Tag Archives: Higher Secondary Result 2024

Higher Secondary Result 2024: নম্বর বাড়তেই উচ্চমাধ্যমিকের মেধা তালিকায় ঢুকে পড়ল পুরুলিয়ার নাম

পুরুলিয়া: ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে দ্বিতীয় বড় পরীক্ষা হল উচ্চমাধ্যমিক। তাদের ভবিষ্যতের ভীত মজবুত হয় উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলের উপর নির্ভর করে। ‌এই পরীক্ষার ফলাফলের উপর ভিত্তি করেই ছাত্র-ছাত্রীরা সিদ্ধান্ত নেয় তারা কোন বিষয়টা নিয়ে আগামী দিনে এগিয়ে যাবে। সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক কৃত ছাত্র-ছাত্রী মেধা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু সেখানে নাম ছিল না পুরুলিয়ার কোন‌ও পড়ুয়ার। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার স্ক্রুটিনির ফলাফল প্রকাশিত হতেই সেই বিষয়টি বদলে গেল। মেধা তালিকায় ঢুকে পড়ল এই জেলারও নাম।

সম্প্রতি হওয়া স্ক্রুটিনির পর নম্বর বেড়ে মেধা তালিকায় জায়গা করে নিল পুরুলিয়ার এক পড়ুয়া। স্ক্রুটিনির পর তার নম্বর বাড়ায় মেধা তালিকায় দশম স্থানে উঠে এসেছে রঘুনাথপুর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দেবার্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়। সে রঘুনাথপুরেরই মধুতটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কলা বিভাগের পড়ুয়া।

আরও পড়ুন: ভোটের মুখে পানের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণের দাবি

দেবার্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের উচ্চমাধ্যমিকে প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৪৮৬। স্ক্রুটিনির পর তার ১ নম্বর বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ বর্তমানে তার প্রাপ্ত নম্বর বেড়ে হয়েছে ৪৮৭। বাংলায় তার এক নম্বর বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এই নম্বর বৃদ্ধির কারণেই রাজ্যের মধ্যে দশম ও পুরুলিয়া মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে দেবার্ঘ্য। তার বাবা মধুতটি হাইস্কুলের শিক্ষক।

এ বিষয়ে দেবার্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আশা করেছিলেন এই ফলাফলের‌।‌ ছোটবেলা থেকে বাবার কাছেই তার পড়াশোনা করা। স্কুলের শিক্ষক ও টিউশনের শিক্ষকদের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে তার এই সাফল্যের পিছনে। আগামী দিনে কলকাতার কোনও কলেজে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে পড়তে চায়। ভবিষ্যতে আইপিএস অফিসার হতে চায়।

শর্মিষ্ঠা ব্যানার্জি

Higher Secondary Result 2024: ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ৯২% নম্বর! বালুরঘাটের পায়েলের বিরাট চমক

দক্ষিণ দিনাজপুর: হাঁটাচলা তো অনেক পরের ব্যাপার, সরু ও রুগ্ন হাত দুটো কোন‌ও ভারী কাজ করতে পারে না। শুধুমাত্র কোনরকমে কলম চালাতে শিখেছেন। আর তাতেই বাজিমাত। ৮০ শতাংশ বিশেষভাবে সক্ষম পায়েল পাল এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৯২ শতাংশ নাম্বার পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

বিশেষভাবে সক্ষম পায়েলের এই সাফল্য ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলে দিয়েছে। এবার সেই পায়েল পালের পড়াশোনার যাবতীয় দায়িত্ব নিতে চলেছে বালুরঘাট মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ। এদিন মহিলা কলেজের পক্ষ থেকে পায়েলের বাড়িতে অধ্যক্ষ গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর পড়াশোনার যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করার কথা জানান।

আরও পড়ুন: মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য প্রাণ গেল বৃদ্ধের! পাওনা চাইতে গেলে পিটিয়ে খুন…

