Tag Archives: folk music

Musical Instruments: হারিয়ে যাওয়া ২৩ টি বাদ্যযন্ত্র নিয়ে কর্মশালা, কী কী ছিল জানুন

পুরুলিয়া: শিল্প সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে উদ্যোগ জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের। ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসা ২৩ বাদ্যযন্ত্রকে নিয়ে পুরুলিয়ায় একটি কর্মশালা আয়োজিত হল। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম থেকে ক্রমশ হারিয়ে যাওয়া লোকবাদ্যকে ফিরিয়ে আনতে পুরুলিয়ায় ‘মানভূমের লোকবাদ্য’ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দু’দিনের এই কর্মশালায় ধামসা, ঢাক, ঢোল, মাদল, সানাই, আড়বাঁশি, তিরিয়ো, তাসা, চেড়পেটি, নাগড়া, কেঁদরি, মদনভেড়ি, শিঙ্গা, পেপটি বাঁশি, টিটকারি বাঁশি, রেগড়া, শ্রীখোল, ঘুঙুর, কাঁসর, তুরুধুতু, টুইলা, গিরিদা, একতারা, গাবডুবি, ডমরু, বিষমঢাকি-এই ২৩ রকম বাদ্যযন্ত্র নিয়ে এই কর্মশালা আয়োজিত হয়।

বিভিন্ন লোক-আঙ্গিকের মোট ২৫০ জন লোকবাদ্য বিশেষজ্ঞ বা বাজনদার এই কর্মশালায় অংশ নেন। পুরুলিয়ার রবীন্দ্রভবনে এই সকল লুপ্তপ্রায় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে এই কর্মশালার উদ্বোধন করেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের অপর সংস্কৃতি অধিকর্তা বাসুদেব ঘোষ। হারিয়ে যেতে বসা লোকবাদ্যকে আবার সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে মানভূমের লোকসংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য। এই বিষয়ে পুরুলিয়া জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী বলেন, পুরুলিয়া লোকসংস্কৃতির পীঠস্থান। এই লোকসংস্কৃতি ভূমিতেও কিছু বাদ্যযন্ত্র হারিয়ে যাচ্ছে। সেগুলোর চর্চা যাতে আবার ফিরে আসে তার জন্যই এই কর্মশালার উদ্যোগ।

আর‌ও পড়ুন: মাঠ ছেড়ে রাস্তাতে ধানের চারা রোপণ! ব্যাপারটা কী?

এই কর্মশালা উপলক্ষে মানভূমের লোকবাদ্য বিষয়ক একটি গ্রন্থ’ও প্রকাশ করা হয়। লোকবাদ্য-র প্রাচীনতা, উৎস ও উদ্ভবের ইতিহাস, নির্মাণ ও বাদ্যশৈলি এবং ঐতিহ্য ও পরম্পরা ইতিবৃত্ত নিয়ে দু’ মলাটে বন্দি হয়েছে। এই বিষয়ে মানভূম কালচারাল আকাদেমির সহ-সভাপতি তথা লোকসংস্কৃতি গবেষক সুভাষ রায় বলেন, মানভূমের বিভিন্ন লোকনৃত্য যেমন ঘোড়া নাচ, বুলবুলি নৃত্য, কাঠি নাচ মাছানি নাচ এগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। এই লোকনৃত্য-গুলিতে বাদ্যযন্ত্রের কী ব্যবহার ছিল কর্মশালায় তা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।

সাবেক মানভূম বা পুরুলিয়ায় একাধিক প্রান্তিক বিভিন্ন জনগোষ্ঠী মানুষের সুখ-দুঃখকে ঘিরে রয়েছে লোকসংস্কৃতি। তাঁদের আশা, আকাঙ্ক্ষা, আবেগ, জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত সংগ্রামের মাধ্যমে এগিয়ে চলা প্রকাশ পায় তাঁদের একেবারেই নিজস্ব ঘরানার লোক আঙ্গিকের মাধ্যমে, লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে, লোকগীতির মাধ্যমে। আর সেই সংস্কৃতিতে যন্ত্র অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি

East Bardhaman News: আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকাতেও রয়েছে ছাত্র? ‘আমি সব ভুলে যাই’, শ্রীখোল বাজিয়েই জনপ্রিয়তার শীর্ষে নদীয়া নন্দন

