সোনার টুকরো মেয়ে! মা ট্রেনের হকার, আন্তর্জাতিক স্তরে সোনা জয় বলাগড়ের প্রীতির

Hooghly News: সোনার টুকরো মেয়ে! মা ট্রেনের হকার, আন্তর্জাতিক স্তরে সোনা জয় বলাগড়ের প্রীতির

হুগলি: মা ট্রেনে হকারি করেন বাবা নেই। অভাবের সংসারের নুন আনতে পান্তা ফুরায়। টিনের চালের ঘর থেকেই নিজের সোনা জেতার স্বপ্ন সফল করেছে প্রীতি। মালয়েশিয়ায় আয়োজিত আন্তর্জাতিক খোখো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জয় করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে অষ্টাদশী এই তরুণী। বলাগড় ব্লকের গুপ্তিপাড়ার মিরডাঙ্গা সরকারি রেল কলোনির প্রীতি মন্ডলের সাফল্যের কাহিনি কোনও সিনেমার থেকে কম নয়।

টিনের চালের ছোট্ট একটু ঘরে থাকা দাপুটে মেয়েটার শখ ছিল খেলাধুলা করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা। কিন্তু ঘরে যে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় সেখানে হয়তো পড়াশোনা করা গেলেও খেলাধুলা করা বিলাসিতা। অভাবের সংসারে বাবা নেই। মা হাওড়া কাটোয়া লোকালে হকারি করে তার রোজগারেই চলে খাওয়াদাওয়া।

আরও পড়ুন:  নিজের হাতে বানালেন বিশ্বকাপের ট্রফি! কোহলি-রোহিত নয়, এই ক্রিকেটারকে উপহার দিতে চান রানাঘাটের মিস্ত্রি

১৩ বছর বয়স থেকেই খোখো খেলা শুরু করে প্রীতি, তার এই খেলার হাতেখড়ি হয় প্রশিক্ষক রাজীব চন্দ্রের কাছে। কিন্তু অভাবের সংসারে থেকে খেলার সরঞ্জাম কিনতে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে প্রীতি। তার এই সমস্যার কথা শুনতে পেয়ে তার খেলার সরঞ্জাম কিনে দিয়ে তার মনোবল বাড়িয়ে তোলে প্রশিক্ষক রাজীব চন্দ্র ।

প্রশিক্ষক রাজীব চন্দ্র বলেন, ছোট থেকেই ওর মধ্যে প্রতিভা দেখেছি। অনুশীলনে ফাঁকি দিতে কখনও দেখিনি। দেখেছি ওর মধ্যে অদম্য জেদ কিছু একটা করতে হবে, আজ হয়তো সেই জেদই ওকে এত দূর পৌঁছে দিয়েছে। যে মাঠে প্রীতি অনুশীলন করে সেই মাঠে নেই আলোর ব্যবস্থা , নেই শৌচালয়। বিকাল ৫টার মধ্যে অনুশীলন করে বাড়ি ফিরত। এত সমস্যা থাকতেও একফোঁটাও মনোবল নষ্ট হয়নি তার মন থেকে।

মায়ের আক্ষেপ- অভাবের সংসারে কখন মেয়ের খেলা থেমে যাবে, সেই চিন্তাই কুরে কুরে খায়। খেলার জুতার দাম অনেক লোকের কাছে চেয়ে নিতে হয়েছে, সেই জুতো পরে ছয় মাস চালিয়েছে প্রিতি। অনেক সময় ছেঁড়া জুতো পড়ে মাঠে অনুশীলন করেছে মেয়েটা।মেয়েটাকে ভাল মতো পুষ্টিকর খাবার দিতে পারেনি ।যদি ঠিকঠাক সরকারি সাহায্য মেলে প্রীতির স্বপ্ন ভারতের হয়ে এশিয়ান গেমস খেলবে।

এই বিষয়ে বিডিও জানিয়েছেন আমরা অত্যন্ত গর্বিত অত্যন্ত খুশি। ব্লকের তরফ থেকে ওকে আমরা সম্বর্ধনা দেব । ওর ভবিষ্যতে চলার পথে ওর যেকোনো ধরনের সুবিধা দরকার বা আরও কিছু দরকার থাকে সেটার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওকে সব সময় সাহায্য করবে। যতই থাকুক অভাব অনটন মনের ইচ্ছা শক্তি থাকলে পৃথিবীর সমস্ত বাঁধা কাটিয়ে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া যায় ।তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত উদাহরণ বলাগর গুপ্তিপাড়া সোনা জয়ী সোনার মেয়ে প্রীতি মন্ডল।

রাহী হালদার