বালুরঘাট মহিলা কলেজের পক্ষ থেকে ৫০০০ টাকার চেক, কলম, ডায়েরি, উত্তরীয় এবং মানপত্র তুলে দেওয়া হয় পায়েলের হাতে। অধ্যক্ষ জানান, পায়েল যদি বালুরঘাট মহিলা কলেজে ভর্তি হয় তবে আগামী চার বছর তার পড়াশোনার সমস্ত দায়-দায়িত্ব নেবেন তাঁরা। বিষয়টি জানার পরে খুশির হাওয়া পায়েলের পরিবারে। এই বিষয়ে বালুরঘাট মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ বিমান চক্রবর্তী বলেন, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর টিভি সহ অন্যান্য গণমাধ্যমে তিনি পায়েলের খবরটি দেখেন। এরপরই আলোচনা করে তার পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।

জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই বেড়ে উঠেছে পায়েল। স্কুলে যাতায়াত থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুই মায়ের কোলে চেপে করতে হয় তাকে। উচ্চতা দেখলে মনে হবে যেন ছোট্ট শিশু। কোমরের নীচ থেকে বাকি দেহ কার্যত অসার। হাঁটাচল তো দূরের কথা, হাতের অবস্থা এতই খারাপ যে কোনও ভারী কাজ করতে গেলেও রীতিমত বেগ পেতে হয়। বসে বসেই কাটে দিন। এই বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই আগামী দিনে সে ভূগোলে অনার্স নিয়ে পড়াশুনা করতে চায়।

সুস্মিতা গোস্বামী

Higher Secondary Result 2024: সর্বভারতীয় জয়েন্টে ৪৬০ ব়্যাঙ্ক! উচ্চ মাধ্যমিকে সাফল্য বিরল রোগে আক্রান্ত ঋদ্ধিমার

মালদহ: হুইলচেয়ারে বসেই স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ঋদ্ধিমা। একা কিছুই করতে পারেন না, ওঠাবসা থেকে সমস্ত কিছুর জন্য অন্যের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। এমনকি নিজে বই খুলে পড়তে পারেন না। তাতেও অন্যের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে মাধ্যমিকের পর উচ্চ মাধ্যমিকেও নজরকাড়া রেজাল্ট। ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সর্বভারতীয় জয়েন্ট মেইনস পরীক্ষায় ৪৬০ ব়্যাঙ্ক করেছেন বিরল রোগে আক্রান্ত ঋদ্ধিমা পাল। ঋদ্ধিমা  বলেন, “আরও একটু ভাল ফল আশা করেছিলাম। অন্যান্যদের মতো আমি বেশিক্ষণ পড়াশোনা করতে পারি না। আমার মা-বাবা, দাদু সকলে আমাকে সাহায্য করেন। আগামীতে আমার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে।”

মালদহের ইংরেজবাজার শহরের এক নম্বর গর্ভমেন্ট কলোনী বাসিন্দা ঋদ্ধিমা পাল। শহরের বার্লো গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী। বাবা রাজীব পাল পেশায় পুলিশকর্মী। মা অরুণিতা পাল গৃহবধূ। তাঁদের দুই ছেলে মেয়ে। ঋদ্ধিমা বড়।জন্ম থেকেই জিনের বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফিতে আক্রান্ত ঋদ্ধিমা। নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমনকি উঠতে বসতে পর্যন্ত পারেন না। হুইল চেয়ারে বসেই চলাফেরা থেকে সমস্ত কিছু করতে হয়। নিজের হুইলচেয়ার এবং টেবিলে বসেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। মা অরুণিতা  বলেন, “মেয়ে বিরল রোগে আক্রান্ত চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে। একবার অস্ত্রোপচার পর্যন্ত হয়েছে। তারপরও মেয়ে ধারাবাহিক ভাল ফল করছে। ওর এমন সাফল্যে আমরা খুব খুশি।”

আরও পড়ুন: ক্যানসারও বাধা হতে পারেনি! মাধ্যমিকে চমক শৈবালের, চোখে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন

আরও পড়ুন: শরীরের ক্যানসারের বাস! মারণ রোগের সঙ্গে লড়াই করে মাধ্যমিক পাশ রাখির

সাধারণ পড়ুয়াদের মতো নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারেন না। টানা এক ঘণ্টার বেশি বসে থাকতে পারেন না হুইলচেয়ারে। তাই সেভাবে পড়াশোনাও করা হয় না। কিন্তু মনের জোর ও প্রচেষ্টায় একের পর এক সাফল্য ঋদ্ধিমার। মাধ্যমিকে ৯৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। তারপর উচ্চমাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন। আগামীতে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন রয়েছে। বাবা রাজীব বলেন, “মেয়ের এমন সাফল্যে আমি গর্বিত। মেয়েকে আমি সময় দিতে পারি না। এই কৃতিত্ব সম্পূর্ণ আমার স্ত্রীর।”

শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে পিছনে ফেলে জয়েন্ট মেইনসে ভাল ফল। নিজের শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াইয়ের পাশাপাশি জীবন যুদ্ধের লড়াই শামিল হার না মানা ঋদ্ধিমা।

হরষিত সিং

Higher Secondary Result 2024: সকালে দোকানে কাজ করে রাত জেগে পড়া, উচ্চমাধ্যমিকে ৯০% পেয়ে চমক অনুজা’র

আলিপুরদুয়ার: বাবা নেই। সংসার চালাতে সকালে দোকানে কাজ করত। ফলে দিনের শেষে পড়াশোনার সময় যে খুব বেশি পেত তা নয়। এভাবেই পড়াশোনা করে উচ্চমাধ্যমিকে তাক লাগানো ফল করল কালচিনির অনুজা বিশ্বকর্মা। ৯৩% নম্বর নিয়ে সে এবার উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়েছে। তার এমন সাফল্য সাড়া ফেলে দিয়েছে গোটা চা বলয়ে।

বাবা প্রয়াত হওয়ায় অনুজা মায়ের সঙ্গে মিলে দোকানে কাজ করে কোনওরকমে সংসার চালায়। এছাড়াও বাধ্য হয়ে অনেক সময় শ্রমিকের কাজও করতে হয়। ভয়াবহ অভাব সত্ত্বেও পড়াশোনা ছাড়েনি সে। কালচিনির হিন্দি হাইস্কুলে লেখাপড়া চালিয়ে গিয়েছে। তা বলে ৯৩% নম্বর পাবে তা বোধহয় সকলেরই ভাবনার বাইরে ছিল। মেয়ের এই সাফল্যে খুশি মা রীতা বিশ্বকর্মা।

আরও পড়ুন: আর ক্যান্সারের ভয় নেই, অক্ষয় তৃতীয়া থেকে মিলছে খাঁটি মশলা-ছাতু

মেয়ের স্বপ্ন সফল করতে আরও পরিশ্রম করবেন বলে জানিয়েছেন রীতা। এত পরিশ্রম সত্ত্বেও এমন তাক লাগানো সাফল্য প্রসঙ্গে অনুজা বিশ্বকর্মা বলে, দুটো টিউশন নিয়েছিলাম। স্কুলের শিক্ষকরা সাহায্য করতেন। কোন‌ওদিন স্কুল ছুটি নিইনি। দোকানে কাজ করে টিউশনের টাকা জোগাড় করতাম। ভাল ফলাফল হবে আশা করেছিলাম।

অনুজা পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে অধ্যাপক হতে চায়। তিনি রাষ্ট্র বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করবেন বলে ঠিক করেছেন। আমি প্রতিষ্ঠিত হলে আর আমার মাকে কষ্ট করতে হবে না। এক‌ইভাবে টিউশন করে কলেজের পড়ার খরচ ওঠাতে চান তিনি। পাশাপাশি সরকারি চাকরির পরীক্ষাগুলিতেও বসতে চান।

অনন্য দে

Higher Secondary Result 2024: বই কেনার টাকা ছিল না! সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়! উচ্চ মাধ্যমিকে দশম, বৃষ্টির লড়াই চোখে জল আনবে!

