দু'জনের মৃত্যুতে কান্নার রোল নেমে এসেছে গোটা পরিবার জুড়ে 

Bangla News: বাস্তবের অমরসঙ্গী! কোনওদিন আলাদা থাকেননি, মৃত্যুও পারল না! ৩ মিনিটের ব্যবধানে মৃত স্বামী-স্ত্রী

মুর্শিদাবাদ: একেই যেন বলে সাতজন্মের সাথী। একে অপরের পরিপূরক। তাই চার হাত এক হওয়ার পর বিদায় নেওয়ার সময়েও দু’জনের একসঙ্গে পরপারে গেলেন। স্বামীর মৃত্যুশোক সামলাতে পারলেন না স্ত্রী। তাই স্বামীর মৃত্যুর তিন মিনিটের মাথায় বুকে মাথা রেখে মৃত্যু হল স্ত্রীর।

গতকাল রাতের ওই ঘটনা মুর্শিদাবাদ জেলা ভরতপুর থানার ভোলতা গ্রামের। মৃতদের নাম স্বামী শঙ্কর মণ্ডল (৮৫) ও স্ত্রী নিয়তি মণ্ডল (৬৮)। এই ঘটনায় গ্রামের সকলেই আশ্চর্য ও অবাক হচ্ছেন।

মৃত দম্পত্তির এক ছেলে ও দুই মেয়ের বিয়ে অনেক আগেই হয়েছে। এখন তাঁদের ভরা সংসার। নাতি নাতনিও রয়েছে। এই চাষি পরিবারের সঙ্গে গ্রামের সকলেরই সুসম্পর্ক রয়েছে। গ্রামের যুবক থেকে মৃতদের ছোটরা তাঁদের দাদু ও দিদিমা বলেই ডাকত।

আরও পড়ুন: ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষাগুলিতে পাশ করা কঠিন, তবে চাকরি পেলেই বিপুল বেতন! জানুন

মৃতদের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় পাঁচ দশক আগে ওই দম্পত্তির বিবাহ হয়েছিল। বিবাহ পরবর্তীতে তাঁদের দুই মেয়ে পুতুল ও বুড়ির অনেক আগেই বিয়ে হয়েছে। একমাত্র ছেলে অনন্ত মণ্ডলেরও স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে রয়েছে। সকলেই বেশ হেসে-খেলে সময় কাটাতেন। তবে বৃদ্ধ শঙ্করবাবু দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ছিল তাঁর।

কয়েকদিন আগে তাঁকে ভরতপুর গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনাও হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। প্রায় ছয়দিন শয্যাশায়ী অবস্থায় কাটানোর পর গতকাল রাত সাড়ে আটটা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পরেই পরিবারে কান্নার রোল উঠে। স্ত্রী স্বামীর বুকে মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে ফেলেন। কিন্তু তিন মিনিটের মাথায় তিনি চুপচাপ হয়ে পড়লেন। তা দেখে মৃতের পরিবার ও প্রতিবেশিরা তাঁকে ডাকাডাকি করতেই নিথর দেহ হেলে স্বামীর দেহের পাশে পড়ে গেল।

আরও পড়ুন: আপনি কি দাঁড়িয়ে জল খান? কী কী বিপদ ডেকে আনছেন শরীরে জানলে চমকে উঠবেন!

গ্রামের এক চিকিৎসক নাড়ি দেখে বললেন স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীরও মৃত্যু হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুশোক বোধহয় সামলাতে না পেরে স্ত্রীও মারা গিয়েছেন। এরপর সেখানে হাজির সকলেই কিছুটা সময় চুপ হয়ে পড়লেন। এই ঘটনায় গ্রামজুড়ে হুলস্থুল পড়ে যায়। ছোট বড় সকলেই বাড়িতে ভিড় জমান। মর্মান্তিক ঘটনায় গ্রামের সকলেই আশ্চর্য্য হয়ে পড়েন।

প্রতিবেশী সাধনা মণ্ডল বলেন, দুইজনের মধ্যে এত মিল ছিল যে বলে বোঝান যাবে না। একসঙ্গে খাওয়া থাকা থেকে মাঠে যাওয়া। মন্দিরে গেলেও দুইজনে একসঙ্গে যেতেন। এমনকী ওদের গরুটি মাঠে চড়াতে নিয়ে গেলেও একসঙ্গে দুইজনে যেতেন। একই খাবার দুইজনে ভাগ করে খেতেন। বাড়িতে থাকার সময় দুইজনে খুব একটা দূরে বসতেন না। তাই মৃত্যুর সময়েও যেন ওরা ছাপ রেখে গেলেন।

মৃত্যুর পর সকালে গ্রামের মানুষ দুইজনের দেহ পাশাপাশি রেখে শ্মশানের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। দুটি দেহ সাটুইগ্রামের শ্মশানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দু’জনের দেহ পাশাপাশি রেখেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। মৃতের ছেলে অনন্ত বলেন, জন্মের পর থেকে বাবা ও মাকে কোনওদিন আলাদা থাকতে দেখিনি। সব কিছুতেই দুইজনের মতামত একই থাকত। যে কোন খাবার দুইজনে ভাগ করে খেতেন। তাই মৃত্যুর বেলাতেও ওরা যেন আলাদা হতে পারলেন না।

কৌশিক অধিকারী