নিউটাউন: নাকা চেকিংয়ের সময় অ্যাপ ক্যাবে তল্লাশি চালাতেই গোটা ঘটনার পর্দাফাঁস। নিউ টাউনে খালের ধারে ট্রলির ভিতর বৃদ্ধের দেহ উদ্ধারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রহস্য উন্মোচন করল বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের অন্তর্ভুক্ত টেকনোসিটি থানার পুলিশ। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত সৌম্যকান্তি জানাকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
জানা গিয়েছে, ধৃত একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের নিমতা শাখার কর্মী। ধৃতকে রবিবার বারাসত আদালতে তোলা হলে বিচারক ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। এদিন টেকনোসিটি থানায় একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে নিউটাউনের ডেপুটি কমিশনার মানব সিঙ্গলা বলেন, ‘ধৃতের সঙ্গে নিহত বৃদ্ধের দেড় থেকে দু’বছরের পরিচয়। দু’জনের মধ্যে আর্থিক বিবাদ ছিল। ধৃতের থেকে বৃদ্ধ প্রাপ্য টাকা পেতেন। প্রাথমিক তদন্তে এমনই তথ্য উঠে এসেছে। তবে কত টাকার জন্য এই খুন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
আরও পড়ুন: ট্রলি ব্যাগে মৃতদেহ, নিউ টাউনের খুনের কিনারা করল পুলিশ! কেন খুন? জানলে শিউরে উঠবেন
এদিন অ্যাপ ক্যাবটির পরীক্ষা করে নমুনা সংগ্রহ করেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। পুলিশ জানিয়েছে, বৃদ্ধের মাথায় গভীর ক্ষত ছিল। মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করা হয়েছে। তবে এদিন সন্ধে পর্যন্ত কোনও অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। প্রাথমিকভাবে তদন্তকারীদের ধারণা, জোরে ধাক্কা দেওয়ায় বৃদ্ধের মাথা ফেটে গেছিল। তার জন্যই মাথায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। ডিসি (নিউটাউন) জানান, ২২ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে সুবোধ সরকার (৮২)–এর খুন করে সৌম্যকান্তি। ব্যারাকপুর থানা এলাকায় যেখানে ধৃত থাকত, সেখানেই খুন বলে অনুমান।
এরপর লাল রঙের নতুন ট্রলিতে মৃতদেহ ভরে লোপাটের পরিকল্পনা করে সে। সন্ধে ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার মধ্যে সে আন্তঃশহর অ্যাপ ক্যাব বুক করে। চালকের সহযোগিতায় গাড়ির ডিকিতে ট্রলিটি তোলে সৌম্যকান্তি। ক্যাব চালক ট্রলির ওজন বেশি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করায় ধৃত যুবক বলে, ‘এর ভিতর বেশকিছু ভারী বই রয়েছে।’ রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে কারিগরি ভবনের পিছনে পাচুরিয়া খালের ১৫০ মিটার আগে চালককে গাড়ি থামাতে বলে সৌম্যকান্তি। জানায়, ‘তুমি একটু দাঁড়াও। আমি ট্রলিটি এক আত্মীয়ের বাড়িতে দিয়েই আবার আসছি।’
এরপর খালে মৃতদেহটি ফেলে সে ওই অ্যাপ ক্যাবে চেপে এগরার উদ্দেশে রওনা দেয়। এতটা রাস্তা ভাগাভাগি করে চালানোর জন্য গাড়িতে চালকের এক বন্ধুও ছিল।
এদিকে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ দেহ উদ্ধারের পর সিসিটিভি ফুটেজে বিধাননগর এলাকায় অ্যাপ ক্যাবটি দেখা যায়। পরে জানা যায়, ওইদিন ভোরে পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানা এলাকায় নাকা তল্লাশির সময় গাড়িটি আটক করা হয়েছে। ডিকির ম্যাট তুলতেই দেখা যায় চাপ–চাপ রক্ত।
তখন গাড়িচালক পুলিশকে গোটা ঘটনা জানান। তড়িঘড়ি টেকনোসিটি থানার পুলিশের একটি দল সেখানে পৌঁছে সৌম্যকান্তিকে গ্রেফতার করে। ডিসি (নিউটাউন) মানব সিঙ্গলা বলেন, ‘আপাতত ব্যাঙ্ক কর্মীকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কেউ আটক নেই। তদন্ত চলছে।’ এদিন উপস্থিত ছিলেন নিউটাউনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার উৎসা শ্রীমানি ও টেকনোসিটি থানার ইনস্পেক্টর ইনচার্জ সোমনাথ ভট্টাচার্য।