হুগলি: সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায়। তাঁত বুনে কোনো-রকমে টেনে টুনে চলে সংসার। সেই পরিবার থেকেই উঠে এসেছে উজ্জ্বল নক্ষত্র। উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে দশম স্থান অর্জন করেছে হুগলি বেগমপুরের বৃষ্টি দত্ত। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৭। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছে বাবার কাছে। উচ্চমাধ্যমিকে নিজের চেষ্টায় ভালফল করেছে বৃষ্টি। মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য চিন্তার ভাঁজ এখন বাবার কপালে। উচ্চ মাধ্যমিকে হুগলি জেলায় প্রথম দশে স্থান করে নিয়েছেন ১৩ জন ছাত্র ছাত্রী তার মধ্যে দশম স্থান অধিকার করেছেন হুগলির বেগমপুর হাই স্কুলের কলা বিভাগের ছাত্রী বৃষ্টি দত্ত।

বাবা সুশান্ত দত্ত একজন তন্তুবায়, তাঁতের কাপড় তৈরি করে কোনো রকমে সংসার চালান।মেয়ে দশম স্থান অধিকার করায় পরিবারে খুশির হওয়া বইলেও মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য চিন্তার ভাঁজ পড়েছে কপালে।তবে শত কষ্ট করেও মেয়ের ইচ্ছা পূরণ করতে ব্রতী হয়েছেন সুশান্ত বাবু। মা পম্পা দত্ত ও সংসারের হাল ধরতে কুটির শিল্পের কাজ করতেন তবে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার খরচ নিয়েও বেশ চিন্তিত তিনি।

আরও পড়ুন: খালি পেটে এক গ্লাস জিরে ভেজানো জল খেলে কী হবে? এক মাসে বদলে যাবেন আপনি!

ভাল ফলাফলের প্রত্যাশা ছিলই তবে বাঁধা ধরা নিয়মে পড়াশোনা করত না বৃষ্টি। স্কুলের সব পাঠ্য বই তার কেন সম্ভব হয়নি। অনেকের কাছ থেকে বই জোগাড় করে পড়াশোনা করত বৃষ্টি। ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হওয়ার ইচ্ছা,প্রিয় বিষয় ইংরাজি।নিজের মধ্যে কৌতূহল থাকলে ভাল রেজাল্ট করা সম্ভব বলে জানান বৃষ্টি।

রাহী হালদার

Higher Secondary Result 2024: মাঠে ধান কাটছিল জ্যোৎস্না! দাদা ছুটে এসে জানায়, উচ্চ মাধ্যমিকের ফল! এই মেয়ে এখন সবার গর্ব

বাঁকুড়া: সাঁওতালি ভাষায় উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম দিনমজুর বাড়ির মেয়ে জোৎস্না কিসকু। মাধ্যমিক ,মাদ্রাসার মেধা তালিকায় অন্ধকার কাটিয়ে জেগে উঠলেন জ্যোৎস্না। জ্যোৎস্না কিসকু, সাঁওতালি ভাষায় ৪৮৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় রাজ্যে প্রথম হয়ে বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল নয়, সারা বাঁকুড়ার মুখ উজ্জ্বল করেছে। জ্যোৎস্না পঞ্চম শ্রেণি থেকেই বাঁকুড়ার রাইপুরের পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু বিদ্যালয়ের হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেছে। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা ছাড়াও বিশেষভাবে পড়াশোনায় যত্ন নিয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। জ্যোৎস্নার বাড়ি সারেঙ্গার কাঠগড়া গ্রামে।

তার এই ফলের কথা যখন ঘোষণা করা হচ্ছিল তখন জ্যোৎস্না মা বাবার সঙ্গে মাঠে ধান কাটছিল। দাদা, খবর জেনে মাঠে ছুটে গিয়ে মা বাবা এবং বোনকে খবর দিলে কাস্তে হাতে মা, বাবা, দাদা, বোন ,চোখের জলে এই আনন্দ উপভোগ করেন। জ্যোৎস্না জানায়,  “আমরা এতটাই গরীব বাবা একদিন দিনমজুরির কাজে না গেলে আমাদের সংসার চালানো খুব জটিল হয়ে যায়। মা-বাবা যদি আমাকে পড়াতে চান তাহলে ভবিষ্যতে শিক্ষিকা হব এটাই আমার ইচ্ছা।” বাবা শুকদেব কিসকু এবং মা শর্মিলা দেবী জানালেন, মেয়ে যতটা পড়তে চায় প্রাণপণ চেষ্টা করব ওর ইচ্ছে পূরণ করতে।”

আরও পড়ুন: ত্বক দেখে বোঝা যাবে না বয়স! ৫০-এও জোয়ান! মাখুন সস্তার এই তেল! করিনা কাপুর খানও ব্যবহার করেন