পূর্ব বর্ধমান: ভারতীয় সংস্কৃতিতে বর্তমানে আকৃষ্ট হচ্ছেন বিদেশীরাও। আমাদের দেশের বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বহু পুরানো একটি বাদ্যযন্ত্র হল শ্রীখোল। এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এই শ্রীখোল ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। এবার সেই শ্রীখোল বাজানোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বিদেশীরাও।

পোড়া মাটির খোলের দুপাশে চামড়ার আবরণ দিয়ে তৈরি হয় এই বাদ্যযন্ত্র। সবথেকে বেশি কীর্তন গানের সঙ্গেই ব্যবহার হয় এই শ্রীখোল বাদ্যযন্ত্রের। বর্তমানে আফ্রিকা, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশের মানুষেরাও এই শ্রীখোল প্রেমে মেতে উঠেছেন। ভারতীয় প্রাচীন সংস্কৃতি শিখতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তাঁরাও।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির জল পড়েছে গায়ে? সাবধান, এই ভুল করলেই দফারফা ত্বকের, মুঠো মুঠো পড়বে চুল! এই টিপস মানলেই ঝকঝকে ত্বক, চুল ঝরবে না

আর বিদেশীদের এই ভারতীয় বাদ্যযন্ত্রের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বর্ধমানের নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের পিলসোঁয়া গ্রামের বাসিন্দা নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। তিনি খুবই অল্প বয়স থেকেই শ্রীখোল বাজাতে শুরু করেন। আর বর্তমানে তিনি সকলের কাছেই বেশ জনপ্রিয়।

এই প্রসঙ্গে নদীয়ানন্দন বাবু বলেন , শ্রীখোল তাঁর বাবার কাকা অর্থাৎ তার দাদু বাজাতেন। তার দাদু অনেক জনকে বাজানো শেখাতেন এবং তিনি সেখানে বসে থাকতেন। যখন সবাই বাইরে যেত তখন তিনি সেই বড় শ্রীখোল বাজানোর চেষ্টা করতেন। তখন তিনি খুব ছোট ছিলেন। একদিন হঠাৎ তিনি তাঁর দাদুকে শ্রীখোল বাজিয়ে দেখান। তাঁর দাদু যে বাজনা ছাত্রদের ছয় মাস ধরে শেখাচ্ছিলেন, সেগুলো সব একদিন বাজিয়ে দেখিয়েছিলেন তিনি। তারপর থেকেই দাদুর কাছে প্রথম শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু হয়।”

আরও পড়ুন: বলুন তো কোন সালে অক্টোবর মাস ৩১ নয়, ২১ দিনে হয়েছিল? কেন বাদ দেওয়া হয়েছিল ১০ দিন? সত‍্যিটা জানলে মাথা ঘুরে যাবে

ছোট বেলায় দাদুর কাছে প্রথম শ্রীখোল বাজানো শেখেন নদীয়ানন্দন বাবু। পরবর্তীতে তিনি আরও বেশ কিছু গুরুর কাছে শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তিনি দশ, এগারো বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান করতে যেতে শুরু করেন। সেই অল্প বয়স থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত বেশ কয়েক দশক পার করে ফেলেছেন নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। আধুনিকতার যুগেও প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মন জয় করেছেন বহু মানুষের।

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “বছর পনেরো আগে এই বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা সেভাবে না থাকলেও , এখন ভাল চাহিদা রয়েছে। যখন চাহিদা ছিল না তখন শ্রীখোল ছেড়ে দেওয়ার কথা একবারও ভাবিনি। কারণ শ্রীখোল আমার রক্তে মিশে রয়েছে। যত অশান্তি থাকুন শ্রীখোল থাকলে আমি সব ভুলে যাই। যতদিন থাকব শ্রীখোল নিয়েই থাকব। ছেলেদের শ্রীখোল শেখাবো। এই বাদ্যযন্ত্রের প্রভাব বিস্তার করার ইচ্ছা ছোটো থেকেই।”

