রাহুলের নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়াল কংগ্রেস৷

Rahul Gandhi: প্রচার পর্বে অন্তরালে, ভোট শেষে তিনিই নায়ক! শুধু কংগ্রেস নয়, পুনরুত্থান হল রাহুলেরও

নয়াদিল্লি: গোটা নির্বাচনের প্রচার পর্বে যখন টেলিভিশনের পর্দা, সমাজমাধ্যম জুড়ে ঝড় তুলেছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা, তখন তিনি ছিলেন প্রচারের আড়ালে৷ কেন রাহুল গান্ধিকে প্রচারে সেভাবে দেখা যাচ্ছে না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে৷ এমন কি, ইন্ডিয়া জোট গঠনের সময়ও বিরোধী জোটের মুখ হিসেবে সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল মল্লিকার্জুন খাড়গেকে৷

ভোট পর্ব জুড়ে প্রায় অন্তরালে থাকা রাহুল গান্ধি আসলে নিঃশব্দে নিজের কাজ করে গিয়েছেন৷ মঙ্গলবার লোকসভা নির্বাচনের ফল সামনে আসার পর আবারও কংগ্রেসের পুনরুত্থানের কান্ডারি বলা হচ্ছে রাহুলকে৷
ভোটের প্রচার পর্ব রাহুলকে অন্তরালে রাখার কৌশল কংগ্রেস সচেতন ভাবেই নিয়েছিল বলে দাবি করা হচ্ছে কংগ্রেস সূত্রে৷ কারণ কোনওভাবে ভোটের ফলে যদি ২০১৯ সালের মতোই বিপর্যয়ের মুখেই পড়ত কংগ্রেস, তাহলে ফের একবার তুমুল সমালোচনার মুখে পড়তে হত তাঁকে৷ হয়তো বা রাহুলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎই তখন প্রশ্নের মুখে পড়ে যেত৷

কিন্তু কোন ম্যাজিকে কার্যত ছাইয়ের নীচ থেকে কংগ্রেসকে টেনে তুললেন রাহুল? কীভাবে ৫২ থেকে বেড়ে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ১০০-র কাছাকাছি পৌঁছল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সবই রাহুলের নিখুঁত অঙ্কের সুফল৷

আরও পড়ুন: ‘কাঠিবাজি’ থাকবেই! বাংলায় থমকে গিয়েছে দল, হারের পরই বিস্ফোরক দিলীপ

ভোটের প্রচার পর্বে রাহুল গান্ধির মুখে বার বার ক্ষমতায় এলে জাতি গণনার কথা শোনা গিয়েছিল৷ এ ছাড়াও, সম্পদের সম বণ্টনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন রাহুল৷ কংগ্রেসের মধ্যেই অনেক নেতা এই ভাবনার সঙ্গে সহমত ছিলেন না৷ কিন্তু ভোটের ফলে স্পষ্ট, প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের সমর্থন পেয়েছে কংগ্রেসের এই প্রতিশ্রুতি৷ এমন কি, গতকাল ভোটের ফল প্রকাশের পর রাহুল নিজেও দাবি করেছেন, দেশের দরিদ্র মানুষ নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন৷

আরও স্পষ্ট ভাবে বললে, শুধু কংগ্রেস নয়, ইন্ডিয়া জোটকে দেশের দলিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তুলে ধরতে সফল হয়েছেন রাহুল৷ পাশাপাশি, রাহুলের মুখে শোনা গিয়েছে মহালক্ষ্মী প্রকল্পের কথা৷ সবথেকে বড় কথা, যে উত্তর প্রদেশ থেকে কার্যত মুছে গিয়েছিল কংগ্রেস, সেখানেই এবার অপ্রত্যাশিত ভাল ফল করেছে কংগ্রেস-সমাজবাদী পার্টির জোট৷

