কলকাতা: দেশে জুড়ে চলছে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের পর ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে ভোটদানের চিহ্নস্বরূপ যা শরীরে থেকে যায় তা হল, হাতের আঙুলে লাগানো এক বিশেষ কালি। এই কালি বলে দেয় আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ অর্থাৎ ভোটদান হয়েছে কিনা। বর্তমানে ভোট উৎসবে শামিল হয়ে বহু মানুষ এই আঙুলে লাগানো কালির ছবি সোশ্যাল মিডিয়া-সহ নানা মাধ্যমে শেয়ারও করে থাকেন। কিন্তু জানেন কি এই কালিতেই রয়েছে বিশেষ উপাদান! যে কারণে সহজে ওঠে না ভোটের এই কালি। বিশেষ নিরাপত্তায় রাখা হয় এই কালি, তাই খোলাবাজারে মেলে না ভোটে ব্যবহার করা কমলা বোতলের এই বিশেষ রাসায়নিক কালি।
ভোট গ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে ভোটদান সম্পন্ন হওয়ার চিহ্নস্বরূপ ভোটকর্মীরা হাতের আঙুলে লাগিয়ে দেন নীল রংয়ের এই কালি, যা শরীরে থেকে যায় ৭২ থেকে ৯৬ ঘণ্টা। ফলে ফলস ভোট দিতে আসা কোনও ব্যক্তিকে যাতে সহজেই চিহ্নিত করা যায় সেই কারণেই ১৯৬২ সালের নির্বাচনে চালু হয়েছিল এই বিশেষ কালির ব্যবহার। সেই থেকেই লোকসভা বা বিধানসভা-সহ যে কোন নির্বাচনে নিয়ম মেনে আজও অপরিবর্তিত ভাবে চলে আসছে এই পদ্ধতি।
আধুনিকতার ছোঁয়া লেগে অতীতের ব্যালট পেপার থেকে বর্তমানের ইভিএমে বোতাম টিপে ভোট দান হলেও, ভোটের কালির ব্যবহার কিন্তু একই রয়ে গিয়েছে। এমনকি ভোটের কালি নিয়ে কোনওরকম সমস্যা হলে, বন্ধ হয়ে যায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াও বলে জানা যায়। নির্বাচনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ এই রাসায়নিক কালিটির নাম ‘ইনডেলিবল ইঙ্ক’, যা ‘ভোটের কালি’ নামেই সকলে চেনেন।
তৎকালীন বাঙালি নির্বাচন কমিশনার সুকুমার সেন এই কালির ব্যবহার শুরু করেন বলেই জানা যায়। তবে কিভাবে এই কালি তৈরি করা হয় তা আজও সবার অজানা। ভারতে একমাত্র এই রাসায়নিক কালি তৈরি হয় কর্ণাটকের ‘মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড ভার্নিশ লিমিটেডে’ বা এমপিভিএল। যা শুধুমাত্র ব্যবহার করা হয় নির্বাচনের জন্যই। নির্বাচন কমিশন ছাড়া এই কালি কোথাও বিক্রি হয় না।
এবারের লোকসভা নির্বাচনের জন্য কমিশনের তরফ থেকে ২৬ লক্ষ ৫৫ হাজার বোতল ভোটের কালির বরাত দেওয়া হয়েছিল ওই সংস্থাকে। যার জন্য খরচ হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। ১০ মিলিগ্রাম বোতলের কালি দিয়ে প্রায় ৭০০ জন ভোটারের হাতে কালি লাগানো যায় বলেই জানান ভোট কর্মীরা।
কেন ওঠে না ভোটের কালি? কি বিশেষত্ব রয়েছে এই কালিতে? জানা যায়, ভোটের কালি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় সিলভার নাইট্রেট। যা মানব শরীরের চামড়ার সঙ্গে বিক্রিয়া করে স্থায়ী ভাবে রয়ে যায়। রোদের আলো পড়লেই বেগুনি কালি রং বদলে আরও গাঢ় কালচে-বাদামি রংয়ের চেহারা নেয়। এই কালি দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যালকোহলও ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে জানা যায়। কোনও সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ ঘষেও তোলা যায় না এই কালির দাগ। ভোটের কালি কীভাবে তোলা যায়, তা নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও, এখনও পর্যন্ত তার কোন গ্রহণযোগ্যতার প্রমাণ মেলেনি। ফলে শুধু ভারতের নির্বাচনে নয়, বিদেশেও ভোট প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা হয় এই কালি। তাই ভোট উৎসবে শামিল হওয়া ভোটারদের কাছে এই কালির চিহ্ন কিন্তু আলাদাই গুরুত্ব বহন করে, যা দেশেরও গর্ব।
Rudra Narayan Roy