বাঁকুড়ার জ্যোৎস্না যেন ঝকঝকে একটি ভবিষ্যৎ। কিছু না থাকলেও যে সব কিছু করা যায় সেটাই যেন করে দেখিয়েছে এই মেয়ে। পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু আবাসিক বিদ্যালয় থেকে বাঁকুড়ার জ্যোৎস্না রাজ্যে প্রথম। আর এই খবর গোটা রাজ্যের ছাত্র ছাত্রীদের আরও একবার উৎসাহ দেবে! টাকা, অভাব কোনও কিছুই বাধা হতে পারে না, তা যেন আরও একবার প্রমাণ করল এই মেয়ে!

নীলাঞ্জন ব্যানার্জী

Higher Secondary Result 2024: বিজ্ঞান থেকে মত বদলে কলা বিভাগে! উচ্চ মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল কৌশিকের

মুর্শিদাবাদ: বুধবার প্রকাশিত হল রাজ্যের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল। চলতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষাতে রাজ্যে অষ্টম স্হান অধিকার করল বহরমপুরের কৌশিক ঘোষ। গোয়ালজান রিফিউজি হাইস্কুলের কলা বিভাগের ছাত্র। তাঁর প্রাপ্ত নং ৪৮৯। বাড়ি বহরমপুরের গোপেজান নাথপাড়া রানাঘাট এলাকায়। জানা যায়, বাবা সামান্য দর্জির পেশার সঙ্গে যুক্ত। একতলা বাড়ি। আর সেই মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক টানাটানির মধ্যেও পড়াশোনা করে এবছর উচ্চ মাধ্যমিকে চমক দিলেন ছাত্র। রাজ্যে অষ্টম স্হান অধিকার করলেন কৌশিক।

একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও পরে মত পরিবর্তন করে কলা বিভাগে ভর্তি। আর তাতেই বাজিমাত। আগামী দিনে ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান কৌশিক। তবে পড়াশুনোর পাশাপাশি খেলাধুলো করতে ভালবাসেন কৌশিক। তবে মা সব থেকে বেশি সহযোগিতা করেছেন বলে জানা যায়। কৌশিক কথায়, “আশা ছিল, এক থেকে দশের মধ্যেই থাকবে রেজাল্ট।”

বহরমপুর গোয়ালজান রিফিউজি হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হন কৌশিক। আগে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বহরমপুরের জিটিআই স্কুলে পাঠরত ছিলেন। মাধ্যমিকে ৫৫০ নম্বর পেয়ে প্রথমে একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও পরে মত পরিবর্তন করে কলা বিভাগে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি। মাধ্যমিক পরীক্ষাতে মেধা তালিকায় না এলেও পড়াশুনোর প্রতি আগ্রহ তৈরি করেই দিনরাত পরিশ্রম। আর তার পরেই বাজিমাত।

রাজ্যের মেধা তালিকায় একমাত্র মুর্শিদাবাদ জেলার অষ্টম স্হান অধিকার করেন কৌশিক। তবে সব সময়ই পাশে থাকতেন তাঁর মা। মলিনার কথায়, “কৌশিক খেলাধুলা করতে ভালবাসে, তবে যখন মন চাইত তখনই পড়াশোনা করত।” কৌশিকের এই রেজাল্টে বেশ খুশি প্রকাশ করেছেন জেলাবাসীরা।

কৌশিক অধিকারী

Higher Secondary Result 2024: উচ্চমাধ্যমিকে বারাসতের দুই কৃতী পড়ুয়ার জন্য গর্বিত নরেন্দ্রপুর

নরেন্দ্রপুর: মাধ্যমিকে আশানুরূপ ফল না হওয়ার আফসোস থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে এডমিশন নেওয়ার চিন্তা এসেছিল মাথায়। অবশেষে ধরা দিল সাফল্য। রাজ্যের মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়ে নজর কাড়লেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যালয় (রেসিডেন্সিয়াল) স্টুডেন্ট সৌম্যদীপ সাহা। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৯৫। যা শতাংশের হিসেবে ৯৯%। বারাসাত বরিশাল কলোনি এলাকার বাসিন্দা পেশায় ব্যবসায়ী বাবা ভোলানাথ সাহা। মা নিতান্তই গৃহবধূ ডালিয়া সাহা। ছেলের সাফল্যের খবর পৌঁছতেই খুশি গোটা পরিবার। মা ডালিয়া দেবী জানান, মাধ্যমিকে ৯৬ পার্সেন্ট নম্বর পেলেও, আশানুরূপ ফল হয়নি।

