শর্মিষ্ঠা বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরুলিয়া : ইতিহাসের স্মৃতিতে ঘেরা জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া জেলা। এই জেলায় সর্বত্রই ঐতিহ্যের সম্ভার। আর এই জঙ্গলমহলের ঐতিহাসিক একটি জায়গা হল রাকাব জঙ্গল। এক কালে পঞ্চকোট রাজার রাজধানী ছিল এই রাকাবের গভীর জঙ্গলে। তিনদিকে নদীর মাঝে গভীর অরণ্যে ঘেরা এই রাজধানীর নাম ছিল কেশরগড়। গা ছমছমে পরিবেশ এই গভীর জঙ্গলে। রয়েছে বন্য জন্তুদের আনাগোনা। ১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে পঞ্চকোট রাজা ভারতশেখর এই জঙ্গলে মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দুর্গাপুজোর সূচনা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগড় থেকে রাজধানীর স্থানান্তরিত হয় বর্তমান পুরুলিয়ার কাশীপুরে।
কাশীপুর রাজবাড়িতে আজও ধূমধামের সঙ্গে পূজিত হন মা দুর্গা। তা বলে পুজো বন্ধ হয়নি কেশরগড়ে। রাজার ফেলে আসা কেশরগড়ে সেই রাজধানীর জঙ্গলে মায়ের পুজো হত বিগ্রহহীন মন্দিরে। দীর্ঘ প্রায় ১৯২ বছর ধরে এই ভাবেই বিগ্ৰহহীন মন্দিরে পূজিত হতেন মা দুর্গা। তবে বর্তমান রাজ পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন কেশরগড়ের রাকাব জঙ্গলের পুরানো মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই মতোই ১৯২ বছর পর এই রাকাব জঙ্গলে মায়ের মন্দিরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হল।
ধুমধাম ও যাগযজ্ঞের সঙ্গে এই পুজোর সূচনা হয়ে গিয়েছে ইতিপূর্বে। এ বিষয়ে রাজ পরিবারের সদস্য বীরেন্দ্র সিংহদেও বলেন , তাদের খুবই ভাল লাগছে বিগ্ৰহ প্রতিষ্ঠা হয়ে এই পুজো শুরু হওয়ার জন্য। এতদিন পর্যন্ত বিগ্ৰহহীন মা-এর পুজো হত। এ বিষয়ে রাজ পরিবারের সদস্য ভগবতী প্রসাদ সিংহ দেও বলেন , ‘‘দীর্ঘ এতগুলো বছর পর রাজ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই রাকাব জঙ্গলে মিলিত হলাম। এখানে যাঁরা দায়িত্বে ছিলেন তাঁদের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল রাকাব জঙ্গলে বিগ্রহ পুজো হবে। সেই কথা মেনেই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি।’’
আরও পড়ুন : একই উঠানে হয় সাত দুর্গা প্রতিমার পুজো, আধুনিকতার জৌলুসেও উজ্জ্বল সাবেকিয়ানা
জঙ্গলমহলের গভীর জঙ্গল হল রাকাব জঙ্গল। এই জঙ্গলে রাতের বেলায় শোনা যায় বন্য জন্তুদের আওয়াজ। অনেকেই জঙ্গলের মজা নিতে এই রাকাবে আসেন। কিন্তু আশেপাশে সেভাবে জনবসতি গড়ে না ওঠার কারণে জঙ্গলের সামনে অংশটুকু ঘুরে ফিরে যান সকলে। আর এই রাকাব জঙ্গলে এবার মা দুর্গার বিগ্রহ পূজিত হবে আনন্দে আত্মহারা জঙ্গলমহলবাসী।