কাল ভর্তি হবেন অর্ণব।

Arnab Dam Phd: জেলে থেকেই পিএইচডি প্রবেশিকায় প্রথম, ইতিহাস নিয়ে নজির গড়লেন মাওবাদী নেতা অর্ণব!

বর্ধমান: নজির সৃষ্টি করলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দি মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে পিইচডি করার যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন‌ একসময়ের এই মাওবাদী নেতা। অ্যাকাডেমিক স্কোর ও ইন্টারভিউয়ের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন তিনি। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৭৬.৮৬৭০। দ্বিতীয় স্থানাধিকারী পূজারিনী রায় পেয়েছেন ৭২.৪১১০। অনেকটা বেশি নম্বর অর্ণবের।

বাম আমলে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের শিলদায় ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালায় মাওবাদীরা৷ মৃত্যু হয় ২৪ জন জওয়ানের৷ পাল্টা গুলিতে মৃত্যু হয় পাঁচ জন মাওবাদীরও৷ এই হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন অর্ণব৷ ৷

আরও পড়ুন: টানা ৯ ঘণ্টা কাজ, অবসাদে ‘আত্মহত্যা’ করল রোবট! চাপের কাছে হার মানল যন্ত্রও?

এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই মামলায় সাজা ঘোষণা করে আদালত৷ যাবজ্জীবন জেলের সাজা হয় অর্ণবের৷ গত মার্চ মাসে তাঁকে মেদিনীপুর সংশোধনাগার থেকে নিয়ে আসা হয় চুঁচুড়া সংশোধনাগারে৷ সাজা ঘোষণার সময়ই বিচারককে পিএইচডি করার ইচ্ছের কথা জানিয়েছিলেন অর্ণব৷ চুঁচুড়া জেলে এসেও জেল কর্তৃপক্ষকে সেই ইচ্ছের কথা জানান তিনি৷ সংশোধনাগারের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করেন তিনি৷

শেষ পর্যন্ত আদালতের অনুমতি নিয়ে গত বুধবার পুলিশি নিরাপত্তায় বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে পিএইচডি-র জন্য ইন্টারভিউ দেন অর্ণব৷ অর্ণব ছাড়াও পিএইচডি করার জন্য আবেদন করেছিলেন ২২০ জন৷ পিএইচডি-র জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা মাত্র ৯টি৷ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বছর কারা পিএইচডি-তে সুযোগ পেলেন, সেই তালিকা গতকাল প্রকাশিত হয়৷ সেখানেই এক নম্বরে নাম ছিল অর্ণবের৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সৈয়দ তনভির নাসরিন বলেন, “খুবই মেধাবী অর্ণব। আমাদের বিভাগে গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন। পিইচডিতে ভর্তির ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭০ শতাংশ অ্যাকাডেমিক স্কোর থেকে হয়। আর ইন্টারভিউতে থাকে ৩০ নম্বর। সব মিলিয়ে অর্ণব সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন। এটা একটা খুবই ভাল দিক। তবে উনি এখানে পিএইচডি করলে সেটা ইতিহাস হয়ে থাকবে।”

গড়িয়ার বাসিন্দা অর্ণব খড়্গপুর আইআইটিতে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু মাঝপথেই পহাশোনা ছেড়ে নিরুদ্দেশ‌ হয়ে যান। বেশ কয়েকবছর পর মাওবাদী নেতা হিসেবে উত্থান ঘটে অর্ণবের। নাম হয় বিক্রম। মাও নেতা কিষেনজির ঘনিষ্ঠও ছিলেন। শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা সহ একাধিক মাওবাদী হামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন অর্ণব। ২০১২ সালে আসানসোলে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তিনি। যাবজ্জীবন সাজাও হয় তাঁর। সংশোধনাগার থেকেই ফের পড়াশোনা শুরু করেন অর্ণব। মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেন তিনি। সবেতেই ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন। প্রায় ৪০ বছর বয়সে সেট পরীক্ষা পাশ করেছেন।

অর্ণবের এই নজিরের পর মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিৎ শূর অর্ণবের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন৷ বিবৃতি দিয়ে এপিডিআর-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘অর্ণব দাম এখন হুগলি জেলে আন্দোলনের মধ্যে আছে। বিভিন্ন দাবিতে ও প্রতিদিন একবেলার খাবার বয়কট করছে। ওর দাবি হল, কর্তৃপক্ষ ওকে জেলে যে কাজ দিয়েছে তার জন্য ওকে প্রথম তিন মাসের মজুরি দিতে অস্বীকার করছে। ওঁর দাবি সেই মজুরি ওকে দিতে হবে। জেলে চিকিৎসা ব্যবস্থা বলে কিছু নেই, বন্দিদের জন্য ২৪ ঘণ্টা ডাক্তারের ব্যবস্থা করতে হবে। জেলের ধারণক্ষমতার তুলনায় বন্দি সংখ্যা অনেক বেশি। বন্দি সংখ্যা কমাতে হবে। বন্দি সংখ্যা বেশি হওয়ায় জেলে খাবারের মান ও অন্যান্য প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সমস্ত দাবি এবং সঙ্গে ওঁর পিএইচডি-র জন্য অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যে আবেদন করেছে সেই আবেদন গুলি নিয়েও জেল কর্তৃপক্ষ যাতে তদ্বির করে তার ব্যবস্থা করতে হবে। এই দাবিগুলি নিয়ে গত শুক্রবার থেকে অর্ণব খাবার বয়কট আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা দাবি করছি জেল কর্তৃপক্ষ ওর এই দাবিগুলি মেনে নিক এবং ওকে নি:শর্তে মুক্তি দিক।’