তমলুকে হেরেছেন দেবাংশু, জয়ী বিজেপির অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

Debangshu Bhattacharya TMC: তমলুকে অভিজিতের কাছে হারলেন কেন? ‘দুই’ কারণ স্পষ্ট করে চাঞ্চল্যকর দাবি দেবাংশুর

কলকাতা: সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের নির্বাচনী অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলেন তমলুক কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য। মনে করা হচ্ছে, গতকাল কালীঘাটে দলীয় বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, দেবাংশুকে আরও সক্রিয় থাকার কথা বলেছেন, নির্বাচনী পর্বে। সেটাই এদিন কার্যত নিজের অভিজ্ঞতায় তুলে ধরেছেন দেবাংশু। হেরে যাওয়ার কারণে বেইমানি আর অর্থের কথা উল্লেখ করেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য।

এদিন তিনি নিজের অভিজ্ঞতায় লিখেছেন, সকাল ৬ টায় ঘুম থেকে উঠে টয়লেট সেরে, স্নান করে, এক বাটি ছাতুর সরবত খেয়ে রোজ বেরিয়ে পড়তাম সকাল ৮–টার মধ্যে। প্রবল রৌদ্রে দুপুর ১ টা পর্যন্ত প্রচার চলত। তারপর ঠিকানায় ফিরে একটু গা ধুয়ে, দুপুরের খাওয়া সেরে পুনরায় ৩ টে নাগাদ রওনা দিতাম। চলত রাত্রি ৯-টা পর্যন্ত.. কখনও কখনও সেটা সাড়ে দশটাও বাজত। রাতে নিমতৌড়ির বাড়িতে ফিরে খাবার খেয়ে শুরু হত বিভিন্ন নেতা, কর্মীদের সাথে বাড়ির অফিসে অভ্যন্তরীণ মিটিং , কখনও কখনও সেসব মিটিং চলেছে রাত্রি ২-টো পর্যন্তও..। মিটিং শেষে ঘুমিয়ে আবার পরের দিন সকালে ৬ টায় ওঠা..। তমলুকের দলীয় কর্মীরা, যারা সেই বাড়িতে প্রায়শই আসতেন তারা সকলেই এই রুটিন জানেন।’

আরও পড়ুন: মুখের ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বেড়েছে, জিভে-গলায় এমন দাগ থাকলে সাবধান! জানুন চিকিৎসকের কথা

দেবাংশুর দাবি, ‘পরিশ্রমে নিজের ১০১% দিয়েছি। যা করতে পারি তার বেশি করেছি। আমার টিম, আই প্যাকের কয়েকজন এবং পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় উন্মাদের মত পরিশ্রম করেছে। সাথে প্রাণপাত করে দিয়েছেন বুথ স্তরের দলীয় কর্মীরা..’

তাঁর সংযোজন, ‘নিজেদের সবটা দেওয়ার পরেও বেঈমানি আর অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি। এত কোটি কোটি টাকার বিরুদ্ধে আমাদের স্বল্প ক্ষমতার লড়াই ব্যর্থ হয়েছে। গোটা জেলায় নেতা-কর্মী নয়, ভোট করিয়েছে কেবল টাকা। সাথে সাথে ছিল নন্দীগ্রাম ও ময়নার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বিস্তৃত সন্ত্রাস; নির্বাচনের দিন তিনেক আগে থেকে বিরুলিয়া, বয়াল, ভেকুটিয়া, হরিপুর, গোকুলনগরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট দিতে না বেরোনোর হুমকি তথা ফতোয়া এবং সোনাচূড়া অঞ্চল জুড়ে ভোটের দিন দেদার ছাপ্পা। ময়নার বাকচা অঞ্চল এতটাই মুক্তাঞ্চল, তৃণমূল নাম উচ্চারিত হলেও মারধর এমনকি প্রাণহানিও সেখানে নতুন নয়। দলের ঝান্ডা বাঁধার লোক অন্ধি সেখানে নেই। তার উপর নির্বাচনের দিন দুয়েক আগেই সেই খুন; যাকে কেন্দ্রে করে গোটা নন্দীগ্রাম হয়ে উঠেছিল দুর্বৃত্তদের অবাধ বিচরণক্ষেত্র। সেই পরিস্থিতে সবটা এতটা একপেশে হয়ে গিয়েছিল, এক সময়ে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল এই নির্বাচন এখন লড়া, না লড়া সমান ব্যাপার। তবুও আমরা হাল ছাড়িনি! পরিস্থিতির সুযোগে আমার বিপরীতের প্রার্থী আধা বেলা প্রচার না করেও জিতে গিয়েছেন.. আর আমি পাগলের মত বুথ বুথ ঘুরেও জিততে পারিনি।’

আরও পড়ুন: সর্বভারতীয় মেডিক্যাল প্রবেশিকায় নজরকাড়া সাফল্য বাঙালির, বাংলার রূপায়ণের নম্বর শুনলে বিশ্বাস করতে পারবেন না!

দেবাংশু আরও বলেন, ‘নির্বাচনী ক্ষেত্রে যখন প্রথম পৌঁছলাম, সাংগঠনিক পরিস্থিতি দেখে চমকে গিয়েছিলাম! মনে হয়েছিল, হঠাৎ করে কোনও অগ্নিকুণ্ডে এসে পড়েছি বোধহয়.. আরও অনেক মানুষ চেনা, অনেক রকমারি অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে শেষ আড়াই মাস ভিমড়ি খেয়েছি প্রচুর, প্রকাশ্যে সবটা লিখতে কিংবা বলতে চাই না। মার্চে ওজন ছিল ৮৩ কিলো। যা আজ কমে ৭৭.. সৌজন্যে শেষ আড়াই মাস। এই ৬ কিলো ওজনের বিনিময়ে ৬ লক্ষ ৮৭ হাজার মানুষের ভালবাসা পেয়েছি, আশীর্বাদ পেয়েছি। সেটাই আমার কাছে এই নির্বাচনের নির্যাস.. আগামী দিনে এই রাজনৈতিক নদী পথ আমায় কোন মোহনায় নিয়ে গিয়ে ফেলবে জানিনা.. শুধু এটুকু জানি, আমার নৌকো খোয়া গেছে, কেবল নিজেকে ভাসিয়ে, বাঁচিয়ে রেখেছি এই অগাধ জলরাশির পৃষ্ঠ দেশে..।।’

আবীর ঘোষাল