রেঙ্ক না করতে পারার আফসোস থেকেই নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে এডমিশন নেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে সৌম্যদীপের। ছেলের ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে ইকো স্ট্যাট (স্ট্যাটিসটিক্স) নিয়ে পড়তে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে ভর্তি করা হয় তাকে। পড়াশোনার ফাঁকে অবসর সময়ে গল্পের বইয়ের নেশা ছিল সৌম্যদীপের। পাশাপাশি, সাঁতার ও আবৃত্তি ছিল এই কৃতি ছাত্রের অন্যতম পছন্দের বিষয়। ছোটবেলা থেকেই কোনরকম জোর করে নয়, বরং ভালোবেসেই পড়াশোনা করেছে সৌম্যদীপ নিজেই জানালেন মা ডালিয়া সাহা। ছেলেকে মিশনে রেখে পড়াশোনা করানোর ক্ষেত্রে, প্রথম প্রথম কষ্ট লাগলেও, ছেলের ভালোর জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল বাবা-মা-কে।

বাবা ভোলানাথ সাহা চান, ছেলে প্রকৃত মানুষ হোক। মানুষ হলেই কিছু না কিছু ঠিকই করতে পারবে সৌম্যদীপ, বিশ্বাস কৃতি ছাত্রের পিতার। কৃতি ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাধ্যমিকের আগে সৌম্যদীপ বারাসাত গভমেন্ট হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। মাধ্যমিকে পান ৬৭৩ নম্বর। সৌম্যদীপ জানান, মিশন তাকে নতুন জীবন দিয়েছে। তাই মিশনকে দ্বিতীয় স্থান এনে দিতে পেরে রীতিমতো খুশি ও গর্বিত সেও। আগামীতে স্ট্যাটিসটিশিয়ান হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের এই কৃতি ছাত্র সৌম্যদীপের। উচ্চমাধ্যমিকে মেন সাবজেক্ট এর মধ্যে তার ছিল ইকোনমিক্স, স্ট্যাটিস্টিকস, ম্যাথমেটিক্স এবং কম্পিউটার সাইন্স। সাফল্যের পর এদিন সৌম্যদ্বীপের গলায় শোনা গেল রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা।

আরও পড়ুন: West Bengal Higher Secondary Results: মাধ্যমিকের পরে উচ্চ মাধ্যমিকেও জয়জয়কার নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের! সেরা দশে ছয় পড়ুয়া

আরও পড়ুন: The Savoury South: কলকাতায় বসেই দিব্যি চেখে দেখা যাবে খাঁটি দক্ষিণ ভারতীয় খাবার; এলাহি আয়োজন শহরের পাঁচতারা হোটেলে

পাশাপাশি, নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনে পড়ুয়া, বারাসাতের আর এক কৃতি ছাত্র রাজ্যের মধ্যে নবম স্থান অধিকার করে। সে বারাসাত হাটখোলা এলাকার বাসিন্দা অদ্বিতীয় বন্দ্যোপাধ্যায়। আর্টস নিয়ে ৪৮৮ নম্বর পেয়েছে সে। পড়াশোনার পাশাপাশি ফুটবল খেলতে, সিনেমা দেখতেও ভালবাসতো অদ্বিতীয়। দিনে তিন ঘণ্টা সেলফ স্টাডি চলত তার। মাধ্যমিকের রহড়া রামকৃষ্ণ মিশন থেকেই তৈরি হয় ভীত। পরবর্তীতে নরেন্দ্রপুরে গিয়ে আসে এই সাফল্য। বাবা হাবড়া বিডিও অফিসে কর্মরত। মিশনে সৌম্যদীপ এবং অদ্বিতীয় দুজনেই ছিলেন রুমমেট। বারাসাতের এই দুই কৃতি ছাত্রের সাফল্যে যেন আজ গর্বিত সকলে।

