গমের ক্ষেতে রাতারাতি গজিয়ে উঠল পাহাড়, বিশ্বের কাছে গোপন করেছিল জাপান, কীভাবে সামনে এল? (Credit-Wikimedia Commons)

গমের ক্ষেতে রাতারাতি গজিয়ে উঠল পাহাড় ! বিশ্বের কাছে গোপন করেছিল জাপান, কীভাবে সামনে এল?

টোকিও: প্রতিদিন কত কিছুই না ঘটে। কিছু ঘটনা দেখেশুনে তো চমকে যেতে হয়। আবার কিছু ঘটনা মানুষ গোপন করে যায়। যেমন হঠাৎ যদি গুপ্তধন মেলে কিংবা মূল্যবান প্রাচীন কোনও জিনিস। গোপন করলেও চেপে রাখা যায় না। সত্যিটা ঠিক সামনে চলে আসে। কিন্তু প্রাকৃতিক কোনও ঘটনা গোপন করার কথা কি কেউ কোনও দিন শুনেছেন?

ইতিহাস সবসময়ই রোমাঞ্চকর। কিছু ক্ষেত্রে অদ্ভুত। সেই অদ্ভুত ঐতিহাসিক ঘটনাই ঘটেছিল জাপানে। ক্ষেতের মাঝে গজিয়ে উঠেছিল আস্ত একটা পাহাড়। আর সেই পাহাড়কেই আড়াল করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেছিল জাপান সরকার। কিন্তু শাক দিয়ে কি আর মাছ ঢাকা যায়! পাহাড়কেও লুকিয়ে রাখা যায়নি। হোক্কাইডো দ্বীপের শিকৎসু-তোয়া জাতীয় উদ্যানে (Shikotsu-Toya National Park) গেলে আজও দেখা যাবে এই পাহাড়। এর নাম ‘শোওয়া শিনজান’।

আরও পড়ুন– ৫০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপনের জন্য ৫ কোটি টাকা পারিশ্রমিক! আলিয়া, সামান্থা নয়, এই নায়িকা নিয়েছেন

হঠাৎ মাটি ফুঁড়ে উঠে এল পাহাড়: ১৯৪৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। জাপানের একটি গমের ক্ষেতে রাতারাতি গজিয়ে ওঠে পাহাড়। আশেপাশের লোকজন তো অবাক। এমনও হয়! প্রতিদিনই উচ্চতা বাড়ছে। চোখের সামনে একটু একটু করে বড় হচ্ছে পাহাড়। শোওয়া শিনজান নামের ওই পাহাড় আসলে আগ্নেয়গিরি পর্বত। উচ্চতা ৪০০ মিটার।

জাপান সরকার প্রথমে এই পাহাড়ের ঘটনা দেশবাসীর কাছে লুকোতে চেয়েছিল। কারণ তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। প্রতিদিন শয়ে শয়ে জাপানি মারা যাচ্ছে। এর মধ্যে এই খবরে যদি কোনও কুসংস্কার ছড়ায়! এই ভয়েই জাপান সরকার, খবরটা চেপে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু মাসাও মিমাতসু নামের এক পোস্টমাস্টারের নজরে পড়ে যায়। তিনিই এই নিয়ে গবেষণা করেন। তারপর আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরেন বিষয়টা। তখন গোটা বিশ্বের নজরে আসে এই পাহাড়।

আরও পড়ুন- স্টুডিওর মেঝে থেকে বমিও পরিষ্কার করেছেন! প্রহ্লাদ কক্করের কাছে ইন্টার্নশিপের স্মৃতি রোমন্থন অভিনেত্রীর

মাসাও মিমাতসু এই পাহাড়ের চার্ট তৈরি করেছিলেন। তাতে পর্বতের বৃদ্ধির পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব লিখে রাখেন তিনি। সঙ্গে একটি স্কেচও এঁকেছিলেন। সেখানে রেখাচিত্রের সাহায্যে পর্বত গঠনের প্রক্রিয়া হুবহু তুলে ধরেছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালে বিশ্ব আগ্নেয়গিরি সম্মেলনে সেই চার্ট এবং স্কেচ নিয়ে হাজির হন মাসাও।

এই নথিপত্রকে ‘মিমাতসু ডায়াগ্রাম’ বলা হয়। এই কাজের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। পরবর্তীকালে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে জায়গাটা কিনে নেন তিনি। জাপান সরকারকে এই পাহাড়কে প্রাকৃতিক স্মৃতিস্তম্ভ ঘোষণা করে। মিমাতসুর মৃত্যুর পর তাঁর মূর্তিও বসানো হয়।