উত্তর ২৪ পরগনা: সে দিন গুলোর কথা মনে পড়লে আজও যেন শিউরে ওঠেন এলাকার মহিলারা। নজরে পড়লেই এলাকার মেয়েদের তুলে নিয়ে গিয়ে ফাঁকা মাঠে, আমবাগানে ঘেরা সুখ সাধুর আখড়ায় করা হত গণধর্ষণ। একসময়ের সেই সুটিয়াতেই মহিলাদের গণধর্ষণের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন মিত্র ইনস্টিটিউশনের প্রাক্তন শিক্ষক বরুণ বিশ্বাস।
পরবর্তীতে, গোবরডাঙ্গা স্টেশন এলাকায় গুলি করে খুন করা হয় ওই প্রতিবাদীকে। সেদিনের সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে দোষীরা সাজা পেলেও, আজও প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাস খুনে জামিনে মুক্ত অভিযুক্তরা, আক্ষেপের সুর বিশ্বাস পরিবারের গলায়। এক যুগ কেটে গেলেও বিচারাধীন সেই মামলা। এখনও বরুণ বিশ্বাস হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়নি প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাসের বাবার। দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরে আদালতে গেলেও নেওয়া হয় না সাক্ষ্য বলে দাবি পরিবারের।
আরও পড়ুন: বিহারে চোর সন্দেহে যুবককে বেঁধে গোপনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ
সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে আরজি কর কাণ্ড নিয়ে যখন তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি, ভাইকে হারিয়ে প্রতিবাদে গর্জে ওঠা বরুণ বিশ্বাসের দিদি প্রমিলা বিশ্বাস আজও যেন সোচ্চার হয়ে উঠেছেন এই নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়। বরুণ থাকলে সে-ও আজ নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রতিবাদ করত। তাঁর কথায়, ‘সুটিয়া গণধর্ষণের পরও রাজ্যে কামদুনি, গেদে, বর্ধমান, কাকদ্বীপ-সহ একাধিক জায়গায় ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটলেও তার বিচার মেলেনি’।
আরও পড়ুন: ‘বিয়ে করলে শুধু কাকুকেই করব’! কাকুর গলায় মালা দিয়ে কী বললেন নিজের ভাইঝি?
প্রশাসনের একাংশ জড়িত থাকায়, তাদের আড়াল করতেই তদন্তের গতি ঘোরানো হয় বলেও অভিযোগ তোলেন বরুণের দিদি। শুধু আরজি কর হাসপাতাল নয় রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতালের পাশাপাশি নারীদের সুরক্ষায় প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক, নারীদের উপর হওয়া অত্যাচারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক অপরাধীদের, চান বরুণের দিদি। রাগ, ক্ষোভ, ব্যথা বুকে চেপেই এখনও চোখের জল নিয়ে বরুণের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকেন অসময়ে। ভাইকে খোঁজেন প্রতিবাদীদের মাঝেই।
এখন সেই লক্ষ্যেই নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাছেন এক সময়ের সুটিয়া গণধর্ষণ কাণ্ডে অন্যতম সাক্ষী প্রতিবাদী বরুণ বিশ্বাসের দিদি। ইতিমধ্যেই আরজি করের ঘটনার পর ছুটে গিয়েছেন তিনি-সহ অন্যান্য প্রতিবাদীরা। পরবর্তীতে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করার ইচ্ছে রয়েছে তাদের। তবে আদৌ কি বিচার মিলবে! শাস্তি পাবে প্রকৃত দোষীরা! আজও যেন সুটিয়া-সহ গোটা রাজ্য খুঁজছে সেই প্রতিবাদী বরুণকেই।