সব রাজ্যে মসৃণ ভাবে না হলেও উত্তর প্রদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে সমাজবাদী পার্টির মতো শরিক দলগুলির সঙ্গে সমঝোতায় সফল হয়েছে কংগ্রেস৷ এর জন্য কংগ্রেসকেও বহু আসন ছাড়তে হয়েছে৷ ভোটের অঙ্কের কথা ভেবে সেই ক্ষতিও স্বীকার করেছেন রাহুল৷ অনেকেই বলছেন, রাহুল না থাকলে শরিকদের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা এত মসৃণ হত না৷ এর সবথেকে বড় উদাহরণ পশ্চিমবঙ্গ৷ সেখানে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের জোট না হওয়া সত্ত্বেও রাজ্যের শাসক দলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীর হয়েই ভোট প্রচারে আসেননি রাহুল৷

এমন কি, বার বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেও কংগ্রেস হাইকম্যান্ড পাল্টা কোনও বিবৃতি দেয়নি৷ বরং বার বারই কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সমঝোতার বার্তা দেওয়া হয়েছে তৃণমূলকে৷ রাহুলের সম্মতি না থাকলে যে কংগ্রেস নেতারা মুখ বুজে থাকতেন না, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এক কথায় বললে, বাস্তব পরিস্থিতি এবং দলের শক্তি বুঝে মেপে পা ফেলেছেন রাহুল৷ অতীত তিক্ততা এবং পঞ্জাবে সংঘাত থাকলেও দিল্লির মতো রাজ্যে আম আদমি পার্টির সঙ্গেও জোট বেঁধেছে কংগ্রেস৷

আবার রাহুলই দলের প্রবীণ এবং সিনিয়র নেতাদের ভোটে দাঁড়াতে রাজি করিয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রে খবর৷ অনেক দিন ধরে বিভ্রান্তি থাকলেও শেষ মুহূর্তে রায়বরেলি এবং ওয়ানাড থেকে ভোটে লড়েছেন রাহুল৷ দুই কেন্দ্র থেকেই জয়ী হয়েছেন তিনি৷ ফলে রাহুল পালিয়ে গেলেন, সেই অভিযোগ তুলতে পারেনি বিজেপিও৷

আর এই সমস্ত কৌশলই এবার রাহুলের পক্ষে গিয়েছে৷ ফলে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটি থেকে ইস্তফা দেওয়া রাহুলের চেহারায় মঙ্গলবার বিকেলে আত্মবিশ্বাস চুইয়ে পড়ছিল৷

ভোটের সময় নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের পাশাপাশি রাহুলের ভাবমূর্তির উন্নতিতে নিঃসন্দেহে বড় ভূমিকা নিয়েছে দুই দফার ভারত জোড়ো যাত্রা৷ মঙ্গলবার সেকথা স্বীকার করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে৷ এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল কংগ্রেসকেই শুধু অক্সিজেন দিল না, রাহুলের রাজনৈতিক কেরিয়ারকেও এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে এনে দাঁড় করাল৷ বিজেপি নেতারা নানাবিধ বিশেষণে সবসময় তাঁকে নিয়ে যে কটাক্ষ করতেন, তাতে ইতি পড়ল৷ আবার নিজের দলের ভিতরেও তাঁর সমালোচকদের মুখে কুলুপ পরিয়ে দিলেন রাহুল৷ বার বার তাঁর বিদেশ যাত্রা, মাঝে মধ্যেই রাজনীতি থেকে বিরতি নেওয়ায় তাঁর গা ছাড়া মনোভাব নিয়েও যে সমালোচনা হত, সেসবও সম্ভবত বেশ কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দিলেন রাহুল৷

বিরোধী শিবিরের মুখ হিসেবেও সম্ভবত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেন তিনি৷ কারণ, এতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শরদ পাওয়ারের মতো অনেক নেতার কাছেই রাহুল গান্ধির থেকে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য ছিলেন রাহুল গান্ধি৷ মঙ্গলবারের পর নিঃসন্দেহে রাহুলের কদর বিরোধী শিবিরে একলাফে অনেকটাই বাড়ল৷