বানগড়ের ইতিহাস

Archaeological Site: মাটির নীচে ঘুমিয়ে কয়েকশো বছরের অতীত, ইতিহাসের টানে আসুন ঘরের কাছেই এই ঐতিহাসিক কেন্দ্রে

সুস্মিতা গোস্বামী, দক্ষিণ দিনাজপুর : দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের প্রধান ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্র বানগড়। খননকার্যের অভাবে আজও মাটির নীচে চাপা পড়ে রয়েছে প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো ইতিহাস। সেই সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে বসেছে এই প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন সমৃদ্ধ স্থান। পাল সেন যুগ-সহ বিভিন্ন স্থাপত্য রয়েছে সেখানে। এছাড়া ওই এলাকাকে কেন্দ্র করে প্রচলিত আছে অনেক গল্পই। এমনকী, সেই গল্পের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে শ্রীকৃষ্ণের নামও। ফলে এই এলাকা এক ধারে যেমন পবিত্র, তেমনই আবার অত্যন্ত জনপ্রিয়।

প্রসঙ্গত, জেলার ঐতিহাসিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম গঙ্গারামপুরের বানগড়। বানগড়ে এলেই পাল সেন যুগ-সহ বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য নজরে আসে। কথিত, বানরাজার নাম থেকেই এর নাম হয়েছে। তবে, জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বানগড়ে খননকার্য চালিয়ে সেখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার।

কথিত রয়েছে, ১৯৩৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে ডঃ কুঞ্জগোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে প্রথমবার খননকার্য শুরু হয়। তাতে উঠে আসে বেশ কিছু ধ্বংসাবশেষ। ১৯৬১ সালে পাটনা ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্বল্পকালীন খননকার্য হয়েছে। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তরফে ফের ২০০৯ সালে বানগড়ে তৃতীয় দফায় খননকার্য শুরু হয়। ২০১১ সাল পর্যন্ত চলে সেই খননকার্য। এতে উঠে আসে প্রাচীন ইতিহাসের বিস্ময়কর তথ্য। কিন্তু মাত্র ২ বছরের সেই খনন বন্ধ হয়ে য়ায়। মাটির নীচে চাপা পড়ে যায় অনেক অজানা ইতিহাস। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বানগড়ে খননকার্য না করা এবং রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে জায়গা জমি সব দখল হয়ে যাচ্ছে। রাতের অন্ধকারে চুরি হচ্ছে মাটি। অবিলম্বে প্রশাসন এবিষয়ে সদর্থক ভূমিকা না নিলে পরে আগামী দিনে বিলীন হয়ে যাবে বানগড়ের ইতিহাস।

আরও পড়ুন : আগামী বছর রথযাত্রা উৎসব কবে? তারিখ ও দিনক্ষণ জানলে মুখে আসবে হাসি, মন ভরে উঠবে আনন্দে

এ বিষয়ে জেলার ইতিহাস গবেষক ও ইতিহাসবিদরা জানান, “বানগড় এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। এখানে কুষাণ, শুঙ্গ, মৌর্য, গুপ্ত, পাল এবং মুসলিম আমল-সহ সাতটি স্তর খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ জরুরি। পাশাপাশি এখানে আরও গবেষণার ফলে ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য উঠে আসবে। এবং এখানে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠলে রাজ্য এবং দেশের মানুষ, এক‌ই স্থানে বিভিন্ন যুগের ইতিহাস জানতে ছুটে আসবে।”

সরকারি উদাসীনতার ফলে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ঐতিহ্যশালী এই বানগড় নষ্ট হতে বসেছে। জায়গা দখল করে চলছে চাষবাস। অবশেষে বানগড়ে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলতে ভারতীয় প্রত্নতত্ব বিভাগের প্রায় তিন কোটি টাকা অনুমোদনে আশার আলো দেখছেন জেলার ইতিহাসবিদ, ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ। ফলে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বানগড় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠলে রাজস্ব পাবে সরকার। উন্নত হবে সীমান্তবর্তী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অর্থনীতি।