মৃত্যু জীবনের ধ্রুব সত্য। জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় মৃত্যুর দিকে যাত্রা। এ অস্বীকার করার ক্ষমতা কারও নেই। আবার, এও স্বীকার না করলেই নয় যে মৃত্যু বড় বেদনাদায়কও। অনেকেই প্রবল কষ্ট লাভ করে অতঃপর প্রাণ ত্যাগ করেন। মৃত্যুর সময়ে তাঁরা আর্তনাদ করেন, এক সময়ে কণ্ঠ স্তব্ধ হয়ে যায়। কেন এমন হয়?আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থ, যেমন গীতা, গরুড় পুরাণ, কথোপনিষদে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে। জ্যোতিষী পঙ্কজ পাঠক এই প্রসঙ্গে আমাদের বলেন যে, জীবন ও মৃত্যু একে অপরের পরিপূরক। গীতাতেও শ্রীকৃষ্ণ সেই কথাই বলেছেন। সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে অবহিত নয়, তাই মৃত্যু ভয়ের দ্যোতক।গীতার মতে, মৃত্যু হল দেহ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া। যখন মানুষের শরীর বৃদ্ধ হয়, তখন আত্মা মৃত্যুর মাধ্যমে তার দেহ পরিবর্তন করে। এই জায়গায় এসে গরুড় পুরাণ আমাদের বিস্তারিত ভাবে বলছে যে মৃত্যুর সময় একজন মানুষ কেমন অনুভব করেন, কেন তিনি চিৎকার করেন এবং কেন একসময়ে কণ্ঠস্বর বন্ধ হয়ে যায়।গরুড় পুরাণ অনুসারে, শরীরের নিম্নপথ দিয়ে পাপী ব্যক্তির জীবন বের হয়। যখন একজন ব্যক্তির শেষ মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে, তখন যমরাজের দুজন দূত তার কাছে আসেন। গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে যে যমদূত দেখতে খুবই ভয়ানক এবং তাঁদের চোখ বড় বড়। যমরাজের এমন দূতদের দেখে পাপী প্রাণী ভয় পেয়ে প্রস্রাব করতে শুরু করে। মৃত্যুর সময় যমরাজের দূতরা সেই ব্যক্তির কাছে এসে তার প্রাণ কেড়ে নেয়। সেই সময় ব্যক্তিটি ১০০ বিছের হুল ফোটার সমান ব্যথা অনুভব করে। পাশাপাশি, ব্যক্তির মুখ ভিতর থেকে শুকিয়ে যেতে থাকে এবং লালা পড়তে শুরু করে।মৃত্যুর সময় বুড়ো আঙুলের মতো আকারের আত্মা শরীর থেকে চিৎকার করে বেরিয়ে আসে, যাকে যমরাজের দূতরা ধরে নিয়ে যায়। যমরাজের দূতরা সেই আত্মাকে বন্দী করে যমলোকের পথে যাত্রা করেন। মৃত্যুর পর, নরকে যাত্রা করতে গিয়ে যখন মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন যমরাজের দূতরা তাকে ভয় দেখায় এবং সেই পাপী প্রাণীটিকে নরকের দুর্দশার কথা বলে। এ সময়ে ব্যক্তি তার সমস্ত পাপ স্মরণ করে পথ হাঁটে, যা ভাবতেই তার হৃদয় কাঁপতে থাকে।গরুড় পুরাণ অনুসারে, যখন একজন মানুষ মারা যায়, তখন সেই ব্যক্তির মধ্যে একটি দিব্য ক্ষমতা দেখা দেয়। সেই সময়ে, জগৎ ব্যক্তির কাছে তার সমস্ত রহস্য এবং রূপ নিয়ে প্রশস্ত হতে শুরু করে, ব্যক্তি তার সারা জীবনের ঘটনা মনে করতে পারে। মুহুর্তের মধ্যে, ব্যক্তির সমগ্র জীবন তার চোখের সামনে পুনরাবৃত্ত হয়। এর পরে আত্মা দেহ ত্যাগ করলে শুরু হয় তার নতুন জীবনের যাত্রা।