দেশ, পাঁচমিশালি Knowledge Story: ইন্টারনেট এক্কেবারে ফ্রি! দুনিয়ার একমাত্র দেশ যেখানে লাগে না বাসভাড়াও, সবই দেয় রাষ্ট্র Gallery May 3, 2024 Bangla Digital Desk ফ্রি ইন্টারনেট, ফ্রি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট! এতো স্বপ্ন? রোজের জীবনযাত্রার দু’টো খরচই বেঁচে যায়, রাষ্ট্রের তরফে সেই টাকা দিয়ে দেওয়া হলে৷ কিন্তু, এমনটা আবার হয় নাকি? পেট্রোল পুড়িয়ে পাবলিক বাস চলছে, সেই বাসে চেপে আপনি অফিস যাচ্ছেন রোজ, আর তার ভাড়া দিচ্ছে আপনার দেশ? কিংবা ধরুন, নেটফ্লিক্সে দুর্দান্ত একটা সিরিজ এসেছে৷ ভাবছেন অফিস থেকে ফিরে আজই গিলে ফেলবেন সেটা, তারও নেই কোনও ব্যক্তিগত খরচ৷ ইন্টারনেটের টাকা দেবে আপনার রাষ্ট্র, আপনার দেশের সরকার! এতো রূপকথার দেশ৷ এমন দেশ আছে নাকি? যদি বলি আছে? ঠিক শুনছেন এই ধরাধামেই এমন এক দেশ রয়েছে, যেখানকার বাসিন্দাদের বিনামূল্যে ইন্টারনেট দেয় সে দেশের সরকার৷ শুধু তাই নয়, সব কিছুই সেখানে ডিজিটাল৷ সব কিছুই হয় ইন্টারনেটে৷ শুধু তাই নয়, পাবলিক ট্রান্সপোর্টও এই দেশে পাবলিকের জন্য এক্কেবারে ফ্রি৷ আজ থেকে ২৪ বছর আগে ২০০০ সাল থেকেই এই দেশে রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা৷ এই দেশের সমস্ত স্কুল এবং কলেজে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সরবরাহ ২০০০ সাল থেকেই রয়েছে। এখানকার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবহার করেন। জানেন সেই দেশের নাম কী? দেশের নাম এস্তোনিয়া৷ ইউরোপের একটা ছোট্ট দেশ। এদেশে মানুষকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। এখানে অনলাইনে প্রতিটি সুবিধা পাওয়া যায়। ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়া থেকে শুরু করে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য অর্থ প্রদান সবই হয় ইন্টারনেটে৷ এস্তোনিয়ান নাগরিকরাও অনলাইনে অর্থ প্রদান করে। আমেরিকার একটি বেসরকারি সংস্থা ফ্রিডম হাউসের মতে, সারা বিশ্বে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে এস্তোনিয়া একটি মডেল দেশ। বিনামূল্যে ইন্টারনেট ছাড়াও, আরও অনেক জিনিস রয়েছে যা এই দেশটিকে বিশেষ করে তোলে। ইউরোপের উত্তর-পূর্বে বাল্টিক সাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই দেশটি একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের একটি অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে এই দেশ রাশিয়া থেকে পৃথক হয়। এর পর এখানকার অর্থনীতির দ্রুত উন্নতি হয়। এস্তোনিয়ায় শুধু ইন্টারনেটই বিনামূল্যে নয়, এখানকার মানুষ পাবলিক ট্রান্সপোর্টও পান বিনামূল্যে। ২০১৩ সালে দেশটির রাজধানী তালিনের তৎকালীন মেয়র এডগার সাভিসার প্রথম এই বিনামূল্যে পাবলিক ট্রান্সপোর্টের পরিষেবা চালু করেন। এর পিছনে তাঁর যুক্তি ছিল যে, রাশিয়ার অংশ থাকাকালীন যেহেতু নিজেদের মধ্যে অনেক বিভেদ তৈরি হয়েছিল, তাই দেশের জনগণকে যতটা সম্ভব মেলামেশার সুযোগ দেওয়া উচিত বলে মনে করেছিলেন তিনি। প্রথমে এখানে বিনামূল্যে পরিবহণের জন্য গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং বিপুল সমর্থন পাওয়ার পরে, বাস এবং ট্রামগুলি জনসাধারণের জন্য বিনামূল্যে করা হয়েছিল। এস্তোনিয়া ছাড়াও ফ্রান্স ও জার্মানিও বায়ু দূষণ মোকাবিলায় গণপরিবহণ বিনামূল্যে করার কথা ভাবছে। যুক্তরাজ্যের ওয়েলসে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও বিনামূল্যে বাস চলে। এস্তোনিয়ার অর্থনৈতিক মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি নাগরিক আগামী এক বছরের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শিখতে পারে। সারা দেশে ৩ হাজারের বেশি ফ্রি ওয়াই-ফাই স্পট রয়েছে। কফি শপ, পেট্রোল পাম্প, রেস্তোরাঁ, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হোটেল এবং সমস্ত সরকারি অফিসে বিনামূল্যে Wi-Fi রয়েছে। এখানে নির্বাচনে ভোটদানও হয় অনলাইনে। বিশুদ্ধ বাতাসের কথা বললেও এস্তোনিয়ার নাম সবার উপরে চলে আসে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত বছর প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, এস্তোনিয়া এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে যেখানে বায়ুর গুণমান সবচেয়ে ভাল। এ ছাড়া ফিনল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা, নরওয়ে ও আইসল্যান্ডের নাম রয়েছে তালিকায়। ভারতের পাশাপাশি উগান্ডা, মঙ্গোলিয়া, কাতার এবং ক্যামেরুনের নাম সবচেয়ে খারাপ বায়ুর মানের দেশগুলির মধ্যে রয়েছে।