বাঁকুড়া: ৩০০-৩৫০ বছরের পুরনো সূর্যবংশীয় রথযাত্রা এবং মেলা। রয়েছে বিরাট আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্য। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসতে চান একবার দেখার জন্য। একসময় একমাস ধরে চলত এই মেলা, যা বর্তমানে দাঁড়িয়েছে আট দিনব্যাপী চলে। তবে মেলায় আসতে গেলে আপনাকে পার করতে হবে নদী-নালা, খাল বিল, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসতে হবে মেলায়।
বাঁকুড়ার অন্যতম ঐতিহ্যবাহী, তপোবন গ্রামের রামচন্দ্রের রথযাত্রা মেলা। আট দিনব্যাপী এই মেলা, দুর্দান্ত নজরকারা একটি মেলা। যেখানে শ্রীরামচন্দ্রের মন্দিরে করা হয় পুজো। টানা হয় ঐতিহাসিক, আধ্যাত্মিক গুরুত্ব থাকা একটি রথকে। সোনাতাপোল, শানতোর, নতুনগ্রাম, মালাতোর এবং বালিয়াড়া এই পাঁচটি গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে মেলাকে করতে সহায়তা করেন।
কথিত আছে বর্ষার সময়ে দ্বারকেশ্বর নদে ভেসে আসত নিমকাঠ। সেই নিমকাঠ তুলে নিয়ে এসে তৈরি করা হত গ্রামের রথ। এই প্রথা বহু শত বছর প্রাচীন। তারপরে একটি পিতলের রথ তৈরি করা হয়। সেই রথ, টুকরো টুকরো ভাবে চুরি হয়ে যায়। গ্রামবাসীদের প্রচেষ্টায় রথের কয়েকটি অংশ ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়। তারপর সেই অংশগুলি ব্যবহার করে আবার পুনরায় তৈরি করা হয় রথ। সেই রথ এখনও ব্যবহার করা হয়ে থাকে এই মেলায়। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, রামচন্দ্র বানরসেনাদের নিয়ে এই গ্রামে বিশ্রাম করেছিলেন, মুনি ঋষিরা করেছিলেন সেবা। সে কারণে গ্রামবাসীরাও এখনও পর্যন্ত সেই সেবার ধারা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাঁকুড়ার আনাচে-কানাচে লুকানো রয়েছে কত গল্প এবং কাহিনি। গ্রাম বাংলার মেলা যেন মিলনের আরেক নাম। এই মেলাগুলির হাত ধরে গ্রামের মানুষদের বন্ধন যেন আরওদৃঢ় হয়। রামচন্দ্রের রথের মেলা তার মধ্যেই অন্যতম।