কৃতি ছাত্রী চুমকি মন্ডল

Higher Secondary 2024: শহরের কাঁড়িকাঁড়ি সুবিধা পেয়েও কিছু হচ্ছে না? প্রত্যন্ত গ্রামে অভাবী এই মেয়েকে দেখুন, উচ্চ মাধ্যমিকের রেজাল্টে চমকে দিল

পশ্চিম মেদিনীপুর: স্যাঁতস্যাঁতে মাটির সামান্য ছিটেবেড়া বাড়ি। বাবা, মা, আর তার সংসার। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। তবে দু’চোখে স্বপ্ন অগাধ। সেবিকা হয়ে মানুষের সেবা করার পাশাপাশি সে চায়, তাদের পরিবারের আর্থিক উন্নতি এবং ছোট্ট একটি ঘর করে বাবা মার জন্য সুনির্দিষ্ট থাকার বন্দোবস্ত করার। নিত্যদিন চলে পারিবারিক অসচ্ছলতা এবং মেধার লড়াই। সাংসারিক অনটন, নানাবিধ চাপকে সহ্য করেও নিজের জেদ এবং অধ্যাবসায়ে সফলতা জুটেছে উচ্চমাধ্যমিকে। উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর পরিবারে খুশির হাওয়া থাকলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তায় সকলে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন ভাগবতচরণ হাইস্কুলের কৃতী ছাত্রী চুমকি মণ্ডল। কলা বিভাগে পড়াশোনা করে ৪৪৪ নম্বর পেয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছে সে। পারিবারিক অসচ্ছলতা বারংবার অন্তরায় হয়েছে তার পড়াশোনাতে। তবুও সে দমে যায়নি। নিজের জেদ এবং ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলেছে সে। বড় হয়ে ইচ্ছে নার্স হওয়ার। সেইমত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পর সরকারি ক্ষেত্রে পড়াশোনার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে।

আরও পড়ুনHS Exam Result 2024: মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও মেধাতালিকায় সায়ন্তন! নিউরোসায়েন্স নিয়ে গবেষণার ইচ্ছে ৫ম স্থানাধিকারীর

চুমকির বাবা কানাই মণ্ডল, সামান্য দিনমজুরের কাজ করে পড়াশোনা চালিয়ে রেখেছে চুমকির। যেটুকু টাকা রোজগার হয় তা দিয়ে চলে সংসার, চুমকির পড়াশুনোর খরচ। এসব করতে গিয়ে আর সাধের ঘর বানানো হয়নি। সামান্য মাটির ছিটেবেড়া বাড়িতে কোনওভাবেই কেটে যায় তিন জনের দিন। তবে কোনও দিন আর্থিক অসচ্ছলতা বুঝতে দেয়নি তার বাবা। সব সময় উৎসাহ এবং সামর্থ মত সহযোগিতা দিয়ে মেয়েকে এগিয়ে দিয়েছেন ভবিষ্যতের দিকে।

সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। উচ্চশিক্ষার জন্য প্রয়োজন অর্থ। একদিকে বাড়িতে মা, বাবা অন্যদিকে মাথায় উচ্চ শিক্ষার ভাবনা। পড়াশোনার ফাঁকে বাড়িতে নিত্য কাজও করতে হত চুমকিকে। কখনও রান্নার কাজে হাত লাগানো আবার কখনও বাড়ির অন্যান্য কাজ করতে হয়েছে তাকে। সেসব সামলে পড়াশোনা চালিয়ে রেখেছে সে। সময় মত পড়ে পেয়েছে সাফল্য। তবে মানুষের উপকারের লক্ষ্য নিয়ে নার্স হওয়ার ইচ্ছে তার। তারই সাফল্যে খুশি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা। আগামীতে উচ্চশিক্ষায় সর্বত সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষও।

আগামী দিনে উচ্চ শিক্ষায় কি বাধা হয়ে দাঁড়াবে অর্থ? নাকি সব সামলে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে চুমকি? সে প্রশ্ন এখন সকলের মধ্যে।

রঞ্জন চন্দ