উত্তর ২৪ পরগণা, পাঁচমিশালি Knowledge Story: ঝুপ করে গঙ্গায় নামছে প্লেন? নদীবক্ষে আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা! সাক্ষী বালি-দক্ষিণেশ্বর Gallery August 16, 2024 Bangla Digital Desk *ধরা যাক, দক্ষিণেশ্বরের গঙ্গার ঘাটে দাঁড়িয়ে আপনি। বালি ব্রিজের উপর দিয়ে, হঠাৎ দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের সামনে গঙ্গার বুকে একটা বিমান এসে নামতে দেখলেন। গতিবেগ কমতে কমতে কিছুটা দূরে গিয়ে, স্থির। চমকে উঠবেন তো? অবশ্য সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু, এ-দৃশ্য নাকি আজ থেকে সাত দশক আগেও ছিল স্বাভাবিক। প্রতীকী ছবি। *কবি ও স্বাধীন গবেষক তন্ময় ভট্টাচার্যের গবেষণায় উঠে এসেছে এই অচর্চিত ইতিহাসই। তন্ময় জানান, বাস্তবেই নাকি গঙ্গাবক্ষে চালু ছিল আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা। আর তারই সাক্ষী ছিল বালি, দক্ষিণেশ্বর। শুধু তাই নয়, সেই সময়ের নানা প্রামাণ্য নথিও জোগাড় করেছেন তিনি। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সেই ইতিহাসের কোনও চিহ্নই আজ অবশিষ্ট নেই বলেও জানা গিয়েছে। *প্রত্যহ একাধিক বিমান এসে নামত এখানে, উড়েও যেত দেশ-বিদেশে। বিমান হলেও তা ল্যান্ড প্লেনের মত নয়, অনেকটা সি প্লেন বা ফ্লায়িং বোটের মতো ছিল সেগুলি। তাই স্থল নয়, জলেই অবতরণ করত। তন্ময়ের মতে, বিগত শতকের বিশ ও তিরিশের দশকে বিশ্বজুড়েই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল সি-প্লেন, ব্যতিক্রম ছিল না কলকাতা তথা ভারতও। প্রতীকী ছবি। *সম্প্রতি ‘বাংলার কাব্য ও মানচিত্রে উত্তর চব্বিশ পরগনা ও হুগলি জেলার গঙ্গা-তীরবর্তী জনপদ’ শীর্ষক একটি বই প্রকাশিত হয় তন্ময়ের। সেই বই-সংক্রান্ত গবেষণার সূত্রেই বালিতে অবস্থিত এই সি-প্লেন বেসের সন্ধান পান তিনি। দেখা যায়, দমদম এয়ারড্রোমে নামত ল্যান্ডপ্লেন, আর হুগলি নদীতে, উইলিংডন ব্রিজের (বর্তমান বালি ব্রিজ) কাছে নামত সি প্লেন। তৎকালীন কলকাতা শহর তথা রাজ্যের একমাত্র আন্তর্জাতিক সি প্লেন বেস ছিল এটিই। প্রতীকী ছবি। *কলকাতার নিকটবর্তী উইলিংডন ব্রিজের ধারে, হাওড়া জেলার গঙ্গাপাড়ের উত্তরতম জনপদ, বালিকে নির্বাচন করা হয় সি প্লেন বেস হিসেবে। ইম্পিরিয়াল এয়ারওয়েজ-এর পক্ষ থেকে কলকাতা থেকে সিঙ্গাপুর হয়ে অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত এয়ার মেল সার্ভিসও শুরু হয়। *১৯৩৮ থেকে বিভিন্ন ফ্লায়িং বোট অবতরণ করে এই সি প্লেন বেসে। ফ্লায়িং বোটগুলি কলকাতার দিক থেকে এসে উইলিংডন ব্রিজ পেরিয়ে অবতরণ করত গঙ্গাবক্ষে দক্ষিণেশ্বর ও উত্তরপাড়ার মাঝামাঝি জায়গায়। সেখানেই ভেসে থাকত দীর্ঘক্ষণ। *তবে শুধু বিমান পরিষেবাই নয়, কয়েকটি বিমান-দুর্ঘটনাও ঘটেছিল এই বেসে। ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ায়, পালাবদল ঘটে বিমান পরিষেবাতেও। তবে বিশ্বযুদ্ধের সময়ও এই বেসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতীকী ছবি। *দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্রুত বদলাতে পারে পরিস্থিতি। বিশ্বজুড়ে সিপ্লেনের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে দ্রুত। ১৯৪৯ সালে নেওয়া হয় চরম সিদ্ধান্ত। প্রতীকী ছবি। *তন্ময় জানান, চালু হওয়ার ১১ বছরের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় বালি সি-প্লেন বেস। ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করা সি প্লেন বেসটি যেখানে ছিল তার গা ঘেঁসেই তৈরি হয়েছে আজকের নিবেদিতা সেতু। বর্তমানে সি-প্লেন বেস সংলগ্ন জায়গাটি একপ্রকার পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে। হারিয়েছে গর্বের সেই ইতিহাস। প্রতীকী ছবি।