পোল্লাদ হালদার 

East Bardhaman News: জলে নেমে প্রাণ বাঁচানোই তাঁর নেশা! এক টাকাও নেন না বিনিময়ে, তবে আজও মেলেনি যোগ্য সম্মান

পূর্ব বর্ধমান: কেউ জলে ডুবে গেলে তাকে উদ্ধার করাই কাজ পূর্ব বর্ধমানের প্রল্লাদ হালদারের। তবে এই কাজ করে তিনি কোনও অর্থ উপার্জন করেন না। স্বেচ্ছায় বহু বছর ধরে এই কাজ করে চলেছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী থেকে উদ্ধার করেছেন বহু মৃতদেহ। বেশ কিছু জনকে নদীতে ডুবে যাওয়া থেকে উদ্ধার করে তাদের প্রাণও বাঁচিয়েছেন তিনি। তবে স্বেচ্ছায় এই কাজ করলেও তিনি আজও পাননি তাঁর যোগ্য সম্মান।

এই প্রসঙ্গে প্রল্লাদ হালদার বলেন,”মাছ ধরা আমার পেশা। তবে কেউ যদি বলে কোনও খানে কেউ ডুবে গিয়েছে প্রল্লাদ যেতে হবে , তখন আমি সেখানে ছুটে যাই। রাত , দিন , শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা আমাকে যেতে হয়। মরা ছেলে নিয়েও যাতে মায়ের কোল শান্তি পায় সেকারণে আমি যায়। আজ অবধি প্রচুর জনকে উদ্ধার করেছি,১২ বছর বয়স থেকে এই কাজ করছি।”

পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর পাটুলির বাসিন্দা প্রল্লাদ হালদার। প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ডুবুরি না হলেও , স্থানীয় এলাকায় তিনি ডুবুরি হিসেবেই পরিচিত। তার বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী এবং এক ছেলে। আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে দুই মেয়ের। বর্তমানে স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে অভাবেই দিন অতিবাহিত করতে হয় প্রল্লাদকে। ভাগীরথী নদীতে মাছ ধরাই তার পেশা। এখান থেকে দৈনিক যা উপার্জন হয় তা দিয়েই চলে সংসার।

আর্থিক ভাবে গরীব হলেও মনের দিক থেকে অনেকটা বড়লোক। আর হয়ত সেই কারণেই আজও তিনি নিঃস্বার্থ ভাবে ডুবুরির কাজ করে থাকেন। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন,”আমার অনেক অভিজ্ঞতা রয়েছে। সরকারের ডুবুরিরা এসে আমাকে প্রণাম করে। পুলিশ , প্রশাসন আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। কিছু হলেই আমি ছুটে যায়। আমার নদীকে ভয় লাগেনা। তবে কেউ বলতে পারবে না , এই কাজের জন্য কেউ আমাকে পাঁচটা টাকা দিয়েছে।”

পাটুলির হালদার পাড়ার বাসিন্দা প্রল্লাদ বাবুর বয়স বর্তমানে ৬০ পেরিয়েছে। তবে এই বয়সেও তিনি জলের ওস্তাদ। জলের নীচে থেকে মৃতদেহ উদ্ধার করা তার কাছে যেন কোনও ব্যাপারই নয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডুবুরিরা অনেক সময় যে কাজ করতে পারেনি সেই কাজ করে দেখিয়েছেন তিনি। আজও নদীতে কোনও রকম দূর্ঘটনা ঘটলে ডাক পড়ে তার। স্থানীয় মানুষজন থেকে শুরু করে প্রশাসনের তরফেও কিছু ঘটলেই ডাক আসে প্রল্লাদ বাবুর। কিইবা দিন আর কিইবা রাত ! ডাক এলেই জরুরীকালীন পরিস্থিতিতে ছুটে যান তিনি। তবে আজ অবধি একাধিক মানুষের উপকার করলেও তিনি তার যোগ্য সম্মান টুকুও পাননি।

আরও পড়ুনঃ T20 World Cup 2024: সুপার এইটে টিম ইন্ডিয়ায় বড় বদল! জায়গা হারাচ্ছেন বিরাট কোহলি? জেনে নিন বিস্তারিত

প্রশাসনের কাছে তার আর্জি ছিল মাথা উপর একটা ছাদের, ছোট্ট একটা বাড়ির। তবে তার কথায় , তাকে বাড়ি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রশাসনের তরফে অনেক কাজ করানো হয়েছে। কিন্তু আশ্বাস মিললেও মেলেনি বাড়ি। তাই অবশেষে ঋণ নিয়ে তাকে বাড়ি করতে হয়েছে। আর্থিক অবস্থা এতটায় খারাপ , যে এখনও বাড়ি প্লাস্টার করারও সামর্থ্য হয়নি তার। স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে এখনও অভাবেই দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে প্রল্লাদ বাবুকে। নিঃস্বার্থ ভাবে আজও ডুবুরির কাজ করে চলেছেন পাটুলির প্রল্লাদ।

বনোয়ারীলাল চৌধুরী