আরও পড়ুন: ৭ দিনের অপেক্ষা! ৩১ জুলাই থেকেই বৃহস্পতি তুঙ্গে ৫ রাশির, সাফল‍্যের পথে সব বাধা কাটবে, ব‍্যাঙ্ক ব‍্যালেন্স উপচে পড়বে

রাজ্যের প্রায় প্রত্যেকটা জায়গাতেই অনুষ্ঠান করেছেন নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। বিভিন্ন প্রতিযোগিতাতেও তিনি একাধিকবার প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। বর্তমানে জেলা তথা রাজ্যের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলে এই নদীয়ানন্দন বৈরাগ্য। বছরের ৫ থেকে ৬ মাস বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যেই ব্যস্ত থাকেন তিনি। তবে বছরের বাকি সময়টা তিনি শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।

সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতেই নদীয়ানন্দন বাবুর প্রতিভা দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। বর্তমানে তিনি নিজের বাড়িতে বসেই অনলাইন মাধ্যমে বিদেশীদের শ্রীখোলের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।বর্ধমানের এই নদীয়ানন্দন বৈরাগ্যের দৌলতেই এখন ভারতীয় সংস্কৃতির প্রশিক্ষণ নিচ্ছে বিদেশিরাও।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী

Tribal Musical Instrument: চাং বাজানো শুনেছেন কখনও? লোধাদের তৈরি চামড়ার এই বিরল বাদ্যযন্ত্র অবলুপ্তির পথে

পশ্চিম মেদিনীপুর: গ্রাম বাংলায় বহু প্রাচীন লোকায়ত শিল্প আজ অবলুপ্তির পথে। বর্তমান প্রজন্ম সেসবের চর্চা না করার কারণে ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে শিল্পধারা। হাতেগোনা কয়েকজন বয়স্ক মানুষ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেন প্রাচীন শিল্পকে। তবে কালের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সেই সকল শিল্প ক্রমে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেয়। এমনই এক প্রাচীন লোকায়ত শিল্প হল চাং।

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং-এর লোধা সম্প্রদায়ের মানুষজন একসময় এই চাং নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গান শোনাতেন। বেশ কয়েক পুরুষ পিছনে গেলে দেখা যাবে আনন্দ বিনোদন এবং অর্থ উপার্জনের পথ ছিল এই শিল্প। তবে বর্তমানে কেউ মনে রাখে না সেই শিল্পের ধারাকে।

আর‌ও পড়ুন: পান বরজের বেহাল অবস্থা, সংসার বাঁচাতে পেশা পরিবর্তনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে

চাং একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিভিন্ন দেবদেবী সহ একাধিক গান গেয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান কিংবা মনোরঞ্জনের আসর বসাতেন লোধারা। চাং, মাদল বাজিয়ে তাঁরা গান পরিবেশন করতেন। যে গানের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠত সামাজিক, অর্থনৈতিক নানান ছবি। তবে এখন সবং ব্লকের দশগ্রাম পঞ্চায়েতের খাজুরি এলাকার মাত্র তিনজন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ এই চাং শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।

গ্রামেরই শম্ভু কোটাল, গুরুপদ কোটাল ও পূর্ণ কোটাল এঁরা তিনজনই সম্পর্কে ভাই, তিনজনই চাং শিল্পী। প্রসঙ্গত তাঁদের ব্যবহৃত চাং বা বিশেষ এই বাদ্যযন্ত্র প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। এঁদের পূর্বপুরুষেরা বংশ পরম্পরায় বাদ্যযন্ত্র চাং ব্যবহার করতেন, বিভিন্ন পুজো অনুষ্ঠানে যেতেন। চাং বাজিয়ে গান গেয়ে তালে তালে নাচতেন’ও। লোকশিল্পের অন্যতম এক প্রাচীন ধারা চাং।

তবে বর্তমানে এঁদের অবস্থা তথৈবচ। জীবন যাপনের তাগিদে চাং নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করা এখন এঁদের পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাও সেই সামান্য উপার্জনে চলে না সংসার। এই চাং বর্তমানে অবলুপ্তির পথে হলেও এখনও পরম্পরা আগলে রেখেছেন শম্ভু, গুরুপদ, পূর্ণরা। কিন্তু এই তিন দিনমজুরের পর কি হারিয়ে যাবে এই বিরল শিল্পধারা?

রঞ্জন চন্দ