১৯৩৭ সালে জন্ম, কালক্রমে টাটা গ্রুপের বিস্তার- এ তো স্বতসিদ্ধ! কিন্তু এক শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানবিকতার সঞ্চারও যে করা যায়, তার একমাত্র দৃষ্টান্ত বোধহয় তিনিই। ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে বর্ণময় কর্মজীবনে সারা বিশ্বের কাছে প্রচেষ্টা, সাফল্য এবং সহানুভূতির নাম হয়ে থাকবেন রতন টাটা। তাঁর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা দেশ৷
শুধুমাত্র দাপুটে শিল্পপতী হিসেবে নন, রতন টাটা এমন এক কর্মযোগী যিনি তাঁর সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনায় বহু মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলেছিলেন৷ তাঁর অবদানই টাটা গ্রুপকে এক আলাদাই উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের শিল্পের পটভূমিকেও একটা আকার দিয়েছে রতন টাটার অবদান। এমন এক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু নিঃসন্দেহেই কোটি কোটি ভারতীয়ের মনে এক শূন্যস্থান তৈরি করেছে।
রতন টাটাকে ভারতীয় শিল্পের জনকও বলা যেতে পারে। তাঁর ব্যক্তিত্ব মানুষকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর অবদান আজ ভারত সহ সমগ্র বিশ্বের জন্য একটি উদাহরণ। প্রকৃতপক্ষে, রতন টাটার দেশ গঠনে অগণিত অবদান রয়েছে। তবে এর মধ্যে ৫ টি এমন যুগান্তকারী পদক্ষেপ কালের দিগন্তে অমলিন চিহ্ন রেখে যাবে।
১. মুম্বইতে সারমেয়দের জন্য হাসপাতাল তৈরি তিনি শিল্পপতি, তাঁর সুক্ষ চিনাভাবনার জন্য বরাবরই তিনি এগিয়ে ছিলেন৷ তিনি কুকুর খুব পছন্দ করতেন। নিজের পোষ্যও ছিল৷ মাত্র কয়েকদিন আগে তিনি কুকুরদের জন্য একটি হাসপাতাল খুলেছেন। হাসপাতাল খোলার সময় তিনি বলেছিলেন যে তিনি কুকুরদের নিজের পরিবারের অংশ মনে করেন। রতন টাটা আরও বলেছিলেন যে তিনি তাঁর জীবনে অনেক পোষ্য রেখেছিলেন। এ কারণে হাসপাতালের গুরুত্ব তিনি জানেন। নাভি মুম্বইতে তাঁর তৈরি করা হাসপাতালটি ৫ তলা বিশিষ্ট, যেখানে একসঙ্গে ২০০টি পোষা প্রাণীর চিকিৎসা করা যায়। এটি ১৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে। কুকুরের প্রতি রতন টাটার ভালবাসার বিষয়টি থেকেও বোঝা যায় যে তিনি একবার একটি কুকুরকে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। যেখানে কুকুরের জয়েন্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।
২. যখন গোটা বিশ্ব করোনার মহামারীর সঙ্গে লড়াই করছিল, তখন সংকটের সময়ে, রতন টাটা এগিয়ে এসে দেশকে ৫০০ কোটি টাকা সহায়তা করেন। তিনি লিখেছেন, কোভিড-১৯ আমাদের সামনে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর একটি। টাটা ট্রাস্ট এবং টাটা গ্রুপ কোম্পানিগুলি অতীতেও দেশের প্রয়োজনে সেবা করতে এগিয়ে এসেছে। অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এ সময়ে চাহিদা বেশি।
৩. টাটা ইন্ডিকা এতটাই ভেঙে পড়েছিল যে ১৯৯৯ সালে টাটা এটি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়। আবেগপ্রবণ রতন টাটার জন্য এটি ছিল একটি বড় ধাক্কা। একই সময়ে তিনি বিল ফোর্ডের কাছে তাঁর গাড়ি কোম্পানি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিল ফোর্ড ব্যঙ্গাত্মকভাবে বলেছিলেন যে তাঁর যখন যাত্রীবাহী গাড়ি তৈরির অভিজ্ঞতা ছিল না,তবে কেন তিনি এই শিশুসুলভ কাজটি করলেন? এটি তাঁকে আঘাত করে এবং তিনি কোম্পানিটি বিক্রি করতে অস্বীকার করেন। এক দশক পরে, সময় পরিবর্তিত হয় এবং ফোর্ড মোটরসের অবস্থার অবনতি হয়। যার কারণে রতন টাটা ফোর্ড কিনে নেন।
৪. যখন লোকেরা ভারতে সফ্টওয়্যার সংস্থাগুলির কথা উল্লেখ করে, তাদের মনে প্রথম নামটি আসে TCS। TCS বিশ্বের বৃহত্তম তথ্য প্রযুক্তি এবং ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া আউটসোর্সিং পরিষেবা সংস্থাগুলির মধ্যে একটি। যা প্রযুক্তি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের পাশাপাশি ব্যাপক কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করেছে।
৫. টাটা গ্রুপ আগে শুধুমাত্র বড় গাড়ি তৈরির জন্য পরিচিত ছিল। কিন্তু ১৯৯৮ সালে, রতন টাটা ছোট যানবাহনের জগতে প্রবেশ করার সিদ্ধান্ত নেন এবং তিনি বাজারে টাটা ইন্ডিকা চালু করেন। টাটা ইন্ডিকা ছিল সম্পূর্ণ দেশীয় গাড়ি। এটি বিক্রির সব রেকর্ড ভেঙ্গে বাজারে নতুন রেকর্ড গড়েছে। প্রায় এক দশক পরে, টাটা আরেকটি পরীক্ষা করে এবং ২০০৮ সালে, তারা বাজারে ন্যানো গাড়ি নিয়ে আসে, যার দাম ছিল ১ লাখ টাকার কম। তিনি চেয়েছিলেন দেশের সব মানুষের, বিশেষ করে সাধারণ মধ্যবিত্তের কাছেও যাতে থাকে গাড়ির সুবিধা৷ মানুষের জন্য তিনি কাজ করতেন, মানুষই ছিল তাঁর কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ৷
Post navigation
Just another WordPress site