নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, বাঁকুড়া: পুরীর মন্দির তৈরি হয়েছে যে পাথরে, সেই পাথর দিয়ে বাঁকুড়ার শুশুনিয়া গ্রামে তৈরি হচ্ছে মা কালীর প্রতিমা। তবে শিল্পীরা রয়েছেন সংকটে। বাঁকুড়া শুশুনিয়া পাহাড় এলাকার পাথর শিল্পীদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন শিল্পী রাষ্ট্রপতি পুরস্কার এবং রাজ্যের শ্রেষ্ঠ শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন। বর্তমানে এই পাথরশিল্পীরা রয়েছেন সঙ্কটে। ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে পাথরের কালী প্রতিমার অর্ডার। বন্ধ হতে বসেছে পাথরশিল্প। সাম্প্রতিক এই শিল্প ভারতীয় ডাক টিকিটে জায়গা পেলেও কেন এমন সঙ্কট? জেনে নেওয়া যাক।
আগে এই শিল্পীরা শুশুনিয়া পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ থেকে, পাথর সংগ্রহ করে তার থেকে বিভিন্ন শিল্পকলা সৃষ্টি করতেন। সুবিশাল শুশুনিয়া পাহাড় যেমন সবুজে মোড়া তেমনই পাহাড়ের বেশ কিছু অংশ পাথুরে। সেই পাথুরে অংশগুলি থেকে পাথর সংগ্রহ করে আনা হত। কিন্তু বর্তমানে সরকারি নিষেধাজ্ঞায় শুশুনিয়া পাহাড় থেকে পাথর সংগ্রহ করা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এই শিল্পীরা সংকটের মুখে পড়েছেন। শিল্পী অনাথবন্ধু কর্মকার অর্ডার পেয়ে ভিন রাজ্য থেকে পাথর এনে কাজ করছেন। তৈরি করছেন তিন তিনটি চার ফুট থেকে পাঁচ ফুটের মা কালী। প্রত্যেকটি তৈরি হচ্ছে সানা পাথর দিয়ে। দাম ১৫০০০ টাকা প্রতি ফুট।
শুশুনিয়া পাহাড়ের পাথর শিল্প একটি ঐতিহ্যবাহী শিল্প। কোনও রকমে টিকে রয়েছে এই শিল্প। শুশুনিয়া পাহাড়ের পাদদেশে গেলে আজও শুনতে পাবেন পাথর কাটার আওয়াজ। তবে সেই আওয়াজের জোর আর আগের মতো নেই। শিল্পী অনাথবন্ধু কর্মকার জানান, “যে খাদানের পাথর দিয়ে পুরীর মন্দির তৈরি হয়েছে সেই খাদানের পাথর আনিয়ে কাজ করছি। সানা পাথর দিয়ে তৈরি হচ্ছে কালীমূর্তিগুলি।”
আরও পড়ুন : দুধ, ছানা ঘি, এলাচ…চোখের নিমেষে বাড়িতেই কালাকাঁদ বানান ভাইফোঁটার ভূরিভোজে
সবার পক্ষে এত ব্যয় করে পাথর এনে কাজ করা সম্ভব নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে শিল্পকর্মের মূল্য অনেক বেশি হয়। সাধারণ মানুষের এইসব শিল্পকর্মের ক্রয়ক্ষমতা থাকে না । তাই পাথরের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার শিল্পীরাও আর্থিক সঙ্কটে ভুগছেন। কালীপুজো উপলক্ষে পাথরে তৈরি কালীপ্রতিমার চাহিদা রয়েছে । কিন্তু পাথরের সঙ্কটের কারণে সমস্ত অর্ডার ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। আগামী দিনে সরকারি সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আশায়, দিন গুনছেন পাথর শিল্পীরা।