Ind vs Aus: ব্রিসবেনে ইতিহাস, ‘দাদা’-দের ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট সিরিজ জিতল ভারত

#ব্রিসবেন: কামাল ভারতের , ধামাল পারফরম্যান্স৷ ব্রিসবেনের মাটিতে ইতিহাস তৈরি করল ভারত৷ ‘দাদা’-দের ছাড়াই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে টেস্ট সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া৷ সৌজন্যে শুভমান গিল, ঋষভ পন্থরা৷ ব্রিসবেনে টেস্ট জিতে সিরিজ জিতে নিল ২-১ ৷

ড্র-য়ের জন্য নয় একেবারে সরাসরি অজি আগ্রাসনের উত্তর দিল ভারতীয় টিম ব্যাট দিয়ে৷ প্রথমে শুভমানের পারফরম্যান্স, সর্বক্ষণ পূজারার স্থিতধী ইনিংস  এবং শেষবেলায় পন্থের ঝাঁঝ সব মিলিয়ে টোটাল কম্বো৷

নতুন বলে পূজারার উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জেতার স্বপ্ন যখন দেখতে শুরু করেছিল তখন ফের চলল ঋষভ পন্থের ব্যাট৷ কোনও কিছুতেই বাগ মানানো যায় না তাঁকে৷ সেটাই প্রমাণ করলেন ‘স্পাইডারম্যান’ পন্থ৷ ফের এল অর্ধশতরান৷

এদিনের পন্থের ৫০ রান এল ১০০ বলে৷ তিনি মেরেছেন ৪ টি চার ও ১ টি ছয়৷

কোনও ভাবেই ম্যাচ হারব না এই দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন চেতেশ্বর পূজারা, তাই যে কোনও মূল্যেই উইকেট না হারানোর পণ নিয়ে পঞ্চম দিনে ব্যাট করছিলেন পূজারা৷ করলেন অর্ধশতরান৷ সেটা তাঁর কেরিয়ারের স্লোয়েস্ট হাফ সেঞ্চুরি৷এদিন ১৯৬ বলে ৫০ করেন তিনি৷ তিনি ৭ টি চার মারেন৷

এদিকে এদিন পূজারা হেজেলউডের বলে হাতে খুব জোর চোটও পান৷

পূজারা কামিন্সের বলে এলবিডাব্লু আউট হন৷

এদিকে একটুর জন্য শতরান মাঠে ফেলে আসতে হল শুভমান গিলকে৷ ৯১ রানে তিনি যখন মাঠ ছাড়ছেন সকলেই কুর্নিশ করছেন তরুণ এই ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সকে ৷ ম্যাচের পঞ্চম দিনে ১৪৬ বলে ৯১ রানের দুরন্ত ইনিংস খেললেন তিনি৷ তাঁর ইনিংস সাজানো ৮ টি চার ও ২ টি ছয়৷

তবে তিনি নিজে শতরান করতে না পারলেও পূজারার সঙ্গে জুটিতে শতরান করেন গিল৷

ন্যাথান লিঁও-র বলে স্মিথের হাতে ক্যাচ জমা দেন শুভমান গিল৷

একের পর এক বল সবেগে ধেয়ে আসছে পঞ্চম দিনে ব্রিসবেনের পিচে৷ মাথার ওপর ৩২৮৷ এই অবস্থায় পঞ্চম দিনে মাত্র ৮ রানে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলেন  রোহিত শর্মা৷ তবে শুরু থেকে পোস্ট লাঞ্চ সেশন শুরু হওয়া অবধি ক্রিজ সামলাচ্ছেন তরুণ শুভমান গিল ও অভিজ্ঞ চেতেশ্বর পূজারা৷ একদিকে সাবলীল খেলে স্কোরবোর্ড এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে যখন ব্যস্ত শুভমান তখন উইকেটের অন্যদিকে ফেভিকুইকের মতো আটকে থাকা পূজারা৷

