তাঁতির হাতে গড়ে তোলা মা দুর্গা

Durga Puja 2024: তাঁতির হাতেই গড়ে উঠছে মা দুর্গা, বাবার শেষ ইচ্ছে পূরণ করতে যা করল ছেলে…

শান্তিপুর: প্রয়াত বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী ৩০ বছর বাদে আবারও ছেলের হাতে তৈরি প্রতিমা দিয়ে তাঁতঘরেই এ বছরে পুজো হতে চলেছে ঘোষ পরিবারে। নদিয়ার শান্তিপুর শহরের সূত্রাগর অঞ্চলের চুনরিপাড়া লঙ্কাপুকুর লেনে ঘোষ পরিবারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে আসন্ন শারদীয়া পুজো উপলক্ষে। প্রায় ৭০-৮০ বছর আগে পূর্ব বর্ধমানের কালনাতে থাকাকালীন পূর্বপুরুষরা মহাসমারহে করতেন দুর্গাপুজো কিন্তু হস্ত চালিত তাঁতের কাজ ক্রমশ তলানিতে যাওয়ার কারণে বিগত ৩০ বছরে কখনও পুজো হয়নি এই পরিবারে তবে এরই মধ্যে সমগ্র পরিবার সুতাগড় অঞ্চলের সেনপাড়ায় চলে আসার পর পরিবারের বড় ছেলে গৌতম ঘোষ তখন বয়স মাত্র ১৫, ছোট্ট একটি দুর্গা প্রতিমা বানিয়েছিলেন খেলার ছলে আর সেই ঠাকুর দিয়েই পুজো হয়েছিল। কিন্তু ধারাবাহিকতা রাখার সম্ভব হয়নি অত্যন্ত ব্যয়বহুল পুজো হওয়ার কারণে।

এরপরে আবারও অভাব অনটনের কারণে সেনপাড়ার সেই বাড়ি বিক্রি করে চলে আসা বর্তমানে লঙ্কা পুকুর লেনে। এরই মধ্যে গত বছর প্রয়াত হয়েছেন বাবা গোপেশ্বর ঘোষ। সদ্য সমাপ্ত বাৎসরিক কাজ শেষে ছেলের আবারও মনে হয়েছে বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণ করা দরকার তাই এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলেন দুর্গা প্রতিমা নির্মাণের যা এখন শুধু রঙ করার প্রতীক্ষায়। গৌতম বাবু জানাচ্ছেন তাঁতের পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কারণে তাদের তিন ভাইয়ের একজন চালান পাওয়ারলুম বাকি দু’জন এখনও হস্তচালিত তাঁতের উপরেই নির্ভর। তবে পাওয়ার লুমের অবস্থাও ভাল নয়, সম্প্রতি এক্সপোর্ট এর কিছু কাজ বরাত পাওয়ার কারণে হস্ত চালিত দুটি কোনও রকমে চলছে ঢিমে তালে।মা এবং স্ত্রী চরকাতে নলী পাকিয়ে সহযোগিতা করেন তাই কোনও রকমে চলছে সংসার।

আরও পড়ুন- মদের লোভেই করে ফেলেছিলেন…! গোবিন্দা কি জানতেন? অভিনেতার স্ত্রীর ‘এই’ রহস্য জানলে রাতের ঘুম উড়বে আপনারও

ভাই বিষ্ণু ঘোষ জানাচ্ছেন, “দাদার হাতের তৈরি গোপাল ঠাকুর আজও তাদের পরিবারে আরাধ্য দেবতা, যার বয়স প্রায় ২৬ বছর ছোট ভাইয়ের সমান। দাদা থেকে কখনও এই মূর্তি বানানো শেখেনি অথচ খুব সুন্দর হাতের কাজ তাই পরিবারের পুরনো দুর্গাপুজো ফিরিয়ে নিয়ে আসতেও যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সহযোগিতার জন্য আমি মাঝে মাঝে বিচুলি বেঁধে মাটি মেখে কাজের সহযোগিতা করে দিচ্ছি। তাঁতের অবস্থা ভাল না হওয়ার কারণে একটি কাঠের ড্রাম পড়ে নষ্ট হয়েছিল, সেটা দিয়েই বানানো হয়েছে পাটাতন এবং কাঠামো, যা আগামীতে সুরক্ষিত থাকবে পুজোর সঙ্গে প্রতিবছর নিয়মিত।

আরও পড়ুন- হুড়মুড়িয়ে কমবে ইলেকট্রিক বিল! ঘর থেকে সরিয়ে ফেলুন ‘এই’ জিনিসগুলি, মাসে বাঁচবে হাজার হাজার টাকা, একলাফে বিদ্যুতের খরচ অর্ধেক!

মা শেফালী ঘোষ জানাচ্ছেন, “বড় ছেলের এই সিদ্ধান্তে তিনিও খুশি কারণ ওর বাবার আত্মার শান্তি পাবে উনি জানতেন ছেলের মধ্যে প্রতিভা রয়েছে বংশের পুরনো দুর্গাপুজো ফেরাতে ওই পারবে। অত্যন্ত ব্যয়বাহুল পুজো হলেও দুর্গা ঠাকুর কিনতে অর্থ লাগবে না তাই বাকিটা তিন ছেলে যেভাবেই হোক জোগাড় করবে। তবে যেহেতু তাঁত বুনে নলি পাকিয়ে এই পুজো, তাই তাঁত ঘরেই কাপড় টাঙ্গিয়ে অস্থায়ী মণ্ডপ নির্মাণ করে পুজো করা হবে নিষ্ঠা ভরে। আত্মীয়-স্বজন প্রতিবেশী সকলের থাকবে নিমন্ত্রণ।”

Mainak Debnath