অন্ধকারে ডুবে গোটা গ্রাম

North 24 Parganas News: দুর্গম কোনও প্রান্তর নয়, শহরের কিছু দূরেই এই গ্রামে আজও পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ! কোথায় জানেন?

উত্তর ২৪ পরগনা: পাহাড় পর্বত বা নির্জন কোন দ্বীপ নয়, এ ছবি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা সদর শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরত্বের। যেখানে সন্ধ্যা নামলে যেন বিভীষিকা গ্রাস করে গোটা গ্রামের মানুষদের। আর এভাবেই কেটে গিয়েছে দু’দশক। এখনও আলোর মুখ দেখেনি এই গ্রামের মানুষজন। গেছে চরম গরম, সেই গরমেও যেখানে কিছু সময় পাখার হাওয়া ছাড়া কাটানো অসম্ভব, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে দিনের পর দিন এই গ্রামের শিশু থেকে বয়স্ক সকল মানুষদেরই কাটাতে হয়েছে দুর্বিষহ জীবন।

আরও পড়ুনঃ ‘বীজেই’ হবে কেল্লাফতে! কেজি কেজি মেদ ঝরবে ৭দিনে, ফিগার হবে ‘করিনা-দীপিকার’ মতো

প্রশাসন থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবাইকে দরবার জানিয়েও দীর্ঘ বছর অতিক্রান্ত হলেও গ্রামে পৌঁছয়নি বিদ্যুৎ। এমনই ছবি বেড়াচাঁপা এক নম্বর পঞ্চায়েতের মির্জানগর সর্দারপাড়ার। বিদ্যুৎ না থাকায় আত্মীয় পরিজনরাও একপ্রকার সম্পর্ক রাখতে চান না এই গ্রামের মানুষদের সঙ্গে, বিয়ে হয়ে যাওয়া মেয়েদের বাপের বাড়িতে পাঠান হয় না শ্বশুরবাড়ির তরফে। চলে না পাখা, জলে না আলো। রাতে বাধ্য হয়ে বাড়ির শিশু থেকে বয়স্ক, এমনকী মহিলাদেরও শুতে হয় বাইরে চাতালে। উপরি পাওনা হিসেবে এলাকায় রয়েছে সাপের ভয়। দিন থাকতে থাকতেই প্রয়োজনীয় সমস্ত কাজ মিটিয়ে, সন্ধ্যে নামলেই লম্ফো বা মোমবাতির আলো জ্বলে ওঠে।

দূরে বিদ্যুতের আলোর ঝিলিক দেখা গেলেও, সে আলো পৌঁছয় না এই গ্রামে। সর্দারপাড়ার এই গ্রামে প্রায় ৩০ টি পরিবারের বসবাস। কোন পরিবারের ঘরেই জলে না আলো। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও গ্রামটির ২০০ মিটারের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মার। আর তার কিছুটা দূরেই বিদ্যুৎ দফতর। তবুও গত কুড়ি বছর ধরে চির আঁধারে ডুবে সর্দারপাড়া।

গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বারংবার বিভিন্ন দফতরে দরবার করা হলেও, আজও আসেনি বিদ্যুৎ। সর্দারপাড়ার চারিদিক ঘিরে কৃষিজমি। অভিযোগ, জমির মালিকরা চান না কৃষিযোগ্য জমিতে ইলেকট্রিকের পোস্ট বসুক। আর তাই বিদ্যুতের পোল বসানো না যাওয়ার কারণেই প্রদীপের নীচে অন্ধকারের মতো পড়ে রয়েছে ‘অভিশপ্ত’ এই ৩০ টি বাড়ি। বিষয়েটি নিয়ে দেগঙ্গার বিডিও ফাহিম আলমের প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে, তিনি বিষয়টি জেনে অবশ্য ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।

বাসন্তী মুণ্ডা নামে ওই গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ভোট এলে নেতারা প্রতিশ্রুতি দেন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের। কিন্তু ভোট গেলেই একই অবস্থা। সন্ধ্যার পর লণ্ঠন, হ্যারিকেন, মোমবাতি জ্বালাতে হয় তাদের। মূল্যবৃদ্ধির এই সময়ে জ্বালানি খরচ বাঁচাতে সন্ধ্যার পর আর বেশিক্ষণ জাগেন না এই গ্রামের মানুষেরা বলেই জানান গ্রামের আরেক বাসিন্দা রীতা কাহার। এমন অবস্থা যে, জামাই বা শ্বশুরবাড়ির কেউ আসতে চায় না। গরমে নাজেহাল অবস্থা শিশু থেকে বৃদ্ধ গ্রামবাসীদের। এ জীবনে আদেও কি এই গ্রামের মানুষজন দেখতে পাবেন বিদ্যুতের আলো! এখন যেন সেই প্রশ্নই তুলছেন অন্ধকারে ডুবে থাকা এই গ্রামের মানুষজন।

Rudra Narayan Roy