তাঁর ধৈর্য্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেট বোদ্ধারা৷ এদিন পূজারা নিজের ইনিংসের ১০৩ তম বলে প্রথম চার মারেন৷ এর থেকেই প্রমাণিত হয় ঠিক কী ধরণের ধৈর্য্যশীল ছিল তাঁর ইনিংস৷ অন্যদিকে শুভমান ফের একটা অর্ধশতরান করে নিয়েছেন ইতিমধ্যেই৷

শুভমান ৯০ বলে ৫০ রান করেন৷ তাঁর অর্ধশতরানের ইনিংসে ছিল ৫ টি চার ছিল৷

 

এদিকে এর আগে চতুর্থদিনে ভারতকে প্রথম সাফল্য দিলেন শার্দুল ঠাকুর। হ্যারিসকে ফিরিয়ে দিলেন নিখুঁত আউটসুইং ডেলিভারিতে। আটত্রিশ করেন হ্যারিস। অন্য প্রান্তে ছন্দে থাকা ডেভিড ওয়ার্নার ফিরে গেলেন ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে। তাঁর সংগ্রহ আটচল্লিশ। এরপর সিরাজ ফিরিয়ে দিলেন লাবুশানেকে। পঁচিশ করে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিলেন তিনি। ব্যাট হাতে আবার ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন স্টিভ স্মিথ। অফ স্টাম্পের লাইনে হঠাৎ করে লাফিয়ে ওঠা একটা বলে খোঁচা দিয়ে স্লিপে রাহানের হাতে ধরা পড়লেন তিনি। তিনি করলেন পঞ্চান্ন। তবে প্রশংসা করতে হবে সিরাজের। বুদ্ধি করে গুড লেন্থ স্পটে বলটা রেখেছিলেন। সিরাজের বলেই উইকেট রক্ষক পন্থকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেলেন ওয়েড। তিনি খাতা খুলতে পারেননি। ক্যামেরন গ্রিন এবং অধিনায়ক টিম পেন খেলাটা ধরে ফেলেছিলেন। কিন্তু দু’জনকেই ফিরিয়ে দিলেন শার্দুল ঠাকুর।

স্টার্ক এবং হ্যাজেল উডকে তুলে নিলেন সিরাজ। লিয়নকে ফিরিয়ে দিলেন শার্দুল। তবে প্যাট কামিন্স লোয়ার অর্ডার দারুণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেলেন আঠাশ রান করে। একদিন আগে ব্যাট হাতে লড়াকু ৬৭ করার পর এদিন বল হাতেও নিজেকে প্রমাণ করলেন ঠাকুর। প্রথম ইনিংসেও তিনটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন তিনি। সিরাজের সঙ্গে জুটি বেঁধে নতুন বল বুদ্ধি করে কাজে লাগালেন। শর্ট বল ব্যবহার করলেন দেখার মত। অন্যদিকে মহম্মদ সিরাজ গাব্বায় পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। অস্ট্রেলিয়ায় থাকার সময় বাবাকে হারিয়েছেন। জাতীয় সংগীতের সময় বাবার কথা মনে পড়ে চোখের জল সামলাতে পারেননি। দর্শকদের বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন।

কিছুতেই ফোকাস হারিয়ে ফেলেননি। সিরাজ প্রথম টেস্ট সিরিজেই ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। পাশাপাশি মুম্বইয়ের শার্দুল ঠাকুরের অল রাউন্ড ক্রিকেট, ভারত ব্রিসবেনে জিতুক, হারুক বা ড্র করুক, এই দুজনের লড়াই মনে রাখার মত। আর অবশ্যই অভিষেক হওয়া ওয়াশিংটন সুন্দর আলাদা নজর কেড়েছেন। একের পর এক সিনিয়র ক্রিকেটার ছিটকে যাওয়ার পর এই তরুণ ক্রিকেটাররা একবারও বুঝতে দেননি প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলছেন তাঁরা।এদিকে ভারত ব্যাট করতে নেমে স্কোরবোর্ডে চার রান ওঠার পর বৃষ্টি নামল। প্রায় আধঘন্টা খেলা বন্ধ থাকার পর আম্পায়াররা সিদ্ধান্ত নিলেন এ দিনের মত আর ম্যাচ হবে না।