পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতাল

East Medinipur News: তমলুকে বিরল রোগের অস্ত্রপ্রচার, জটিল রোগে প্রাণ ফিরে পেলেন গৃহবধূ

তমলুক: বিরল রোগের শিকার হয়েও জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এ যাত্রায় প্রাণ ফিরে পেলেন এক গৃহবধূ। আর এই বিরল রোগের জটিল অস্ত্রোপচার হল খাস তমলুকে। তাম্রলিপ্ত গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে সিএসএফ রাইনোরিয়া নামে বিরল রোগের সফল অস্ত্রোপচারে প্রাণ বাঁচল গৃহবধূর।

চিকিৎসকদের কথায়, ওই মহিলার নাক দিয়ে একরকম ফ্লুইড বেরিয়ে আসছিল সেটা আসলে সেরিব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড অর্থাৎ মাথার ঘিলুর খানিকটা অংশের রস! যা কিনা আগামী সময়ে বড় রকমের বিপত্তি তৈরি করতে পারত। এমনকি ওই মহিলার প্রাণেরও ঝুঁকি ছিল সেক্ষেত্রে। শেষমেশ চিকিৎসকদের তৎপরতায় বিরল রোগের সফল অস্ত্রোপচারে রক্ষা পেলেন ওই গৃহবধূ।

আরও পড়ুন: ১ ঘণ্টা হাঁটলে কত ‘ক্যালোরি’ বার্ন হয়…? ওজন কমাতে দৈনিক ‘কত’ কি.মি. হাঁটবেন? হিসেব জানা মাস্ট!

তমলুকের রাজনগর এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ দিপালী বর্মন, বয়স ৪৭। স্বামী সুকুমার বর্মনের সঙ্গেই মাছের ব্যবসা করে কোনওরকমে সংসার চালাতেন। বছর তিনেক আগে অসহ্য মাথার যন্ত্রণা শুরু হয় দিপালীদেবীর। আর তাতেই সেই মাছের ব্যবসা প্রায় লাটে ওঠে। এদিক ওদিক ঘুরে শেষে তমলুক মেডিক্যাল কলেজে এসে হাজির হন দিপালীদেবী। তাঁর দাবি, মাস ছয় আগে থেকেই নাক দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা। চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তাতেই সিএসএফ রাইনোরিয়া নামে এক বিরল রোগ ধরা পড়ে। চিকিৎসকদের পরামর্শ মত মেডিক্যাল কলেজেই শুরু হয় ওই মহিলার সফল অস্ত্রোপচারের যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা। প্রায় আড়াই ঘণ্টার চেষ্টায় নাকের ভিতর দিয়ে নল ঢুকিয়ে এনডোস্কপির মাধ্যমে মাথার খুলির ফুটো হয়ে যাওয়া অংশে অস্ত্রোপচার হয়।

মেডিকেল কলেজের ইএনটি বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসার ডা. সৌমিক সাহার নেতৃত্বে প্রায় চার সদস্যের চিকিৎসকদের একটি দল ওই মহিলার পায়ের একটি অংশের মাংসপিণ্ড কেটে তা অস্ত্রোপচার করতে সফল হয়েছেন বলে দাবি। বর্তমানে ওই মহিলার শারীরিক অবস্থাও অনেকটাই উন্নত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইএনটি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ডা. সৌমিক সাহা। তিনি বলেন, “এ ধরনের জটিল অস্ত্রপোচার পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তথা মেডিকেল কলেজে এই প্রথম।”

মেডিক্যাল কলেজের প্রিন্সিপাল শর্মিষ্ঠা মল্লিক জানান, “মেডিক্যাল কলেজের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নের পাশাপাশি রোগীদের পরিষেবা প্রদানে আমরা যথেষ্টই সফল। আগামিদিনেও যাতে তা সম্ভব হয় সেই চেষ্টাই করব।” প্রায় আড়াই ঘণ্টার অস্ত্রোপচার হয়। অস্ত্রোপচারে সাফল্য আসায় আশার আলো দেখছেন জেলার চিকিৎসকরা। খুশি রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও। স্বামী সুকুমার বর্মন বলেন, “মেডিকেল কলেজের ডাক্তারবাবুদের অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসায় স্ত্রী সুস্থ হতে পেরেছে তাতে আমরা খুশি।”

উল্লেখ্য, জেলা সদর শহর তমলুকের পাশাপাশি বিভিন্ন মহকুমা এলাকায় গজিয়ে উঠেছে একের পর এক নার্সিংহোম থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার। কিন্তু তারপরেও রোগীর পরিষেবা দেওয়া নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এমন পরিস্থিতিতে বড় শহরছাড়িয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের মত জেলায় জটিল অস্ত্রপোচার সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় কিছুটা হলেও যেন আশার আলো দেখছেন চিকিৎসক মহল।

সৈকত শী