কলকাতা Narco Test-RG Kar Case: সন্দীপ ঘোষেরও নার্কো টেস্ট করাতে চায় সিবিআই! কী এই নার্কো টেস্ট? সব সত্যি বলে দেবে অভিযুক্ত? পলিগ্রাফের থেকেও কতটা নিখুঁত? Gallery September 22, 2024 Bangla Digital Desk নিজের লিভ-ইন সঙ্গীকে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল আফতাব আমিন পুনাওয়ালার বিরুদ্ধে। এখানেই শেষ নয়, সঙ্গীকে খুন করে তাঁর দেহাংশ দক্ষিণ দিল্লির ছতরপুরের জঙ্গলে তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল। সেই অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালার নার্কো এবং পলিগ্রাফ টেস্ট করতে চেয়েছিল দিল্লি পুলিশ। শুধু তাই নয়, কলকাতার আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাতেও মূল অভিযুক্ত সহ একাধিক জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করা হচ্ছে। একই সঙ্গে উঠে আসছে নার্কো টেস্টের কথাও। কিন্তু এই নার্কো ও পলিগ্রাফ টেস্টের মধ্যে তফাৎ কী? কোনটা অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে বেশি কার্যকরী? নার্কো এবং পলিগ্রাফ অথবা লাই ডিটেক্টর টেস্ট আসলে কী? এর মধ্যে ফারাকই বা কতটা? সেটাই ব্যাখ্যা করছে News18 ডিজিটাল। নার্কো এবং পলিগ্রাফ টেস্ট কী? নার্কোটিক অ্যানালিসিস পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয় সোডিয়াম পেন্টোথ্যাল। যা ট্রুথ সিরাম নামেও পরিচিত। এই মেডিকেশনের মাধ্যমে কোনও মানুষের আত্মসচেতনতা হারিয়ে যায়। যার ফলে তিনি মনের কথা বলে দিতে পারেন। আর আত্মসচেতনতা হারিয়ে গেলে মানুষটি হিপনোটিক বা সম্মোহনের অবস্থায় প্রবেশ করেন। এবার পরীক্ষকরা প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে সঠিক তথ্য বার করে আনেন। এই পরীক্ষা চলাকালীন সেখানে উপস্থিত থাকতে পারেন একজন সাইকোলজিস্ট, একজন তদন্তকারী অফিসার অথবা ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ। তেলঙ্গানা টুডে-র মতে, তদন্তকারী সংস্থাগুলি দ্বারা ব্যবহৃত সুপরিচিত অন্যান্য থার্ড-ডিগ্রি ট্রিটমেন্টের কার্যকর বিকল্প এটি।এই পরীক্ষায়, সোডিয়াম পেন্টোথাল, যা ‘ট্রুথ সিরাম’ নামেও পরিচিত, একটি সম্মোহনী অবস্থা প্ররোচিত করতে এবং কল্পনা নিষ্ক্রিয় করার জন্য ব্যক্তির মধ্যে ইনজেকশন দেওয়া হয়। তথ্য অনুযায়ী, এটি করার মাধ্যমে ব্যক্তি মনের অচেতন অবস্থায় সত্য কথা বলেন। এই ওষুধটি অস্ত্রোপচারের সময় অ্যানেস্থেশিয়া হিসাবে উচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হয়। এদিকে আবার লাই ডিটেক্টরও পলিগ্রাফ নামেই পরিচিত। এটা একটা ডিভাইস। যখন এই টেস্টের মধ্যে দিয়ে যাওয়া কেউ প্রশ্নের জবাব দেন, তখন তাঁর ব্লাড প্রেশার, পালস রেট এবং রেসপিরেশনের মতো শারীরিক অবস্থা রেকর্ড করে এই যন্ত্রটি। তিনি আদৌ সত্যি বলছেন কি না, সেটাও বোঝা যায় এর থেকে। ১৯২৪ সাল থেকে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ এবং তদন্তে তা ব্যবহার করা হয়ে আসছে। যদিও ব্রিটানিকার ব্যাখ্যা, বিষয়টি যথেষ্ট বিতর্কিত। যা বিচারব্যবস্থায় সব সময় গ্রাহ্যও করা হয় না। এই পরীক্ষাগুলির ফারাক এবং আইনের দৃষ্টিভঙ্গি: যদিও নার্কো টেস্টের ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে থাকা ব্যক্তির চেতনার পরিবর্তন ঘটাতে নার্কোটিক্স ব্যবহার করা হয়। আবার সত্য নির্ধারণের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে থাকা ব্যক্তির শারীরবৃত্তীয় চিহ্নের উপর নির্ভর করে পলিগ্রাফ পরীক্ষা। এই পদ্ধতিগুলির কোনওটিই বৈজ্ঞানিক ভাবে ১০০ শতাংশ সফল বলে প্রমাণিত হয়নি এবং এগুলি চিকিৎসা ক্ষেত্রেও যথেষ্ট বিতর্কিত। এদিকে সেলভি বনাম কর্ণাটক রাজ্য এবং এএনআর মামলায় (২০১০) সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, অভিযুক্তের সম্মতি ছাড়া কোনও লাই ডিটেক্টর পরীক্ষা করা যাবে না। স্বেচ্ছাসেবকদের অবশ্যই একজন আইনজীবীর কাছে অ্যাক্সেস থাকতে হবে এবং পরীক্ষার শারীরিক, মানসিক এবং আইনগত প্রভাবগুলি পুলিশ এবং আইনজীবী তাঁদের ব্যাখ্যা করেছেন। এই পরীক্ষার ফলাফলকে কনফেশন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। কিন্তু এই ধরনের স্বেচ্ছায় পরিচালিত পরীক্ষার ফলে আবিষ্কৃত যে কোনও তথ্য বা উপাদান প্রমাণ হিসেবে স্বীকার্য। সুপ্রিম কোর্টের ২০ (৩) ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনও আসামীকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। ১৯৯৭ সালে ডি.কে. বসু বনাম পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে যে, পলিগ্রাফ এবং নার্কো পরীক্ষার অনিচ্ছাকৃত প্রশাসন সংবিধানের ২১ ধারা বা জীবন ও স্বাধীনতার অধিকারের অধীনে নিষ্ঠুর, অমানবিক এবং অবমাননাকর আচরণ গঠন করেছে। এটি গোপনীয়তার অধিকারও লঙ্ঘন করতে পারে। যা জীবনের অধিকারের অন্যতম পরিচায়ক। এই পরীক্ষার ফলাফল ১৮৭১ সালের ভারতীয় প্রমাণ আইনের অধীনে প্রমাণ হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়। নার্কো পরীক্ষার পদ্ধতি: নার্কো পরীক্ষায় বিষয়বস্তুকে তখনই পরীক্ষা করা হবে, যখন তিনি শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকবেন। হিপনোটিক সোডিয়াম পেন্টোথ্যাল বা থিওপেন্টোন জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে থাকা ব্যক্তির শরীরে প্রবেশ করানো হবে। তাঁর বয়স, লিঙ্গ এবং শারীরিক অবস্থার উপর ভিত্তি করেই ডোজ নির্ধারণ করা হয়। ডোজ পরিমিত পরিমাণেই হওয়া আবশ্যক। কারণ ভুল ডোজের জেরে মৃত্যু অথবা কোমায় চলে যেতে পারেন ব্যক্তি। এই পরীক্ষার কালে অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া উচিত। ব্যক্তিকে এমন অবস্থায় রাখা হয়, যেখানে ওষুধটি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়ার পরে তাঁরা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। পলিগ্রাফ পরীক্ষা: HowStuffWorks-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে, জিজ্ঞাসাবাদের অধীনে থাকা ব্যক্তির শরীরে পলিগ্রাফ পরীক্ষার সময় ৪ থেকে ৬টি সেন্সর লাগানো থাকে। পলিগ্রাফ আসলে একটি মেশিন। যা চলমান কাগজের একক স্ট্রিপে সেন্সর থেকে একাধিক (পলি) সঙ্কেত রেকর্ড করে (গ্রাফ) একাধিক সিগনাল রেকর্ড করে। এর মধ্যে অন্যতম হল, ১. ব্যক্তির শ্বাসপ্রশ্বাসের হার ২. ব্যক্তির পালস রেট ৩. ব্যক্তির রক্তচাপ ৪. ব্যক্তির ঘাম ৫. পলিগ্রাফের মাধ্যমে কখনও কখনও হাত-পা সঞ্চালনও রেকর্ড করা হয়ে থাকে। যিনি প্রশ্ন করেন, তিনি তিনটি অথবা চারটি সহজ-সরল প্রশ্ন করেন। যা পলিগ্রাফ পরীক্ষা শুরুর সময়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্কেতের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এরপর পরীক্ষক আসল প্রশ্নে ঢুকে পড়েন। গোটা পর্বে একটি চলমান কাগজে ব্যক্তির সমস্ত সিগনাল রেকর্ড হয়ে যায়।