ব্রিটিশ আমলের ন্যারোগেজ ট্রেন

Nadia News: ব্রিটিশ আমল থেকে চলতো নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর রুটের অদ্ভুত ‘এই’ ট্রেন! দেখেছেন কি?

সময়টা গত শতকের সত্তরের দশক। নবদ্বীপের গঙ্গার অপর পাড়ে স্বরূপগঞ্জ। এই স্বরূপগঞ্জেই ছিল ঝোপঝাড় আর বটের ঝুড়ির আবছায়ার ভেতর নবদ্বীপ ঘাট রেলস্টেশন। খেলনা বাড়ির মতো ছোটো লাল স্টেশনঘরের সামনে সরু সরু দু-সারি রেললাইন। একটু দূরে গিয়ে মিলে গেছে একসঙ্গে। এ লাইনের দৌড় শান্তিপুর পর্যন্ত। মাঝে কৃষ্ণনগর সিটি জংশন। তার ওপাশে দিগনগর, এপাশে আমঘাটা আর মহেশগঞ্জ স্টেশন। এই হল আঠাশ কিলোমিটারের ছোট্ট এই রেলপথের গতিপথ। ছবি ও তথ্য: মৈনাক দেবনাথ
সময়টা গত শতকের সত্তরের দশক। নবদ্বীপের গঙ্গার অপর পাড়ে স্বরূপগঞ্জ। এই স্বরূপগঞ্জেই ছিল ঝোপঝাড় আর বটের ঝুড়ির আবছায়ার ভেতর নবদ্বীপ ঘাট রেলস্টেশন। খেলনা বাড়ির মতো ছোটো লাল স্টেশনঘরের সামনে সরু সরু দু-সারি রেললাইন। একটু দূরে গিয়ে মিলে গেছে একসঙ্গে। এ লাইনের দৌড় শান্তিপুর পর্যন্ত। মাঝে কৃষ্ণনগর সিটি জংশন। তার ওপাশে দিগনগর, এপাশে আমঘাটা আর মহেশগঞ্জ স্টেশন। এই হল আঠাশ কিলোমিটারের ছোট্ট এই রেলপথের গতিপথ।
ছবি ও তথ্য: মৈনাক দেবনাথ
সময়মতো পৌঁছে যেতে পারলে লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত খয়েরি রঙের তিন কামরার রেলগাড়িটিকে। ইঞ্জিনের গায়ে, এখনও মনে পড়ে, লেখা থাকত বড়ো বড়ো দুটো ইংরেজি অক্ষর ER । আদতে মার্টিন কোম্পানির তৈরি এই রেলপথ স্বাধীনতার পরে ইস্টার্ন রেলওয়ের আন্ডারে চলে গিয়েছিল।
সময়মতো পৌঁছে যেতে পারলে লাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত খয়েরি রঙের তিন কামরার রেলগাড়িটিকে। ইঞ্জিনের গায়ে, এখনও মনে পড়ে, লেখা থাকত বড়ো বড়ো দুটো ইংরেজি অক্ষরের । আদতে মার্টিন কোম্পানির তৈরি এই রেলপথ স্বাধীনতার পরে ইস্টার্ন রেলওয়ের আন্ডারে চলে গিয়েছিল।
আমাদের টিকিট কাটার বালাই ছিল না। স্কুল পালানো বন্ধুদের সঙ্গে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম ট্রেন ছাড়ার। আর ছাড়ামাত্র লাফিয়ে উঠতাম ট্রেনে। ঝিকুর ঝিকুর শব্দে বুনো গাছপালা আর বটের ঝুরি ভেদ করে ট্রেন এসে পড়ত ফকিরতলায়, কৃষ্ণনগর যাওয়ার পাকা রাস্তায়। মহেশগঞ্জ বা আমঘাটা স্টেশনে পৌঁছোনোর আগেই টুপ করে লাফিয়ে নেমে পড়তাম। ঘণ্টায় পনেরো কিলোমিটার যার সর্বোচ্চ গতি, সেই চলন্ত গাড়ি থেকে স্কুলবালকের পক্ষে লাফিয়ে নামা খুব কঠিন ছিল না। তার পর সারা দুপুর কোনো আমের বাগানে বা সরষে খেতের আলপথে জলঙ্গির পাড়ে পাড়ে কেটে যেত।
আমাদের টিকিট কাটার বালাই ছিল না। স্কুল পালানো বন্ধুদের সঙ্গে দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম ট্রেন ছাড়ার। আর ছাড়ামাত্র লাফিয়ে উঠতাম ট্রেনে। ঝিকুর ঝিকুর শব্দে বুনো গাছপালা আর বটের ঝুরি ভেদ করে ট্রেন এসে পড়ত ফকিরতলায়, কৃষ্ণনগর যাওয়ার পাকা রাস্তায়। মহেশগঞ্জ বা আমঘাটা স্টেশনে পৌঁছোনোর আগেই টুপ করে লাফিয়ে নেমে পড়তাম। ঘণ্টায় পনেরো কিলোমিটার যার সর্বোচ্চ গতি, সেই চলন্ত গাড়ি থেকে স্কুলবালকের পক্ষে লাফিয়ে নামা খুব কঠিন ছিল না। তার পর সারা দুপুর কোনো আমের বাগানে বা সরষে খেতের আলপথে জলঙ্গির পাড়ে পাড়ে কেটে যেত।
ছোটো রেললাইনের পোশাকি নাম ন্যারো গেজ বা লাইট রেলওয়ে। বড়ো ট্রেনের দুই লাইনের মাঝখানের যে দূরত্ব এখানে তা অনেক কম। নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুরের যেমন ছিল আড়াই ফূট। সমতল বাংলায় এই রেলের আর অস্তিত্ব নেই এখন। একমাত্র টিকে আছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, পাহাড়ি পথে, সমস্যাকীর্ণ হয়ে।
