কাঁচের গ্লাসে হাতুড়ি দিয়ে ঢুকে লিখছেন মালিকের নাম

Engraving Artist: কাঁচে বা ধাতুতে হাতুড়ি ও ছেনি ঠুকে ইনি ৩০ বছর ধরে করে চলেছেন নিখুঁত কাজ!

নদিয়া: হাতুড়ি দিয়ে লোহার সরু সূচালো ছেনির ওপর মারছেন ঘাঁ। ছেনির সূচালো অংশটি দাগ ফেলছে কাঁচের গ্লাসের গায়ে। আর তাতেই ফুটে উঠছে শিল্পীর কারুকার্যের নিদর্শন। তবে আশ্চর্যের বিষয় ছেনির আঘাতে কোনরকম কাঁচের গ্লাসে চির ধরছে না কিংবা ফেটে যাচ্ছে না। বরং তৈরি হচ্ছে সুন্দর একটি ফুলের চিত্র এছাড়াও সেই গ্লাসের মালিকের নাম। নদিয়ার নবদ্বীপের বাসিন্দা শিব শংকর ভট্টাচার্য। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে তিনি এই কাজই করে যাচ্ছেন। তার হাতের কাজ দেখা যায় কারোর সাইকেলের হ্যান্ডেলে কিংবা কাঁসা-পিতলের বাসনপত্রে অথবা কাঁচের গ্লাসে। এক ডাকে তাকে সকলেই চেনে তার এই অভিনব প্রতিভার জন্যেই। তার কাজ ছড়িয়ে রয়েছে জেলা ছাড়িয়ে বাংলার বিভিন্ন জায়গায়। সূক্ষ্ম ছেনি দিয়ে টুকটুক করে তার ওপর হাতুরের আঘাত মেরে তিনি লিখে দেন মালিকের নাম এবং পাশাপাশি বিভিন্ন চিত্রকলা। কাঁচের গ্লাস হোক কিংবা মোবাইল ফোন অথবা শখের গাড়ি বা সাইকেল প্রত্যেকটি জিনিসের মধ্যেই তিনি নিখুঁতভাবে লিখে দিতে পারেন মালিকের নাম অথবা যে কোন চিত্র। তবে সেই বস্তুটি লোহার আঘাতে বিন্দুমাত্র খারাপ হয় না বলেই দাবি তার।

আরও পড়ুন:  খেলায় নয় এবার লিগ বাদ্যযন্ত্রে! হারমনিকার লিগ নদিয়ায়

এই অভিনব প্রতিভা অন্যান্য রাজ্যে দেখা গেলেও বাংলায় খুব কম লোকেরই রয়েছে। দুপুর বেলা মাঝেমধ্যেই পাড়া গ্রামে হাঁক দেন তিনি! তখনই বোঝা যায় শিব শংকর বাবু এসেছেন। শখের জিনিসপত্র নিয়ে হাজির হয়ে যায় এলাকার মানুষজন তাতে নিজেদের নাম লিখাতে। শিব শংকর বাবু জানান, এর আগে তিনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই শিল্পকলার শিক্ষকতা করেছেন বেশ কিছু সময় ধরে। তবে এখন বয়সের ভারে বিশেষ কোনও কাজ তার আর নেই। তবে ভোলেননি নিজের প্রতিভা, তার জোরেই কোনরকম দুবেলা দুটো ভাতের জোগাড় তিনি করে থাকেন লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাম লিখে। তবে সাইকেল অথবা বাসনপত্রে নাম লেখার প্রচলন এক কালে খুব বেশি মাথায় থাকলেও এখন আর খুব বেশি দেখা যায় না। তাও বিভিন্ন ক্যাটারিং সংস্থা নিজের বাসনপত্রে এবং অনুষ্ঠানের আয়োজক সংস্থা তাদের মেডেল অথবা মেমেন্টোতে কখনো কখনও নাম লেখানোর জন্যে তাকে ডেকে পাঠান। এভাবেই চলে বর্তমানে তার সংসার।

আরও পড়ুন: ভাসা জাল দিয়ে মাছ ধরেই হবে পুজোর নতুন পোশাক! কী এই ভাসা জাল?

শিব শংকর বাবু তার শিল্পকলার জন্য একাধিক পুরস্কার এর আগে পেয়েছেন। তবে বর্তমানে আর্থিকভাবে তিনি অস্বচ্ছল। তার দাবি কোন সরকারি আর্থিক অনুদান কিংবা তাদের শিল্পকলার কোন কর্মসংস্থান যদি তিনি পান তাহলে বাকি জীবনটা একটু স্বাচ্ছন্দ্যে কাটাতে পারেন তিনি। তবে সে আশা তার প্রায় আর নেই বললেই চলে। বয়সের ভার বাড়লেও আজও তার হাত ছেনি আর হাতুড়ি ধরলে থাকে একদম স্থির। আর তাই ৩০ বছরের আগের মতো এখনও তার শিল্পকলা খোদাই করে চলেছেন বহু মানুষের শখের বস্তুর উপরে।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F

Mainak Debnath