মালদহ: হুইলচেয়ারে বসেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ঋদ্ধিমা। একা কিছুই করতে পারেন না, ওঠাবসা থেকে সমস্ত কিছুর জন্য অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এমনকি নিজে বই খুলে পড়তে পারেন না। তাতেও অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকাড়া রেজাল্ট। ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সর্বভারতীয় জয়েন্ট মেইনস পরীক্ষায় ৪৬০ ব়্যাঙ্ক করেছেন বিরল রোগে আক্রান্ত ঋদ্ধিমা পাল। ঋদ্ধিমা বলেন, “আরও একটু ভাল ফল আশা করেছিলাম। অন্যান্যদের মতো আমি বেশিক্ষণ পড়াশোনা করতে পারি না। আমার মা-বাবা, দাদু সকলে আমাকে সাহায্য করেন। আগামীতে আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।”
মালদহের ইংরেজবাজার শহরের এক নম্বর গর্ভমেন্ট কলোনী বাসিন্দা ঋদ্ধিমা পাল। শহরের বার্লো গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী। বাবা রাজীব পাল পেশায় পুলিশকর্মী। মা অরুণিতা পাল গৃহবধূ। তাঁদের দুই ছেলে মেয়ে। ঋদ্ধিমা বড়।জন্ম থেকেই জিনের বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত ঋদ্ধিমা। নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমনকি উঠতে বসতে পর্যন্ত পারেন না। হুইল চেয়ারে বসেই চলাফেরা থেকে সমস্ত কিছু করতে হয়। নিজের হুইলচেয়ার এবং টেবিলে বসেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মা অরুণিতা বলেন, “মেয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে। একবার অস্ত্রোপচার পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও মেয়ে ধারাবাহিক ভাল ফল করছে। ওর এমন সাফল্যে আমরা খুব খুশি।”
আরও পড়ুন: ক্যানসারও বাধা হতে পারেনি! মাধ্যমিকে চমক শৈবালের, চোখে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন
আরও পড়ুন: শরীরের ক্যানসারের বাস! মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিক পাশ রাখির
সাধারণ পড়ুয়াদের মতো নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারেন না। টানা এক ঘণ্টার বেশি বসে থাকতে পারেন না হুইলচেয়ারে। তাই সেভাবে পড়াশোনাও করা হয় না। কিন্তু মনের জোর ও প্রচেষ্টায় একের পর এক সাফল্য ঋদ্ধিমার। মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। তারপর উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন। আগামীতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। বাবা রাজীব বলেন, “মেয়ের এমন সাফল্যে আমি গর্বিত। মেয়েকে আমি সময় দিতে পারি না। এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণ আমার স্ত্রীর।”
শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে জয়েন্ট মেইনসে ভাল ফল। নিজের শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি জীবন যুদ্ধের লড়াই শামিল হার না মানা ঋদ্ধিমা।
হরষিত সিং