বাড়ির ছাদে ধান চাষ 

Rice Cultivation: ‘সিজনে চারবার পাঁচ কেজি ধান পাই, বছরে কুড়ি কেজি’- বাড়ির ছাদেই হচ্ছে দেদার চাষ

পূর্ব বর্ধমান: পূর্ব বর্ধমান জেলা রাজ্যের ধানের গোলা নামেই পরিচিত। জেলা জুড়ে ব্যাপক ভাবে ধান চাষ হয়। তবে এবার এই পূর্ব বর্ধমানেই ধান চাষের এক ভিন্ন ধরনের ছবি দেখা গেল। ধান চাষের এই ছবি দেখলে অবাক হবেন আপনারাও। সচরাচর এই ধরনের দৃশ্য চোখে পড়ে না বললেই চলে। আমরা সাধারণত মাঠের মধ্যে ধান চাষ হতে দেখে থাকি।

মাঠে যে ধান চাষ হয় তা আমরা সকলেই জানি। কিন্তু বাড়ির ছাদে কী ধান চাষ করা সম্ভব ? হ্যাঁ, বাড়ির ছাদে ধান চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের এক ব্যবসায়ী। শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও আদতে এটাই সত্যি। পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া শহরের পানুহাটের বাসিন্দা চঞ্চল চৌধুরী। পেশায় তিনি ব্যবসায়ী। আর এই চঞ্চল বাবু তাঁর বাড়ির ছাদে করেছেন ধান চাষ।

এই প্রসঙ্গে চঞ্চল চৌধুরী জানিয়েছেন, “একবার দেখেছিলাম বাড়ির ছাদে টবের মধ্যে কোনও পাখি ধান বোধহয় খেয়ে ফেলে দিয়েছিল। এবং সেখান থেকে পরবর্তীতে ধান বেরিয়েছিল। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে কংক্রিট এর মাঝেও সবুজ করা সম্ভব। তারপরই মজার ছলে ধানের চারা ফেলে বীজতলা করলাম। এখন আমি এই চাষ করে সফল হয়েছি। তিন বছর ধরে আমি এই চাষ করছি। লকডাউনের সময় থেকে এই চাষ করার চেষ্টা করেছিলাম। আমি এখান থেকে সিজনে চারবার পাঁচ কেজি করে ধান পাই। বছরে কুড়ি কেজি ধান আমি এই ছাদ থেকে পাই।”

আরও পড়ুন – Independence Day: স্বাধীনতা দিবসের আগেই ইন্ডিপেনডেন্স কাপ! ৬০০’র বেশি প্রতিযোগী ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে

মাঠে ধান চাষের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময় চাষিদের নানান ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। জলের সমস্যা , দিন মজুরের সমস্যা, পোকার সমস্যা ছাড়াও আরও বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। তাই বর্তমানে অনেকেই বিকল্প চাষের দিকেও ঝুঁকছেন। তবে বাড়ির ছাদে ধান চাষের এহেন ছবি সত্যিই ভিন্ন ধরনের। চঞ্চল বাবুর কথায় বাড়ির ছাদে ধান চাষ করলে বিভিন্ন ধরনের সুবিধাও পাওয়া যাবে এবং পরিশ্রম হবে তুলনামূলক অনেক কম।

বাড়ির ছাদে চাষ করা ধান, মাঠের ধানের থেকে কোনও অংশে কম যাবেনা। বাড়ির ছাদে চাষ করলে মাঠের তুলনায় অনেক ভাল মানের ধানও পাওয়া যাবে। চঞ্চল বাবু এই ধান চাষ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, “চারদিকে চারটে পিলার করে উপরে বাসের মাচা করতে হয়েছে। ছাদ থেকে বেশ কিছুটা উঁচুতে রয়েছে এই মাচা। মাচার মধ্যে পলিথিন দিয়ে তার মধ্যে দিয়েছি মাটি। চারিদিকে পলিথিন থাকার জন্য জলও খুব কম লাগছে। আর এই মাটির মধ্যে আমি ধানের চারা রোপন করেছি। এছাড়াও ছাদ থেকে ধানের জমির যে দূরত্ব রয়েছে সেটা যদি আরও একটু বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে, নিচের ফাঁকা অংশে মুরগি প্রতিপালন করাও সম্ভব। এভাবে ধান এবং মুরগি চাষ করলে বেশ কিছু টাকা উপার্জন করা সম্ভব। আমি ১০ ফুট বাই ৫ ফুট জায়গার মধ্যে এই ধান চাষ করেছে। কেউ বড় আকারে করতে চাইলে আরও বেশি ফলন পাবে। এভাবে ধান চাষ করলে খরচ খুব একটা হয় না। ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেকটা উঁচুতে থাকার কারণে পোকার আক্রমণ সেভাবে হয় না। আর সম্পূর্ণ জৈব সার ব্যবহার করে এই চাষ করছি। ঝরে যাওয়া গাছের পাতা সর্ষের খোল এইসব দিয়েই গাছগুলো এখানে বেড়ে ওঠে।”

ধান চাষ ছাড়াও চঞ্চল বাবু তাঁর বাড়ির ছাদে বিভিন্ন গাছের পরিচর্যাও করে থাকেন। গাছ দিয়েই সাজানো রয়েছে তাঁর বাড়ির ছাদ। তবে বিভিন্ন গাছের মধ্যে এই ধান চাষের ছবি ভিন্ন ধরনের।

Banowarilal Chowdhary