ছোটো রেললাইনের পোশাকি নাম ন্যারো গেজ বা লাইট রেলওয়ে। বড়ো ট্রেনের দুই লাইনের মাঝখানের যে দূরত্ব এখানে তা অনেক কম। নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুরের যেমন ছিল আড়াই ফূট। সমতল বাংলায় এই রেলের আর অস্তিত্ব নেই এখন। একমাত্র টিকে আছে দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, পাহাড়ি পথে, সমস্যাকীর্ণ হয়ে।
ছোটোবেলার স্কুল পালানোর দিনগুলোর পরেও একটু বড়ো হয়ে সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে এই রেলে চেপে গিয়েছি শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর কিংবা কাছের কোনো গ্রামে। দেখতাম, ধানের বস্তা, আলুর ঝুড়ি, বোঁচকাবুঁচকি, বউ-ছেলেপুলে নিয়ে নিশ্চিন্ত যাত্রীদের জন্যে সেখানে মজুত থাকত হরেকরকম মজা। সে নানারকম কারসাজি করা হকারই হোক, বহুরূপী কালী-দুর্গাই হোক বা ভুজুংভাজুং দেওয়া মাদুলি বিক্রেতাই হোক।
ছোটোবেলার স্কুল পালানোর দিনগুলোর পরেও একটু বড়ো হয়ে সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে এই রেলে চেপে গিয়েছি শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর কিংবা কাছের কোনো গ্রামে। দেখতাম, ধানের বস্তা, আলুর ঝুড়ি, বোঁচকাবুঁচকি, বউ-ছেলেপুলে নিয়ে নিশ্চিন্ত যাত্রীদের জন্যে সেখানে মজুত থাকত হরেকরকম মজা। সে নানারকম কারসাজি করা হকারই হোক, বহুরূপী কালী-দুর্গাই হোক বা ভুজুংভাজুং দেওয়া মাদুলি বিক্রেতাই হোক।
যদিও তার অনেক আগে থেকেই ছোটো রেলের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। দেশের স্বাধীনতার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নততর করতে এগুলোকে ব্রডগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা হচ্ছিল। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মোটরচালিত যানবাহনের বাড়বাড়ন্তও এদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
যদিও তার অনেক আগে থেকেই ছোটো রেলের নাভিশ্বাস উঠতে শুরু করেছিল। দেশের স্বাধীনতার পরে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নততর করতে এগুলোকে ব্রডগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা হচ্ছিল। সড়ক ব্যবস্থার উন্নতির ফলে মোটরচালিত যানবাহনের বাড়বাড়ন্তও এদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলেছিল।
তবু এসবের মধ্যেও নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর, বর্ধমান-কাটোয়া ও আহমেদপুর-কাটোয়া লাইন তিনটি বরাতজোরে একুশ শতকের এক দশক পার করতে পেরেছিল। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চালু ছিল নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর লাইনের ছোটো রেলগাড়ি। তবে বড়োই অবহেলায় অসম্মানে। শেষের দুই-আড়াই দশক পুরোনো স্টিম ইঞ্জিন আর খয়েরি কামরার জায়গা নিয়েছিল ডিজেলের রেল-বাস। তারও দেখভাল ছিল না। কৃষ্ণচূড়া, বাবলা কিংবা শিরীষ গাছের নীচে ছোটো ছোটো স্টেশনগুলো লোকাভাবে ধুলোমলিন আর ভগ্নপ্রায় হয়েছে। তবু এই লাইন একটা যুগের পরম্পরা টেনে চলেছিল।
তবু এসবের মধ্যেও নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর, বর্ধমান-কাটোয়া ও আহমেদপুর-কাটোয়া লাইন তিনটি বরাতজোরে একুশ শতকের এক দশক পার করতে পেরেছিল। ২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চালু ছিল নবদ্বীপ ঘাট-শান্তিপুর লাইনের ছোটো রেলগাড়ি। তবে বড়োই অবহেলায় অসম্মানে। শেষের দুই-আড়াই দশক পুরোনো স্টিম ইঞ্জিন আর খয়েরি কামরার জায়গা নিয়েছিল ডিজেলের রেল-বাস। তারও দেখভাল ছিল না। কৃষ্ণচূড়া, বাবলা কিংবা শিরীষ গাছের নীচে ছোটো ছোটো স্টেশনগুলো লোকাভাবে ধুলোমলিন আর ভগ্নপ্রায় হয়েছে। তবু এই লাইন একটা যুগের পরম্পরা টেনে চলেছিল।