মহিলা ট্রাফিক কর্মী

North 24 Parganas News: রাস্তা দাপিয়ে একাই সামলান ট্র্যাফিক! ভদ্রাবতীই যেন পথচারীদের কাছে ‘দুগ্গা’

উত্তর ২৪ পরগনা: দেবী পক্ষের সূচনা। আর তারই মাঝে মধ্যমগ্রাম ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিধানপল্লীর বাসিন্দা ভদ্রাবতী যেন হয়ে উঠেছেন সকলের  বড় আদরের। ছোটবেলা থেকেই দুরন্ত ছিলেন, আর্থিক সচ্ছলতা না থাকায় সেভাবে হয়নি স্বপ্নপূরণ। তবে খেলাধুলা ভালবাসায় অ্যাথলিট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন ভদ্রাবতী। নানা সময়ে নানা ভাবে তিনি অংশ নিয়েছিলেন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। বেশ কয়েকটি পুরস্কারও মিলেছে।

তবে জীবন যেন তাঁকে নিয়ে গিয়েছে অন্য পথে। আজ তিনি মধ্যমগ্রাম সোদপুরের চূড়ান্ত ব্যস্ত রাস্তায় ট্রাফিক সামলান। কখনও রাস্তার এ প্রান্তে, তো কখনও রাস্তার ও প্রান্তে। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে এখন ভদ্রাবতীর এমন সক্রিয়তা যেন মন কেড়েছে পথচলতি মানুষজন থেকে এলাকাবাসীদের। তাঁর এই ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কারণেই আর দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় না সোদপুর মধ্যমগ্রাম রোডের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে। মধ্যমগ্রাম ট্রাফিক ওসি মাঝেমধ্যেই সময় পেলে এসে ভদ্রাবতীকে শিখিয়ে দেন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নানা খুঁটিনাটি। ভদ্রাবতী চান এভাবেই আরও বড় হতে। দেবী দুর্গার সঙ্গে নামের মিল থাকায় আজ সকলেই যেন তাঁকে এক প্রকার ‘জ্যান্ত দুর্গা’ ভাবেন। ব্যস্ত রাস্তায় দ্রুত গতিতে চলা গাড়ি দাঁড় করিয়ে তাঁকে পার করে দিতে দেখা যায় বয়স্ক মানুষজন থেকে কচিকাঁচাদেরও। যাননিয়ন্ত্রণের কাজই যেন আজ এই মহিলা ট্রাফিক কর্মীর কাছে বড় ভালবাসার।

পথ চলতি মানুষজন যাতে কোনরকম ভাবেই দুর্ঘটনার সম্মুখীন না হয় তার জন্যই দৌড়ে প্রখর গরম হোক বা বৃষ্টি, সারা বছরই একই ভূমিকায় দেখা যায় ভদ্রাবতীকে। সংসার সামলে, স্বল্প মাইনের এই ট্রাফিক সামলানোর কাজে যেন তাঁর কিছুটা হলেও  স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতেন দেশের হয়ে কাজ করার। তবে এখন তিনি এই কাজ যেন মানুষের জন্যই করছেন। পরনে জলপাই রংয়ের পোশাক। তার উপর গায়ে জড়ানো বিশেষ ট্র্যাফিকের জ্যাকেট। ঠাঁয় রোদে দাঁড়িয়ে কখনো ক্লান্তির ছাপ দেখা যায় না তাঁর চোখে-মুখে। সদা হাস্যময়ী এই মহিলা ট্রাফিক কর্মীকে রাস্তায় না দেখতে পেলে যেন স্থানীয় মানুষজনও  চিন্তিত হন।

ভদ্রাবতী জানান, মা দুর্গা আশীর্বাদের চাকরি হয়েছে  তাঁক। কয়েক বছর আগে পুজোর সময় ট্র্যাফিকের দায়িত্ব সামলানোর জন্য কিছু সংখ্যক ছেলেমেয়েকে নেওয়া হয়েছিল চুক্তির ভিত্তিতে। সেই কাজেই নিজের দক্ষতা দেখিয়ে নজর কাড়েন ভদ্রাবতী। পরবর্তীতে জেলা ট্র্যাফিকের পক্ষ থেকে তাঁকে মধ্যমগ্রাম, সোদপুর-সহ ব্যস্ত চৌমাথা এলাকাতেও ট্রাফিকের দায়িত্ব সামলানোর কাজ দেওয়া হয়।

ভদ্রাবতী কিন্তু সকলের সঙ্গেই মিষ্টিভাষী। অনেক সময়েই দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করেন পথচারীদের।

রুদ্র নারায়ণ রায়