মুর্শিদাবাদ: বীরভূম জেলার লাভপুর থানার শীতলগ্রাম থেকে মুর্শিদাবাদ৷ জেলার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেরায় ওঁরা৷ নানা রকম ছড়া বলে মানুষের মনোরঞ্জন করার চেষ্টায় প্রাণপাত করে। কেও পেশায় চাষী, কেও বা দিন মজুর। তাঁরাই সাজেন সুন্দরী কেও বা রক্ষস ও রাক্ষসী৷ আবার রাজা-রানি৷
কিছুটা অর্থ উপার্জন করতেই গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় ছুটছেন বহুরুপীরা। বর্তমান সময়ে ‘বহুরুপী’ সিনেমা চর্চার শেষ নেই৷ চারিদিকে সারা ফেলে দিয়েছে। এই কলকাতা শহরে তাঁকে নিয়ে নানা বৌদ্ধিক আলোচনা চলছে৷ তবে বাস্তবে বহুরুপীদের মহলে আজও দরিদ্রের করুণ রাগ বাজে৷
ওঁরা রং মাখেন। দুনিয়া দেখে কত রঙ্গ। রং না মাখলে যে পেট চলবে না। তাই রঙের সঙ্গে গ্রামের বন্ধুত্ব অনেকদিনের। বর্তমানে সনাতন বহুরূপী সাজের পাশাপাশি এসেছে নানা পৌরাণিক, আধুনিক ও সামাজিক অনুষঙ্গও।
ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এগিয়ে এসেছেন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। লাভপুরের শুভ বাজিগড়, বীরভূমের এই পেশার সঙ্গে যুক্ত নিয়মিত বহুরূপী সেজে অনুষ্ঠান করেন তাঁরা। অনুষ্ঠান করেন তাঁদের মেয়েরাও। কিন্তু বহুরুপীসিনেমা হলেও তাঁদের জীবন এখনও যে তিমিরে থাকার সেই তিমিরেই আছেন।
বহুরূপী খুব প্রাচীন জীবিকা। তবে কত প্রাচীন তা কেউ বলতে পারে না। অবশ্যই বিচিত্র জীবিকা। ইতিহাসবিদেরা বলেন, আদিম মানুষরা পশু শিকারের সময় নিজেদের দেহ মৃত পশুর চামড়া, নখ, দাঁত ইত্যাদি দিয়ে ঢেকে নিত। তাতে পশুরা তাদের মানুষ বলে চিনতে পারত না। এই ঘটনাকে আমরা ‘ছদ্মবেশ’ বলতে পারি। সারাদেশেই ছড়িয়ে আছেন এই বহুরূপীরা।
এই রাজ্যের বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলি জেলায় আছেন বেশ কয়েকজন। বীরভূম থেকে মুর্শিদাবাদের খড়গ্রাম, কান্দি সহ বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে তাঁরা কলা কুশলী দেখান, কোনও রকমে টিকিয়ে রেখেছেন তাঁদের এই পেশাকে। একটু হলেও গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে মানুষকে মনোরঞ্জন দেন।
যা অর্থ পান তা দিয়েই চলে তাঁদের সংসার। তবে বর্তমানে অনেকেই মুখ ফিরিয়েছে এই পেশা থেকে৷ আক্ষেপের সুর তাদের গলায়।
কৌশিক অধিকারী