Rudra Narayan Roy

Higher Secondary Result 2024: উচ্চমাধ্যমিকে নবম স্থান অধিকার ডায়মন্ড হারবারের বিতানের! কতক্ষণ পড়াশোনা করতেন তিনি

ডায়মন্ড হারবার: উচ্চমাধ্যমিকে নবম স্থান অধিকার করে রাজ্যের মধ্যে ডায়মন্ড হারবারের নাম উজ্জ্বল করলেন বিতান আহমেদ। বিতানের প্রাপ্ত নম্বর ৪৮৮। উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকার নবম স্থানে জায়গা করে নিয়েছে ডায়মন্ড হারবারের সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনের মেধাবী ছাত্র বিতান আহমেদ।

জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চান্স পেলেও নিট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করতে চান তিনি। বাবা আলতাফ আহমেদ পেশায় শিক্ষক। এছাড়াও মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআরের রাজ্য সহ সম্পাদক তিনি। মা অলিনা আখন স্থানীয় হাইস্কুলের পার্শ্বশিক্ষিকা। ডায়মন্ড হারবার এক নম্বর ব্লকের কাজীপাড়া এলাকার বাসিন্দা বিতান তিন ভাই-বোনের মধ্যে ছোট।

বিতানের পড়াশোনার জন্য গোটা পরিবার সরিষাতে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতেন। ক্লাস ৫ থেকে সরিষার রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তেন বিতান। ছোট থেকে মেধাবী তিনি। খাওয়া, ঘুমানো-সহ যেটুকু সময় অপচয় করলে নয়, সেই সময়টুকু বাদ দিয়ে বিতান সমস্ত সময়টাই পড়াশোনার পিছনে ব্যায় করতেন। যার ফলে এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন বিতানের পরিবারের লোকজন। বিতানের এই সাফল্যে খুশি সকলেই।

নবাব মল্লিক

WB HS Result 2024: Success Story: বাবা পরিযায়ী শ্রমিক, মা দিনমজুর, কলাবিভাগে পড়ে উচ্চ মাধ্যমিকে নবম ভাঙা টিনের ঘরের মেধাবী

পিয়া গুপ্তা, উত্তর দিনাজপুর: পরিযায়ী শ্রমিকের ছেলে পীতাম্বর উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্যে নবম স্থান পেলেন। আশৈশব চরম আর্থিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। টিনের ঘরে কোনওরকমে দিন গুজরান করেই উচ্চ মাধ্যমিকের নজরকাড়া সাফল্য উত্তর দিনাজপুরের নবম স্থান অধিকারী হয়েছেন পীতাম্বর।

বৃষ্টির সময় টিনের চালা দিয়ে জল পড়ে ঘরে ৷ বাবা পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন নেপালে। সংসার চালাতে মাও দিনমজুরের কাজ করেন।সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অবস্থা। তবুও সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও উচ্চমাধ্যমিকে ৯৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে রাজ্যে নবম স্থান অধিকার করেছেন কালিয়াগঞ্জের পীতাম্বর বর্মন। আগামী দিনে আইএএস অফিসার হওয়ার স্বপ্ন পীতাম্বরের।

আরও পড়ুন : সমাজের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সব নিয়ম মেনে মাথা মুড়িয়ে বাবার পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন মেয়ের

উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জে তরঙ্গপুরের বাসিন্দা পীতাম্বর বর্মনের বাবা উত্তম বর্মন পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা তরুলতা বর্মনও দিনমজুরের কাজ করেন। টিনের ভাঙা ঘরে পড়াশুনা করেই উচ্চমাধ্যমিকের নজরকাড়া সাফল্য পেয়েছে পীতাম্বর। তরঙ্গপুর এন কে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কলা বিভাগে ৪৮৮ নম্বর পেয়েছে তিনি।

এদিকে ছেলের সাফল্যে কেঁদেই ফেলেন মা তরুলতা বর্মন। ছেলের পড়াশুনোর খরচের জোগাড় করতে দিনরাত অবিরাম পরিশ্রম করেন তাঁরা। তাঁদের পরিশ্রম বৃথা যায়নি। ছেলের এই সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্যরা।