নিউটাউন: ঘটনা গত বছরের ১২ অক্টোবরের। মহালয়ার পরের দিনের। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের নিউটাউন থানার অন্তর্গত মহিষগোট গ্রামের বাসিন্দা রঞ্জিত নস্কর লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন। কী অভিযোগ? মহালয়ার দিন সকাল আন্দাজ এগারোটা থেকে নিখোঁজ তাঁর চার বছরের শিশুকন্যা প্রীতি। বাড়ির বাইরেই খেলতে খেলতে কখন যে উধাও হয়ে গেছে, টের পাননি কেউ। সারাদিন খুঁজেছেন কাছাকাছি সব জায়গায়, লাভ হয়নি কোনও। মেয়েকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে, এমনটাই আশঙ্কা তাঁর।
অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের হল অপহরণের মামলা। ছোট্ট প্রীতির খোঁজে বেরিয়ে পড়লেন সাব-ইনস্পেকটর কাজী রফিকুল ইসলাম ও তাঁর টিম। দু’দিন ধরে সারা এলাকা চষে বেড়িয়েও এমন কোনও প্রত্যক্ষদর্শী পাওয়া গেল না, যিনি শিশুটিকে একা বা কারোর সঙ্গে পাড়া ছেড়ে বেরোতে দেখেছেন।
রফিকুল ও তাঁর টিমের এবার সন্দেহ হতে শুরু করল, পাড়া ছেড়ে আদৌ বেরিয়েছিল তো প্রীতি? সেই সন্দেহের বশে শুরু হয় পাড়াতেই অবস্থিত শিশুটির নিকট আত্মীয়স্বজনের বাড়ির চিরুনি তল্লাশি। ফলও মেলে দ্রুতই। ঘটনার বীভৎসতায় স্তম্ভিত হয়ে যান পুলিশও।
পাড়ার মধ্যেই বাড়ি শঙ্কর নস্করের, অভিযোগকারী রঞ্জিতের বাড়ি থেকে খুব বেশি হলে ১০০ মিটার হবে। প্রীতির আপন কাকা। যাঁর বাড়ির চিলেকোঠায় রাখা গোটাকতক চালের বস্তা। তারই একটিতে পাওয়া গেল শিশুটির নিথর দেহ।
কারা মারল? কেন মারল?
দীর্ঘদিন অসুখে ভুগছিলেন প্রীতির ঠাকুমা আরতি নস্কর, বয়স ষাটের কাছাকাছি। নানা কারণে তাঁর এবং প্রীতির কাকিমা কবিতা নস্করের বিশ্বাস জন্মায়, কোনও একটি শিশুকন্যার বাঁহাতের তর্জনী এবং কনিষ্ঠা ( কড়ে আঙ্গুল) কেটে দেবীর কাছে উৎসর্গ করলে অসুখ সেরে যাবে আরতির। তবে এই কাজ সারতে হবে মহালয়া তিথি থাকতে থাকতেই। কুসংস্কার যে কীভাবে এই একুশ শতকেও মানুষকে অন্ধ করে দেয়!
কাছাকাছি উপযুক্ত বয়সের মেয়ে বলতে প্রীতি। সুতরাং নিজের চার বছরের নাতনির আঙ্গুল কেটে ফেলার ছক কষেন আরতি, এবং এই পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে সোৎসাহে তাঁর সঙ্গী হন কবিতা। মহালয়ার দিন খাবারের লোভ দেখিয়ে দুই মহিলা বাড়িতে নিয়ে আসেন প্রীতিকে। লাল কাপড় দিয়ে তার হাত বেঁধে আরতি কেটে ফেলেন শিশুটির দুটি আঙ্গুল।
আরও পড়ুন: বিরল কাকতালীয় যোগে ভাগ্য খুলবে ৫ রাশির! ধনসম্পদের বন্যা, সাফল্য হাতের মুঠোয়
কিন্তু যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকা, রক্তে ভেসে যাওয়া শিশুকে চুপ করানো যায় কীভাবে? এবার এগিয়ে আসেন কবিতা। প্রীতির মুখে কাপড়ের টুকরো গুঁজে, তার উপর প্লাস্টিকের ব্যাগ চেপে ধরে রাখেন, যতক্ষণ না তার ছটফটানি থেমে যায় চিরতরে। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
গ্রেফতার হন আরতি এবং কবিতা। বিচারপর্বে যাতে পুলিশি হেফাজতেই থাকেন দুই অভিযুক্ত, তা নিশ্চিত করেন রফিকুল ও তাঁর টিম। সম্প্রতি বেরিয়েছে মামলার রায়। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন দু’জনেই। ‘এতে যদি কণামাত্র সান্ত্বনা পান ছোট্ট শিশুটির পরিবার, আমাদের প্রাপ্তি সেটুকুই’, জানাচ্ছেন বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট।