কলকাতা: কোনওভাবেই আর শেষরক্ষা হল না৷ সাতসকালেই আবারও এক দুঃসংবাদ৷ প্রয়াত হলেন বামশাসনের দ্বিতীয় এবং শেষ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ বৃহস্পতিবার সকালে পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়িতে ৮.২০ নাগাদ প্রয়াত হন তিনি। বুদ্ধদেবের মৃত্যুর খবর জানান তাঁর সন্তান সুচেতন ভট্টাচার্য। মৃত্যুকালে বুদ্ধদেবের বয়স হয়েছিল ৮০ বছর৷ তাঁর মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া পড়েছে রাজনৈতিক থেকে বিনোদন জগতে৷
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মৃত্যুতে একাধিক স্বনামধন্য ব্যক্তিরা শোকপ্রকাশ করেছেন৷ পাশাপাশি টলিউডের তারকা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও শোকে ভেঙে পড়েছেন৷ অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ বলেছেন৷ কথা বলার অবস্থায় নেই রূপা, কান্নায় গলা বুজে এসেছে অভিনেত্রীর৷ উনি অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন, অনেকদিন ধরেই দেখা করার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তা আর হয়নি৷ উনি আমাদের কাজে খুব সাহায্য করতেন৷ নন্দনে যখন কাজ করতাম, তখন মাঝেমধ্যে দেখা হতো, কাজেরও প্রশংসা করতেন৷ ওনার আত্মার শান্তি কামনা করেছেন৷
আরও পড়ুন: দু কামরার ফ্ল্যাট, অ্যাম্বাসাডর আর ধুতি- পাঞ্জাবি৷ বুদ্ধদেব বরাবরই ব্যতিক্রমী
অভিনেতা-পরিচালক অরিন্দম শীলের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করে অরিন্দম শীল বলেছেন, আমার প্রচন্ড মন খারাপ হচ্ছে বুদ্ধদার প্রয়াণের খবরটা পেয়ে৷ দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেনও৷ বুদ্ধদা অসম্ভব একজন ভাল মানুষ ছিলেন৷ এবং অত্যন্ত সৌজন্যবোধ ছিলেন৷ বহুদিন আগে আমার একটা লেখা ছিল- ‘দ্য শেষ ভদ্রলোক বাঙালি বাবু’- তিনি একদম সেটাই৷ এরকম সংস্কৃতিপূর্ণ, সৌহাদ্যপূর্ণ, এত সুন্দর একটা মানুষ তিনি যা বলে শেষ করা যাবে না৷ অনেক স্মৃতি ভেসে আসছে৷ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের সময়, ওনার সঙ্গে চায়ের আড্ডা, মৃণাল সেন, রূপো গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধ দা আমরা সবাই গল্প করছি, বুদ্ধদার কবিতা পড়ে শোনানো,টেকনিশিয়ান স্টুডিওতে এসে মুড়ি তেলেভাজা খাওয়া৷ এগুলো খুব মনে পড়ছে৷ বুদ্ধদার চলে যাওয়া মানে একটা জমানা চলে যাওয়া৷ এই মানুষগুলো আর ফিরে আসবে না৷ এবং পশ্চিমবঙ্গের জন্য ওনার অবদান অনস্বীকার্য৷
আরও পড়ুন: ‘আমার বিয়েতে এসেছিলেন, আজ খুব মনে পড়ছে সেদিনটা…’, বুদ্ধবাবুর প্রয়াণে স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন ঋতুপর্ণা
পরিচালক রাজ চক্রবর্তী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকজ্ঞাপণ করে লিখেছেন- ‘আজ একটি দুঃখের দিন; শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্যারের মৃত্যু সত্যিই হতাশাজনক। তার আত্মার শান্তি কামনা করি’।
Today is a sad day; the demise of Shri #BuddhadebBhattacharya sir is truly disheartening. May his soul rest in peace.
— Raj chakrabarty (@iamrajchoco) August 8, 2024
গত ২৯ জুলাই আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হয়েছিল দক্ষিণ কলকাতার আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। গত ৯ অগাস্ট হাসপাতাল থেকে ফিরেছিলেন বুদ্ধদেব। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। এরপর ফুসফুস এবং শ্বাসনালিতে মারাত্মক রকমের সংক্রমণও ধরা পড়ে তাঁর। ফের আচমকা আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। দীর্ঘ দিন ধরেই গুরুতর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা (সিওপিডি)-তে ভুগছিলেন। গতকাল রক্তপরীক্ষাও করা হয়, রিপোর্টে সেরকরম কিছু পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে স্যাচুরেশন খুব দ্রুত কমে যাওয়ায় মীরাদেবী তাঁর পারিবারিক চিকিৎসক সোমনাথ মাইতিকে জানান। অবশেষে আর শেষরক্ষা হল না, সকলকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বুদ্ধবাবু৷