কলকাতা: হাতের নাগালে আসতে শুরু করেছে আলুর দাম। গত তিন দিনে ছয় থেকে আট টাকা কিলো দরে আলুর দর কমল বাজারে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার আলু বিক্রি হয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা কিলো দরে। শুক্রবার ৩৫ টাকা কিলো দরে আলু বিক্রি হয়েছে। শনিবার কেজি প্রতি ৩২ টাকায় পৌঁছেছে আলু।
আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আলুর দাম আরও কমতে পারে। এখনও পর্যন্ত আলুর দাম সঠিক হারে কমছে কিনা, তা দেখার জন্য নজরদারি চালানো হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। বেশ কিছুদিন ধরেই বাঙালি মধ্যবিত্তের হাতের নাগালের বাইরে ছিল আলু। ধর্মঘটের কারণে একদিকে যেমন আলুর যোগান কমে যাচ্ছিল ঠিক তেমনি হুহু করে দাম বেড়ে যাচ্ছিল। এর ফলে সমস্যায় পড়েছিল মধ্যবিত্ত বাঙালি।
অন্য দিকে, শাক-সবজির দামও কম নয়। ফলে বাঙালির পাতে টান পড়ছিল। এমন অবস্থায় নড়ে চড়ে বসে প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দেন সংশ্লিষ্ট দফতরকে।
এর পরেই জোড়া রণকৌশল নেওয়া হয়।
এক দিকে, টাক্সফোর্সের সদস্যরা অভিযান চালাতে শুরু করেন পাইকারি ও খুচরো বাজারে। অন্য দিকে, আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলে।
সমস্যা সমাধানের জন্য রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না হুগলির হরিপাল পঞ্চায়েত দফতরে বুধবার তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ধর্মঘটের আহবায়ক প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃত্ব। ডাকা হয়েছিল হিমঘরের সংগঠনের নেতাদেরও। বেশ কিছুক্ষণ ধরে বৈঠকের পর জট কাটে। নেতৃত্ব জানিয়ে দেন তাঁরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তাঁদের দেওয়া বেশ কিছু দাবিও বিবেচনায় আনা হবে বলে রাজ্যের তরফ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়।
এর পরই সাংবাদিক বৈঠকে মন্ত্রী জানান, “সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। আলু ব্যবসায়ীরা যে দাবি জানিয়েছেন, কিছুদিন সমীক্ষা করার পর এই বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে। তবে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট তুলে নেওয়াতে খুব দ্রুত আলুর বাজার স্বাভাবিক হবে। সিঙ্গুর, হরিপাল এবং বর্ধমানের আলু খুব দ্রুত কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পৌঁছে যাবে। এর ফলে আলুর দাম নিম্নমুখী হবে।”
তবে আলুর এই দাম বৃদ্ধির পেছনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর হাত রয়েছে বলেও অভিযোগ ব্যবসায়ীদের। তাঁদের দাবি, খুচরো বাজারে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি দাম রাখা হচ্ছে। তারই পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের একাংশ ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে দাম বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন- মদের দাম বাড়ছে রাজ্যে! কোন কোন সুরার উপর কী হারে, জেনে নিন
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক বরুন পন্ডিত জানান, “রাজ্যে আলুর উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় অনেকটাই বেশি হয়। তাছাড়া কলকাতা সহ রাজ্যের বেশিরভাগ মানুষই সিঙ্গুর হরিপাল এবং বর্ধমানের উচ্চমানের আলু খেতেই অভ্যস্ত। পশ্চিম মেদিনীপুরের আলুর মান রাজ্যের মানুষের খাদ্যাভাসের সঙ্গে যায় না। সেই আলু বিহার, ঝাড়খন্ড, উড়িষ্যার মতন বেশ কয়েকটি রাজ্যে রফতানি করা হয়। সেই রপ্তানি আটকে দিলে আলু ব্যবসায়ীদের অনেকটাই ক্ষতি হয়। আমরা আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। মন্ত্রীমশাই বলেছেন সরকার বিবেচনা করবে। আমরা আশাবাদী।”
এ দিকে, মানিকতলা বাজারে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ টাস্কফোর্স এবং বটতলা থানার পুলিশ এবং বাজার কমিটির যৌথ অভিযান করে। সবজি ও আলুর বাজারদর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে যৌথ অভিযান চালানো হয়েছে। সূত্রের খবর, এই অভিযান আরও বেশকিছু দিন ধরে চালানো হবে।