মুম্বই: ১৯৯১ সাল। গুরুতর অসুস্থ জেআরডি টাটা। সদ্য হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন। একদিন রতন টাটাকে ডাকলেন অফিসে। সরাসরি বললেন, এটাই সময়, এবার টাটা গ্রুপের দায়িত্ব নিতে হবে। সিমি গরেওয়ালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন শিল্পপতি রতন টাটা।
বুধ-সন্ধ্যায় পরলোকে গমন করেছেন রতন টাটা। তাঁর নেতৃত্বে উচ্চতার নয়া শিখর ছোঁয় টাটা গ্রুপ। তবে জেআরডি টাটার হাত থেকে কীভাবে দায়িত্ব রতন টাটার হাতে গেল তা জানেন না অনেকেই। ‘রঁদেভু উইথ সিমি গরেওয়াল’ অনুষ্ঠানে এই প্রসঙ্গে বিস্তারে বলেছিলেন শিল্পপতি নিজেই।
রতন টাটার কথায়, “জামশেদপুরের একটি অনুষ্ঠানে আমরা একসঙ্গে ছিলাম। সেখান থেকে আমি স্টুর্টগার্টে যাই। ফিরে শুনি, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এক সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন। প্রতিদিন দেখতে যেতাম। শুক্রবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পান। আর সোমবার আমাকে অফিসে ডাকেন।”
আরও পড়ুন: অমূল্য ‘রতন’ হারাল ভারত, রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য, শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন সাধারণ মানুষও
সেই দিনের কথা স্পষ্ট মনে আছে রতন টাটার। তিনি বলে চলেন, “আচ্ছা, নতুন কী খবর আছে?’ সবসময় এই প্রশ্ন দিয়েই মিটিং শুরু করতেন জেআরডি। আর আমি বলতাম, ‘জে, আমি তো আপনার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা করি। শেষবার আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর থেকে আর নতুন কিছু হয়নি।’ তখন তিনি বললেন, ‘আচ্ছা, আমার কাছে একটা নতুন খবর আছে। সেটাই বলব, বসো। জামশেদপুরের ঘটনার পর মনে হচ্ছে, এবার আমার সরে দাঁড়ানো উচিত। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমার জায়গায় তুমি বসবে। কয়েকদিন পর এটা নিয়ে বোর্ড মিটিং ডাকলেন তিনি।’
আরও পড়ুন: ভারতের শিল্পজগতে নক্ষত্র পতন, ‘অসাধারণ মানুষ ছিলেন…’ বললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি
বোর্ড মিটিংয়েই রতন টাটাকে টাটা গ্রুপের নতুন চেয়ারম্যান হিসাবে ঘোষণা করেন জেআরডি। তাঁর সময়ে কীভাবে ব্যবসা এগিয়েছে সেই নিয়েও আলোচনা করেছিলেন তিনি। রতন টাটা বলেন, “আমার অনেক সহকর্মীই বলেন, সেদিন ইতিহাস তৈরি হয়েছিল। কারণ তিনি প্রায় ৪০-৫০ বছর ওই পদে ছিলেন। তাই ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু ঐতিহাসিক নয়, বরং এর সঙ্গে আবেগও জড়িয়ে ছিল। কিন্তু যে ইতিহাস আর আবেগের কথা লোকে বলেন, সেটা এই পদত্যাগের কারণে নয়। বোর্ড মিটিংয়ে তিনি তাঁর সময়ের স্মৃতিচারণা করেছিলেন। নিজের প্রশংসা নয়, অভিজ্ঞতাগুলো সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন। আমরা সবাই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম।”