। আর বর্তমানে তিনি সকলের কাছেই বেশ জনপ্রিয়।

এই প্রসঙ্গে নদীয়ানন্দন বাবু বলেন , শ্রীখোল তাঁর বাবার কাকা অর্থাৎ তার দাদু বাজাতেন। তার দাদু অনেক জনকে বাজানো শেখাতেন এবং তিনি সেখানে বসে থাকতেন। যখন সবাই বাইরে যেত তখন তিনি সেই বড় শ্রীখোল বাজানোর চেষ্টা করতেন। তখন তিনি খুব ছোট ছিলেন। একদিন হঠাৎ তিনি তাঁর দাদুকে শ্রীখোল বাজিয়ে দেখান। তাঁর দাদু যে বাজনা ছাত্রদের ছয় মাস ধরে শেখাচ্ছিলেন, সেগুলো সব একদিন বাজিয়ে দেখিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই দাদুর কাছে প্রথম শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হয়।”

আরও পড়ুন: বলুন তো কোন সালে অক্টোবর মাস ৩১ নয়, ২১ দিনে হয়েছিল? কেন বাদ দেওয়া হয়েছিল ১০ দিন? সত‍্যিটা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

ছোট বেলায় দাদুর কাছে প্রথম শ্রীখোল বাজানো শেখেন নদীয়ানন্দন বাবু। পরবর্তীতে তিনি আরও বেশ কিছু গুরুর কাছে শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি দশ, এগারো বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতে শুরু করেন। সেই অল্প বয়স থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বেশ কয়েক দশক পার করে ফেলেছেন নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। আধুনিকতার যুগেও প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন জয় করেছেন বহু মানুষের।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বছর পনেরো আগে এই বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা সেভাবে না থাকলেও , এখন ভাল চাহিদা রয়েছে। যখন চাহিদা ছিল না তখন শ্রীখোল ছেড়ে দেওয়ার কথা একবারও ভাবিনি। কারণ শ্রীখোল আমার রক্তে মিশে রয়েছে। যত অশান্তি থাকুন শ্রীখোল থাকলে আমি সব ভুলে যাই। যতদিন থাকব শ্রীখোল নিয়েই থাকব। ছেলেদের শ্রীখোল শেখাবো। এই বাদ্যযন্ত্রের প্রভাব বিস্তার করার ইচ্ছা ছোটো থেকেই।”

আরও পড়ুন: ৭ দিনের অপেক্ষা! ৩১ জুলাই থেকেই বৃহস্পতি তুঙ্গে ৫ রাশির, সাফল‍্যের পথে সব বাধা কাটবে, ব‍্যাঙ্ক ব‍্যালেন্স উপচে পড়বে

রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটা জায়গাতেই অনুষ্ঠান করেছেন নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও তিনি একাধিকবার প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। বর্তমানে জেলা তথা রাজ্যের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে এই নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। বছরের ৫ থেকে ৬ মাস বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যেই ব্যস্ত থাকেন তিনি। তবে বছরের বাকি সময়টা তিনি শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই নদীয়ানন্দন বাবুর প্রতিভা দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। বর্তমানে তিনি নিজের বাড়িতে বসেই অনলাইন মাধ্যমে বিদেশীদের শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।বর্ধমানের এই নদীয়ানন্দন বৈরাগ্যের দৌলতেই এখন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিদেশিরাও।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী