পুলকিত শুক্লা, হরিদ্বার: দেবভূমি উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে গঙ্গা ক্যানাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার জেরে হর কি পৌরি এবং ভিআইপি ঘাটে প্রবাহিত গঙ্গার স্রোতও একপ্রকার শুকিয়ে গিয়েছে। যার জেরে বদলে গিয়েছে গোটা দৃশ্যই। কারণ গঙ্গার স্রোত শুকিয়ে যাওয়ার ফলে গঙ্গার তলদেশও দৃশ্যমান। সেখানেই দেখা মিলল এক আশ্চর্য জিনিসের। যা দেখে তাজ্জব বনে গিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরাও।
কিন্তু কী এমন দেখা গেল! আসলে ভিআইপি ঘাটের কাছে একেবারে গঙ্গার পাদদেশে দেখা গেল রেললাইনের মতো লোহার তৈরি লাইন। ফলে আশপাশের মানুষের কৌতূহলও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁদের মনে আপাতত একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, গঙ্গার তলদেশে এই রেললাইন কবে পাতা হল। কিংবা এখানে কি কখনও ট্রেন দৌড়াত।
বিষয়টা আসলে কী, সেটাই দেখে নেওয়া যাক। আসলে হরিদ্বারের হর কি পৌরির কাছে গঙ্গার জলের ঘাটতির কারণে গোটা ঘাটই শুকিয়ে গিয়েছে। এমনকী তলদেশের সমস্ত কিছুই দৃশ্যমান। সেখানে দেখে যাচ্ছে রেললাইনের মতো কিছু জিনিসের। এবার রেললাইনের মতো এই ট্র্যাক হরিদ্বার রেলস্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে। ফলে মানুষের মনে জোরালো হচ্ছে সন্দেহ।
অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এই রেললাইনটির ছবি এবং ভিডিও ভাগ করে নিয়েছেন। কেউ কেউ বলছেন যে, এর আগে ওই লাইন দিয়ে ছোট ছোট ট্রেন দৌড়াত। আবার অনেকেই দাবি করছেন যে, মূলত জলের উপর ছোট ছোট যানবাহন চালানোর জন্য এই রেললাইন ব্যবহার করা হত।
হরিদ্বারের প্রবীণ বিশেষজ্ঞ আদেশ ত্যাগী বলেন যে, ১৮৫০ সাল নাগাদ গঙ্গা ক্যানাল নির্মাণের সময় হাতে ঠেলা গাড়ির জন্য ওই ট্র্যাক ব্যবহার করা হত। মূলত এই হাতে ঠেলা গাড়িতে চাপিয়েই সেই সময় আনা হত ওই ক্যানাল নির্মাণের মালমশলা এবং সরঞ্জাম। ওই বাঁধের নির্মাণ শেষ হওয়ার পরে ভীমগোড়া ব্যারাজ থেকে ড্যাম কোঠি পর্যন্ত পরিদর্শনের জন্য এই হাতে ঠেলা গাড়িগুলিই ব্যবহার করতেন ব্রিটিশ অফিসাররা।
বিশেষজ্ঞ ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সঞ্জয় মহেশ্বরী বলেন যে, লর্ড ডালহৌসির প্রধান প্রজেক্ট ছিল গঙ্গা ক্যানাল। তা তৈরি হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার কোটলের তত্ত্বাবধানে। ব্রিটিশ আমলে একাধিক বড় বড় নির্মাণকাজ হয়েছিল। যা আধুনিক ভারতের রূপায়ণে বড়সড় ভূমিকা পালন করেছিল। ইতিহাসবিদদের দাবি, রুরকি কালিয়ারের কাছে ভারতের প্রথম রেলওয়ে লাইন পাতা হয়েছিল। যদিও এটা প্রথম রেলওয়ে লাইন কি না, সেটা সঠিক ভাবে জানা যায়নি।
প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল যে, রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রতি বছর গঙ্গা ক্যানাল বন্ধ রাখে উত্তরপ্রদেশ সেচ দফতর। যার জেরে পাল্টে গিয়েছে গোটা হরিদ্বারের চিত্রটাই। গঙ্গার জল শুকিয়ে যাওয়ায় গঙ্গার পাদদেশে এই লাইনগুলি দেখা যাচ্ছে। যা ব্রিটিশ আমলের প্রযুক্তির অন্যতম বড় দৃষ্টান্ত।