কী দক্ষিণ, কী বা উত্তর, যেমন পূর্ব, তেমনই পশ্চিম- আমাদের এই দেশের প্রতি কোণে রান্নার সঙ্গে লঙ্কার গভীর যোগ। তার বৈচিত্র্যই বা কত! কাঁচা সবুজ লঙ্কা, একটু পেকে যাওয়া অথচ তরতাজা লাল লঙ্কা তো আছেই। কাঁচা লঙ্কার প্রসঙ্গ উঠলে নাগাল্যান্ডের খুব ঝাল একটু বড় লঙ্কার কথাও বাদ দেওয়া যায় না। শুকনো লঙ্কার বাহারও আবার প্রদেশভেদে দেখার মতো- কাশ্মীরি একটু কম ঝাল শুকনো লঙ্কা, গুন্টুর লঙ্কা বা অন্ধ্রপ্রদেশের ভীষণ ঝাল শুকনো লঙ্কা- তালিকা শেষ হতেই চাইবে না। কিন্তু হলুদ লঙ্কার কথা কি কেউ শুনেছেন?
রামপুরের হলুদ লঙ্কার ইতিহাস নবাবদের রান্নাঘরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এই লঙ্কা তার বিশেষ স্বাদ ও গন্ধের জন্য বিখ্যাত। নবাবদের বাবুর্চিরা এটিকে খাবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে ব্যবহার করতেন, যা খাবারের স্বাদ এবং সুগন্ধ উভয়ই বাড়িয়েছিল। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক রামপুরের হলুদ লঙ্কা কেন আলাদা জায়গা করে নিয়েছে দেশের রন্ধনশিল্পে। বলতে দ্বিধা নেই, এই লঙ্কা নবাবদের রান্নাঘরের সেরা রত্ন।
রামপুরের হলুদ লঙ্কা শুধু নবাবদের রান্নাঘরে মশলা হিসেবেই ব্যবহৃত হত না, এই লঙ্কা খাবারে বিশেষ সুগন্ধও জোগাত। এছাড়াও, এই লঙ্কা অনেকক্ষণ পদের সতেজতা বজায় রাখতে সহায়ক ছিল। যার কারণে নবাবদের খাবারগুলি সর্বদা তাজা এবং সুস্বাদু থাকত।
আজও নবাব পরিবারে বাবুর্চিরা রান্না করতে গেলে রামপুর থেকে হলুদ লঙ্কা নিয়ে যান। এই লঙ্কা তাঁদের কাছে শুধু একটি উপাদানই নয়, নবাববাড়ির আসল স্বাদেরও পরিচায়কও। ঐতিহ্যের অংশ হিসেবেই তাঁদের রান্নায় এই লঙ্কা ব্যবহার করা হয়।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রামপুরের হলুদ লঙ্কার ব্যবহার শুধু ঐতিহ্যবাহী খাবারেই সীমাবদ্ধ নেই। এখন এই লঙ্কা ফিউশন ও আধুনিক খাবারেও অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এর অনন্য স্বাদ এটিকে বিভিন্ন ধরনের খাবারের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলেছে।
রামপুরের হলুদ লঙ্কা শুধু একটি মশলা নয়, এটি এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। কেউ যখন এই লঙ্কার স্বাদ গ্রহণ করেন, এটি তাঁদের নবাবদের রান্নাঘর এবং তাঁদের বিস্ময়কর খাবারের ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। যা প্রায় শতাব্দী ধরে চলে আসছে।
এই বিষয়ে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, রামপুরের হলুদ লঙ্কা পুরো শহরকে বিখ্যাত করে তুলেছে। হলুদ লঙ্কার কথা যাঁরা জানেন, রামপুরের কথাও তাঁরা জানেন। হলুদ লঙ্কার স্বাদ একবার খেলেই যে মনে থেকে যায় চিরকাল!