অনন্ত মহারাজের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক ঘিরে তুমুল জল্পনা৷

Mamata Banerjee Anant Maharaj meeting: মমতার সঙ্গে হঠাৎ বৈঠক, তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন? জবাব দিলেন অনন্ত মহারাজ

শুভঙ্কর রায়, কোচবিহার: তিনি বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ৷ তবে লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল অনন্ত মহারাজের৷ শেষ পর্যন্ত এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনন্ত মহারাজের বৈঠকের পর বিজেপি সাংসদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা তুঙ্গে৷ মমতা এবং অনন্ত মহারাজের বৈঠকের পর উত্তরবঙ্গে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ দেখছেন অনেকেই৷

যদিও অনন্ত মহারাজ নিজে এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দাবি করেছেন, তিনি তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন না৷ তবে বিজেপি রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের আচরণেও যে তিনি ক্ষুব্ধ, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ৷

আরও পড়ুন: এবারেই শেষ, ভোটের লড়াইয়ে আর নয়! টানা চারবার জিতেও ঘোষণা করে দিলেন তৃণমূল সাংসদ

উত্তরবঙ্গে নিজেদের পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে লোকসভা নির্বাচনের আগে অনন্ত মহারাজকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছিল বিজেপি৷ কিন্তু সাংসদ করলেও অনন্ত মহারাজের দাবি মতো গ্রেটার কোচবিহারকে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার৷ এর পর থেকেই অনন্ত মহারাজের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের দূরত্ব বাড়তে থাকে৷ যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের সঙ্গে ভোট প্রচারের মঞ্চে দেখা গিয়েছিল কোচবিহারের এই প্রভাবশালী নেতাকে৷

কিন্তু ভোটের ফল বেরোতে দেখা যায়, কোচবিহার হাতছাড়া হয়েছে বিজেপির৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীশিথ প্রামাণিককে হারিয়ে ওই কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী জগদীশ বাসুনিয়া৷ কোচবিহারে তৃণমূলের জয়ের পিছনে অনন্ত মহারাজের হাত রয়েছে বলে বিজেপি জেলা নেতৃত্বের একাংশ অভিযোগ তুলতে থাকে৷ উত্তরবঙ্গে ওই একটি মাত্র আসনেই জয়ী হয় তৃণমূল৷

এই পরিস্থিতিতে এ দিন আচমকা মুখ্যমন্ত্রী অনন্ত মহারাজের বাড়ি গিয়ে তাঁর সঙ্গে বৈঠক করায় রাজনৈতিক মহলে জল্পনা বাড়ে৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বিজেপির রাজ্য এবং জেলা নেতৃত্বের উপরেও ক্ষোভ উগরে দেন অনন্ত মহারাজ৷ তিনি বলেন, ‘আমি যে বিজেপির সাংসদ, আমাকে তো এখানকার বিজেপি নেতারা মানেনই না৷ আমাকে কোচবিহারের বিজেপি অফিসে দেখেছেন কোনওদিন? আমাকে কোনও বৈঠকে ডাকা হয় না৷ এখানকার বিজেপি নেতারা আমাকে সম্মান দিতে জানেন না৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহরা অবশ্য আমাকে প্রাপ্য সম্মান দিয়েছেন৷’ যদিও তিনি তৃণমূলে যাচ্ছেন কি না প্রশ্ন করা হলে অনন্ত মহারাজ পাল্টা বলেন, ‘আমার কি মতিভ্রম হয়েছে না কি?’

আমি কারও সঙ্গে যোগাযোগ করিনি৷ এটা সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎ ছিল, উনি দেখা করতে চাইলে আমি কি আপত্তি করতে পারি? আজ সকালেই আমি জানতে পেরেছি যে আমার সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করতে চান৷ অনন্ত মহারাজের দাবি, এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কোনও রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি৷

যদিও অনন্ত মহারাজের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার৷ তিনি বলেন, ওনাকে বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ করেছে৷ আমি জানি না উনি তাঁর গুরুত্ব বুঝতে পারছেন কি না৷ আমি নিজে ওনার বাড়িতে গিয়ে ওনার সঙ্গে দেখা করেছি৷ এর পর রাজ্য বিজেপি বলতে উনি কাকে বোঝাতে চাইছেন, আমি বলতে পারব না৷

অনন্ত মহারাজ যাই বলুন না কেন, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি সাংসদের বৈঠককে নিছক সৌজন্যমূলক মানতে নারাজ৷ তাঁরা বলছেন, ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনে কোচবিহার জেলার ৯টি আসনকেই পাখির চোখ করেছে তৃণমূল৷ কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র দখলের পর সম্ভবত এখন থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন তৃণমূলনেত্রী৷